বিবাহের ক্ষেত্রেও মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারককে প্রাধান্য দেয়া আবশ্যক (৫)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
, ১৭ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২০ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বিবাহের উদ্দেশ্যে ছেলে বা মেয়েকে দেখার সুন্নতী তারতীব
বিবাহের ক্ষেত্রে সমাজে কিছু বদ রসম ও ভুল পন্থা-পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। যা সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ। আবার অনেক ক্ষেত্রে বেপর্দা, বেহায়াপনা ও ফিৎনা-ফাসাদের সৃষ্টি হয়। মেয়ে দেখতে যায় ছেলের বাবা, ছেলের ভাই, ছেলের নানা-দাদা, চাচা ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ। নাউযুবিল্লাহ! যা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম।
প্রকৃতপক্ষে সম্মানিত সুন্নত মুবারক এবং শরঈ বিধান হচ্ছে, বিবাহের পূর্বে শুধূমাত্র ছেলেই দেখবে। আর মেয়ে দেখবে সেই ছেলেকে। তবে অন্য কোন মেয়ে কিংবা মহিলা প্রস্তাবিত মেয়েকে দেখতে পারবে। খোঁজ-খবর নিতে পারবে। তাতে কোন অসুবিধা নেই। আবার অন্য কোন পুরুষ প্রস্তাবিত ছেলেকে দেখতে পারবে। তাতেও কোন অসুবিধা নেই। তবে দেখার বিষয়টি হবে সর্বশেষ। আগে কথা-বার্তা হবে। অন্যান্য বিষয় দেখা-শোনা, খোঁজ-খবর নেয়ার বিষয়গুলি সুস্পষ্ট হবে। সেগুলো সঠিক বা পছন্দ হলে ছেলে বা মেয়ে দেখার বিষয়টি আসবে। কারণ, পর্দানশীন কোন মেয়েকে যদি কেউ দেখে, আর পছন্দ না করে তাহলে ঐ মেয়ের জন্য তা একটি বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। কাজেই প্রথমত যে ছেলের জন্য মেয়েকে কিংবা মেয়ের জন্য ছেলেকে প্রস্তাব দেয়া হবে তার বায়োডাটা (জীবন বৃত্তান্ত) নেয়া যেতে পারে। সেখানে তার সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত বা তথ্য এবং জানা ও শুনার প্রয়োজনীয় সবটাই সেখানে উল্লেখ থাকবে। সেই সূত্র ধরে বাড়ী-ঘর দেখা, আনুষাঙ্গিক খোঁজ-খবর নেয়া উচিত। সবশেষে ছেলে কিংবা মেয়েকে দেখা। যদি বায়োডাটার দেয়া তথ্য পুরোপরি মিলে যায় তাহলে বিবাহের জন্য দিন তারিখ ধার্য্য করা যেতে পারে।
যদি ছেলে মেয়েকে দেখতে যায়। তাহলে ছেলের সাথে তার মাহরাম কোন মেয়ে কিংবা মহিলা আছে কিনা সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি না থাকে তাহলে প্রস্তাবিত মেয়ের সাথে মেয়ের মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে। প্রস্তাবিত মেয়ে প্রস্তাবিত ছেলের সাথে সাক্ষাত করার সময় হালকা সাজ-গোছ করতে পারে। কিন্তু নিজের চেহারা-ছূরত পরিবর্তন হওয়ার মত সাজ-গোছ করবে না। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোন ভনিতা বা প্রতারণারও আশ্রয় নিবেনা। কেননা, মিথ্যা, ছল-ছাতুরী ও প্রতারণার মধ্যে কোন বরকত নেই। আর বিবাহের মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বরকত শূণ্য হলে ফিতনা-ফাসাদ ও অশান্তি লেগেই থাকে। কখনো শান্তি বা ইতমিনান লাভ হয় না। পাত্র-পাত্রী দেখার মূল উদ্দেশ্যই হলো মুহব্বত পয়দা হওয়া, মুহব্বত বৃদ্ধি পাওয়া। আর সেটাই সেক্ষেত্রে ব্যহত হয়। নাউযুবিল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ خَطَبْتُ اِمْرَأَةً فَقَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ نَظَرْتَ إِلَيْهَا؟ قُلْتُ لَا قَالَ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهٗ أَحْرَى أَنْ يُّؤْدَمَ بَيْنَكُمَا
