বিবাহ-শাদী করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৫)
, ১৮ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
পূর্ব প্রকাশিতের পর
বিবাহের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলে ছেলে-মেয়ে পরস্পরকে সম্মানিত শরীয়ত উনার নির্ধারিত তারতীবে দেখতে পারবে। তবে পরস্পর নির্জনে দেখা করতে পারবে না।
বিবাহের প্রস্তাবকারী ছেলের পক্ষে মেয়েকে দেখা সম্ভব না হলে, ছেলে একজন বিশ্বস্ত মহিলাকে পাঠাবে, তিনি ভালোভাবে দেখে তাকে মেয়ের গুণাবলীগুলো বর্ণনা করবেন।
উল্লেখ্য, সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফে (ইয়াওমুল ইছনাইনিল আ’যীম শরীফে) বিবাহ পড়ানো মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক এবং সম্ভব হলে পবিত্র মসজিদে বিবাহ পড়ানো মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক।
ওয়ালিমা এক গুরুত্বপূর্ণ মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক।
ওয়ালিমায় নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করাই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন ‘আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনাকে মহাসম্মানিত নিসবাতুল আযীম শরীফ মুবারক করলেন। আমি উনার মহাসম্মানিত ওলীমা মুবারক উনার জন্য মুসলমানদের দাওয়াত করলাম। উনার মহাসম্মানিত নির্দেশ মুবারকে দস্তরখানা বিছানো হলো। তারপর তার উপর খেজুর, পনির ও ঘি ঢালা হলো। হযরত আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন ‘আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে মহাসম্মানিত বিশেষ নিসবত মুবারক স্থাপন করলেন এবং চামড়ার দস্তরখানায় ‘হায়েস’ (ঘি, খেজুর ইত্যাদি মিশিয়ে বানানো খাবার) তৈরী করলেন। সুবহানাল্লাহ!
বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলেদের জন্য ওয়ালিমা করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। বিয়েতে কনেপক্ষ কোনোরূপ খরচ করতে বাধ্য নয়। কনে পক্ষকে মেহমানদারি করানোর জন্য চাপের মুখে বাধ্যকরা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। এতে অংশ নেওয়াও হারাম। কারও উপর জোর প্রয়োগ করে কোনো খাবার গ্রহণ করা জুলুমের শামিল। যৌতুক নেয়া সম্পূর্ণ হারাম। (কিতাবুন নিকাহ; দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার)।
বিবাহের মহাসম্মানিত সুন্নতী মোহর; মোহরে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম:
মোহরে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম খাছ সুন্নত মুবারক। হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত মোহর মুবারক ছিল ৫০০ দিরহাম। এই মোহর ধার্য করা বরকতময় ও উত্তম।
মোহর পরিশোধ করার হুকুম:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘যে পুরুষ বিবাহের মধ্যে মোহর আদায়ের নিয়তবিহীন মোহর ধার্য করল, চাই তা বেশি হোক বা কম, সে হাশরের দিন মহান আল্লাহ পাক উনার সামনে ব্যভিচারী হিসেবে উপস্থিত হবে। ’ (আল মু’জামুল আওসাত, পবিত্র হাদীছ শরীফ: ১৮৫১)
বর্তমান সমাজে সাধ্যের বাইরে অনেক বড় অংকের মোহর ধার্য এবং তা আদায়ে অনীহার মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। মেয়ে পক্ষ বিবাহের সম্পর্ক রক্ষার জন্য মোহরের অঙ্ক বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং ছেলে পক্ষ চিন্তা করে এটি আদায় করতে হবে না। এমন কাজ সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সঠিক নয়।
অতএব সামর্থ্য অনুযায়ী মোহর ধার্য করা আবশ্যক এবং ধার্য করা মোহর পরিশোধ করতেই হবে।
বিবাহের খুতবা পাঠ ও বিবাহের মজলিসে খেজুর বিতরণ:
বিবাহের খুতবা পাঠ করা মুস্তাহাব। বিবাহ পড়ানোর পর খেজুর বিতরণ/ ছিটানো খাছ সুন্নত মুবারক। (মুস্তাদরাকে হাকিম : ৪/২২)
বিবাহের গুরুত্ব ও উপকারিতা সমূহ:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘ওই পুরুষ মিসকিন! মিসকিন!! মিসকিন!!! যার কোনো আহলিয়া নেই, যদিও সে ধনবান হয়। আর ওই মহিলা মিসকিন! মিসকিন!! মিসকিন!!! যার কোনো আহাল নেই, যদিও সে সম্পদের মালিক হয়। ’ (আল মুজামুল আওসাত, পবিত্র হাদীছ শরীফ: ৬৫৮৯)
বিবাহের বহুমুখী উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
১. গুনাহ ও পাপাচার থেকে নিজেকে সংবরণ করার মাধ্যমে পুরুষ-মহিলা উভয়ের ঈমান, আমল, ব্যক্তিত্ব, ও সতীত্ব রক্ষা করতে পারে।
২. নারী জাতির তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণ হয়।
৩. নারীর সম্মানজনক জীবন-জীবিকা সহজ হয়।
৪. পুরুষ একজন আমানতদার নির্ভরযোগ্য সঙ্গিনী লাভ করে।
৫. হালাল পন্থায় বংশের বিস্তার হয়।
৬. সৃষ্টিগত ও স্বভাবজাত চাহিদা পূরণের হালাল ও নিরাপদ ব্যবস্থা বিবাহ।
