বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নের কথা বলে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্লান করা হলেও আসলে তা পুরোই আমদানী নির্ভর।
, ২রা শাবান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৫ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ২৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মন্তব্য কলাম
এরকম দুরাবস্থার ভার জনগণের কাছে চাপিয়ে দেয়া কঠিন জনবিরোধী ও দেশ বিরোধী কাজ।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নের কথা বলে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান (পিএসএমপি)-২০১৬ প্রকাশ করে। শতভাগ বিদেশি সংস্থা দ্বারা প্রণীত এই মহাপরিকল্পনায় ঋণনির্ভর, আমদানি নির্ভর, ঝুঁকিপূর্ণ পথ তৈরি করা হয়েছিল। নিজস্ব জ্বালানি অনুসন্ধান, উত্তোলন করে শতভাগ দেশে ব্যবহার এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির কোন উদ্যোগ ছিল না। নিজ দেশের স্থল ও পনিভাগের সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের চেষ্টা না করে আমদানি নির্ভর তরল গ্যাস এলএনজি, কয়লা ও পারমাণবিক প্রকল্পের উপর ভিত্তি করে লাখ কোটি টাকার বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। গত দুই দশকে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পক্ষে বারবার বলা সত্ত্বেও জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে আমদানি নির্ভর জ্বালানির উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যার ফলাফল এখন দৃশ্যমান। বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কথা বলে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হচ্ছে। উৎপাদন না হলেও বেসরকারী মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে গুণতে হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ।
জানা গেছে মার্চেই ভারতের ঝাড়খন্ডে স্থাপিত আলোচিত শিল্প গ্রুপ আদানির প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী, কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ টানা ২৫ বছর ধরে কেনার কথা রয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি আমদানির ঋণপত্র খোলার তথ্য জানিয়ে প্রতি টন কয়লা ৪০০ ডলার করে দাম ধরে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে আদানি গ্রুপ। আর এতেই নড়েচড়ে বসেছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তাদের বিশ্লেষণ, আন্তর্জাতিক ইনডেক্স অনুযায়ী বেশি দামি কয়লায়, বিদ্যুতের দামও পড়বে বেশি। আর বিষয়টিকে আদানির অনিয়ম হিসেবেই পর্যালোচনা করছে দেশের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনতে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি দাম দিতে হবে। আবার এই বেশি দামে আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে- এমন বাধ্যবাধকতার কথাও রয়েছে পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টে (পিপিএ)।
অভিজ্ঞমহল মনে করেন, আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সম্পাদিত পিডিবির এই চুক্তি আন্তর্জাতিকভাবে নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণে অসম ও অস্বচ্ছ এবং বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্বভাবে বৈষম্যমূলক হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চুক্তিটিতে বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে আদানি গোষ্ঠীর স্বার্থকে এমনভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত এই প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হয়ে যেতে পারে, যার বোঝা এ দেশের জনগণকে বইতে হবে।
গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে কয়লা ব্যবহৃত হবে তা আসবে আদানির মালিকানাধীন ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিতর্কিত খনি থেকে ও আদানির জাহাজে করে, যা খালাস হবে আদানির মালিকানাধীন বন্দরে এবং পরিবহণ করা হবে আদানির মালিকানাধীন রেলে। আবার উৎপাদিত বিদ্যুৎ পরিবহণ করা হবে আদানিরই নির্মিত সঞ্চালন লাইনে। আরও জানা যাচ্ছে জ্বালানি খরচসহ এই পুরো প্রক্রিয়ার ব্যয় বইতে হবে বাংলাদেশকে, যা বৈশ্বিক বিদ্যুৎ খাতের অভিজ্ঞতায় অভূতপূর্ব। ফলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের জন্য দেশের অন্য যে কোনো সরবরাহকারী থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের তুলনায় অস্বাভাবিক বেশি হারে মূল্য দিতে হবে। একইভাবে, আদানির গোড্ডা প্রকল্পের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দিতে হবে দেশি-বিদেশি উদ্যোগে পরিচালিত অন্য যেকোনো প্রকল্পের তুলনায় অগ্রহণযোগ্য বেশি হারে।
আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় গ্যাস সম্পদ থাকা সত্ত্বেও মাস্টারপ্ল্যানে নিজস্ব গ্যাসের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে এলএনজি ও কয়লা নির্ভরতা তৈরি করা হয়েছে। এলএনজি বা তেলের দাম যে অস্থিতিশীল, স্পট মার্কেট থেকে কিনলে যে দাম বেশি পড়ে এগুলো জানা থাকা সত্ত্বেও সেই পথই নেয়া হয়েছে। তার ফলে বিপূল ব্যয়ে বিদেশি মুদ্রা ভয়াবহ চাপে পড়েছে। এগুলো করার সাথে স্পষ্টতই কমিশন দুর্নীতি জড়িত। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স সুযোগ পেলে অনেক সুলভে গ্যাস যোগান দিতে পারতো, তা না করে অত্যন্ত ব্যয়বহুল ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নেয়া হয়েছে।
‘গ্যাস নেই এইকথার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং বাংলাদেশে সমুদ্রে ও স্থলভাগে প্রচুর গ্যাস আছে, ঠিকমতো অনুসন্ধান করলে এই গ্যাস উত্তোলন সম্ভব।’
সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সও উচ্চ দক্ষতা অর্জন করতে পারতো। বিদেশি কোম্পানি মুনাফার জন্য রপ্তানি করতে চাইবেই, প্রয়োজনের অতিরিক্ত তুলবে, মুনাফার জন্য ব্লাকমেইল করবে। তারাও বিভিন্ন সাবকন্ট্রাক্টরদের দিয়ে কাজ করায়, বাপেক্সও রাষ্ট্রীয় মালিকানা অক্ষুণœ রেখে স্থল এবং পানিভাগে গ্যাস উত্তোলন করতে পারে। কিন্তু বাপেক্সকে সরকার সমর্থন দেয় না, বরং বিদেশী কোম্পানিতে তাদের আগ্রহ।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন পরনির্ভরতা, ঋণনির্ভরতা, কিছু গোষ্ঠীর মুনাফাকেন্দ্রিক নীতি দেশ ও মানুষকে কীভাবে কঠিন সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সঙ্গতকারণেই আমরা আমদানিনির্ভর এলএনজি, সর্বনাশা কয়লা ও পারমাণবিক পথের বদলে নিজেদের গ্যাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির মিশ্রণে সুলভ, পরিবেশবান্ধব, টেকসই, নিরাপদ পথ গ্রহণের আহবান জানাই।
পাশাপাশি আমরা মনে করি আদানীর সঙ্গে বৈষম্যমূলক চুক্তির চূড়ান্ত বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কারোরই নেই। পিডিবি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকগণের প্রতি আমাদের আহ্বান, অনতিবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে এই চুক্তির সব শর্তাবলি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুখ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞজনকে সম্পৃক্ত করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণপূর্বক সংশোধন করা হোক। দেশের ও জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে প্রয়োজনে এই চুক্তি বাতিল করা হোক।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শহীদ করা জায়নবাদী তথা বর্বর ইহুদীরা কাপুরুষতার প্রমাণ দিয়ে অতীত ইতিহাস থেকে একের পর এক গুপ্তহত্যা করে আসছে ইহুদীদের গুপ্তহত্যার অনেক নিন্দা, ধিক্কার এবং প্রচারণা ও প্রতিহতের প্রচেষ্টা দরকার (পর্ব-১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে গেছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফও বেশি বেশি করতে হবে।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উম্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, খুন আর আত্মহত্যা মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূরিকরণ করা।
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ইনশাআল্লাহ আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রথম ধনী দেশ। এক উত্তারাঞ্চলের খনিজ উত্তোলন করলেই গোটা দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা বরদাশতযোগ্য নয়।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি?
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রতি বছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক “অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নতুন আশঙ্কা এবং বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমেছে”- এ তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নচেৎ সাধারণ অসুখেই প্রাণনাশ হতে পারে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘ইসলামভীতি মোকাবেলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস’ হলেও কার্যকরী কিছুই হচ্ছে না ইসরাইলকে সহযোগিতা করতে আমেরিকায় ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার আরো বাড়ানো হচ্ছে
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রতারণার ফাঁদে নাগরিক জীবন। সরকারের নজরদারী নেই। রকমফের প্রতারণা বন্ধে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বিস্তারের বিকল্প নেই।
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)