অর্থ: হযরত মুগীরা ইবনে শুবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমি একদিন একজন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব করলাম। তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে জানালাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনি কি উনাকে দেখেছেন? আমি বললাম, না। আমি এখনো উনাকে দেখিনি। তিনি আমাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন, সেই মেয়েকে দেখে নিন। উনাকে দেখার কারণে আপনাদের উভয়ের মধ্যে মুহব্বত পয়দা হবে, মুহব্বত বৃদ্ধি পাবে। সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ)
বিবাহের পূর্বে ইস্তিখারাহ করা
মুরীদ তার সকল কাজই নিজের শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশ মুবারক কিংবা পরামর্শ মুবারকে সুসম্পন্ন করবে। এটা খাছ সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এরূপই করতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক অনুমতি নিয়েই সুসম্পন্ন করতেন। আর যারা সম্মানিত শায়েখ আলাইহিস সালাম নিকট বাইয়াত হতে পারেনি তারা বিবাহের পূর্বে ইস্তিখারাহ করতে পারে। اِسْتِخَارَةٌ (ইস্তিখারাহ) শব্দের অর্থ: কল্যান কামনা করা। সঠিক দিক নির্দেশনা প্রার্থনা করা।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ইস্তিখারাহ করা আদম সন্তানের জন্য সৌভাগ্য। যে ইস্তিখারাহ করবে সে নিরাশ হবে না। তিনি ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে যেমন সূরা শরীফ শিক্ষা দিতেন, সেরূপই ইস্তিখারাহও শিক্ষা দিতেন। (তাবিজাত ৫ম/২১৮)
ইমামুল আউওয়াল হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন। যে ব্যক্তি চায় যে, মহান আল্লাহ পাক তাকে স্বপ্নযোগে কোন ভালো-মন্দ অবগত করিয়ে দেন, তাহলে সে যেন ইস্তিখারাহ করে।
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি চারটি বিষয়ের তাওফীক্ব পেয়েছে, সে ব্যক্তি চারটি নিয়ামত হতে বঞ্চিত হবে না।
১। যেব্যক্তি তাওবা করার তাওফীক্ব পেয়েছে সে ব্যক্তি কবুল হওয়া থেকে বঞ্চিত হবেনা।
২। যে ব্যক্তি ইস্তিখারাহ করার তাওফীক্ব পেয়েছে, সে ব্যক্তি কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে না।
৩। যে ব্যক্তি পরামর্শ গ্রহণ করার তাওফীক্ব পেয়েছে, সে ব্যক্তি ন্যায় কার্য হতে বঞ্চিত হবে না।
৪। যে ব্যক্তি দোয়া-মুনাজাত করার তাওফীক্ব পেয়েছে, সে মনোবাঞ্চা পূর্ণ হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।
ইস্তিখারাহ করার নিয়ম
ওযু করে পাক কাপড় পরিধান করত দুই রাকয়াত নামায পড়িবে। প্রথম রাকায়াতে সূরা ফাতিহা শরীফ পড়ে পবিত্র সূরা কাফিরূন দ্বিতীয় রাকয়াতে পবিত্র সূরা ইখলাছ পড়বে। তারপরে পাক বিছানায় পশ্চিম দিকে মুখ ফিরে ডান দিকে কাৎ হয়ে শুয়ে পবিত্র সূরা আশ শামস ৭ বার, পবিত্র সূরা আল লাইল ৭ বার, পবিত্র সূরা আত্ব ত্বীন ৭ বার ও পবিত্র সূরা ইখলাছ ৭ বার পড়ে নিম্নোক্ত প্রকার দোয়া পড়িবে।
اَللّٰهُمَّ إِنِيْ أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ وَاَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ وَتَعْلَمْ وَلَا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ اَللّٰهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هٰذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ فَاَقْدِرْهُ لِيْ ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هٰذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِّيْ فِيْ دِيْنِىْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ فَاَصْرِفْهُ عَنِّيْ وَاَصْرِفْنِيْ عَنْهُ وَأَقْدِرْ لِىَ الْخَيْرِ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ اَرْضِنِيْ بِهٖ.
(তাবিজাত-২/২৯৪, ৫/২১৮)
-আল্লামা কাওছার আহমদ
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)