৭. পুরুষ-মহিলা উভয়ের মানসিক স্বস্তি, তৃপ্তি ও প্রফুল¬ অর্জন হয়, যা বিবাহ ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে সম্ভব নয়।
৮. বিবাহের মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাহসম্মানিত সুন্নত মুবারক বাস্তবায়ন হয়।
৯. মানবশিশু তাদের প্রকৃত পরিচয় লাভ করতঃ সঠিক লালন-পালন ও পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে।
১০. বিবাহের দ্বারা রিযিকে বরকত ও জীবনে প্রাচুর্য আসে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা বিবাহ করো, আহলিয়ারা স্বীয় ভাগ্যে তোমাদের কাছে সম্পদ টেনে আনবে। ’ (মুসনাদে বাজ্জার, পবিত্র হাদীছ শরীফ : ১৪০২)
১১. অবিবাহিত থাকলে মানসিক বা শারীরিক রোগ ও জটিলতা তৈরির আশঙ্কা থাকে।
১২. বিবাহ মানুষকে সংসারী করে। ফলে পুরুষরা দায়িত্বসচেতন ও কর্মমুখী হয়। কোন কিছু অপচয়ের মানসিকতা দূর হয়। তদ্রƒপ নারীরাও দায়িত্বসচেতন হয়।
বিবাহ-শাদীতে কোনো গান বাজনা বাজানো যাবেনা, অনৈসলামিক কোনো কাজ করা যাবেনা
বিবাহের অনুষ্ঠানে পুরুষ-মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে। সকলেই যেনো পর্দার হুকুম মেনেই বিবাহের অনুষ্ঠানে আসতে পারে, সেই জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিবাহ-শাদীতে কিছু কুপ্রথা ও কতিপয় কুসংস্কার রয়েছে, যেগুলো অবশ্যই বর্জনীয়:
★ মেয়ের ইযিন (অনুমতি) আনার জন্য ছেলেপক্ষ বেগানা পুরুষ সাক্ষী পাঠিয়ে থাকে, সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এর কোন প্রয়োজন নেই। এতে পর্দার বিধানের খিলাফ হওয়ায় তা হারামের অন্তর্ভুক্ত।
★ বরের নিকট কনে পক্ষের লোকেরা হাত ধোয়ানোর টাকা, পান পাত্রের পানের সাথে টাকা দিয়ে তার থেকে কয়েকগুণ বেশী টাকা জোর যবরদস্তি করে আদায় করে থাকে। এটা সম্পূর্ণ নাজায়িয।
★ অনেক জায়গায় গেইট সাজিয়ে সেখানে বরকে আটকে দেয়া হয় এবং টাকা না দেয়া পর্যন্ত ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এটাও একটা সম্মানিত শরীয়ত গর্হিত কাজ।
★ খাওয়া দাওয়া শেষে কনে পক্ষের লোকেরা বরের হাত ধোয়ায়। পরে হাত ধোয়ানো বাবদ টাকা দাবী করে। অনেক জায়গায় এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। এটা একেবারেই অনুচিত। মূলতঃ এসব হিন্দুয়ানী প্রথা।
★ বিবাহ পড়ানোর আগে বা পরে যৌতুকের বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রকাশ্য মজলিসে সকলের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, এটাও হারাম। যৌতুক দেয়া, নেয়া উভয়টাই হারাম।
★ বিবাহ করে আনার পর শ্বশুর বাড়ীতে নববধূকে বিভিন্ন কায়দায় বরণ করা হয়। কোথাও ধান, দুবলা ঘাস, দুধের স্বর ইত্যাদি দিয়ে বরণ করা হয় এবং নববধূর চেহারা সকলকে দেখানো হয়; এসবই হিন্দুয়ানী প্রথা। কোন মুসলমানের জন্য এসব করা জায়িয নেই, সম্পূর্ণ হারাম।
★ ঈদের সময় বা অন্য কোন মৌসুমে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে চাল, আটা, ময়দা, পিঠা ইত্যাদি পাঠানো এবং এ প্রচলনকে জরুরী মনে করার নিয়ম অনেক জায়গায় চালু আছে। আবার অনেক জায়গায় আনুষ্ঠানিকভাবে জামাইকে এবং তার ভাই-বোনদেরকে কাপড়-চোপড় দেয়ার নিয়ম আছে। এমনকি এটাকে এতটাই জরুরী মনে করা হয় যে, ঋণ করে হলেও তা দিতে হয়। নতুবা মেয়ের প্রতি আহালের পরিবার থেকে জুলুম করা হয়। এটা সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে অবশ্যই হারাম, তাই এসব বর্জনীয়। (তবে, সন্তুষ্টিচিত্তে হাদিয়া হিসেবে যদি দেয়, তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই)।
★ বিবাহ উপলক্ষে গান-বাজনা, ভিডিও, ভিসিআর ইত্যাদি মহামারী আকার ধারণ করেছে। আর কোন কোন এলাকায় তো যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী মেয়েরা একত্রিত হয়ে নাচ গানও করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এসব হারাম ও নাজায়িয।
★ আজকাল বিবাহ অনুষ্ঠান মানেই গুনাহের ছড়াছড়ি। এমন এমন গুনাহ্ সেখানে সংঘটিত হয় যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ছবি তোলা ও ভিডিও করা। সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে কোন প্রাণীর ছবি তোলা চাই ক্যামেরার মাধ্যমে হোক কিংবা ভিডিও এর মাধ্যমে হোক বা অংকন করা হোক সবই হারাম। (সমাপ্ত)
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (১)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘তালবীনা’
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নতী খাবার পরিচিতি ও উপকারিতা : দুধ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খেজুরের রস খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)