বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১২)
, ০৭ মে, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হযরত ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত ইবরাহীম ইবনে জা’ফর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বনী নাযীর পালিয়ে যাওয়ার পর ইহুদী আমর ইবনে সা’দ সে পবিত্র মদীনা শরীফে চলে আসে। সে ঘুরে ঘুরে দেখলো তাদের ধ্বংস প্রাপ্ত জনপদ। তারপর সে বিষন্ন বদনে উপস্থিত হলো বনী কুরাইজার জনপদে। তাদেরকে ডেকে বললো, আজ আমি উপদেশমূলক দৃশ্য দেখে এলাম। দেখলাম আমাদের ভ্রাতৃকুলের জনপদ জনশূন্য। এইতো কয়েকদিন আগেই সেখানে আমার ভ্রাতা অবস্থান করতো প্রচুর সম্মান ও বীরত্বব্যঞ্জকতা নিয়ে। বিচার মীমাংসা করতো প্রজ্ঞার সাথে। আক্ষেপ, আজ সে অপমানের সাথে বিতাড়িত, সহায়-সম্পদ চ্যুত। তাদের সম্পদ এখন অধিকার করেছে অন্যেরা (অর্থাৎ মুসলমান উনারা)। এর পূর্বে কা’ব ইবনে আশরাফের ঘটনা ঘটলো। রাতের অন্ধকারে হত্যা করা হলো তাকে। ইবনে সানিয়ার ঘটনাতো আরো আগের। সে ছিলো ইহুদীদের অধিনায়ক। এরপর দেশান্তর করা হলো, বনূ কাইনুকাকে। তারা ছিলো ইহুদীদের মধ্যে মান্য ও শক্তিমান পুরুষ। তাদেরকে ঘেরাও করা হলো। একজন লোকও বেষ্টনী থেকে মাথা বের করতে পারলো না। অবশেষে দেশান্তরিত হওয়ার শর্তে ছেড়ে দেয়া হলো তাদেরকে।
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরাতসমূহে উল্লেখ রয়েছে-
يَا قَوْمِ قَدْ رَأَيْتُمْ مَا رَأَيْتُمْ فأطيعوني وتعالوا نتبع حَضْرَتْ مُحَمَّدًا صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، وَالله إِنَّكُمْ لَتَعْلَمُونَ أَنَّهُ نَبِيٌّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَدْ بَشَّرَنَا بِهِ وَبِأَمْرِهِ ابْنُ الْهَيْبَانِ أَبُو عُمَيْرٍ وَابْنُ حِرَاشٍ، وهما أعلم به؟ دجَاءَانَا يَتَوَكَّفَانِ قُدُومَهُ وَأَمَرَانَا بِاتِّبَاعِهِ، جَاءَانَا مِنْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ وَأَمَرَانَا أَنْ نُقْرِئَهُ مِنْهُمَا السَّلَامَ، ثُمَّ مَاتَا عَلَى دِينِهِمَا وَدَفَنَّاهُمَا بِحَرَّتِنَا هَذِهِ.
অর্থ: আমর ইবনে সা’দ আরো বললো, ‘হে আমার স্বজাতি! তোমরাতো এসব কথা জানোই। এবার আমার কথা শুনো। এসো, আমরা সকলেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসারী হয়ে যাই। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তোমরাতো জানো যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমাদের মধ্যে যারা আলিম উনারা দীর্ঘদিন ধরে উনারই সুসংবাদ দিয়ে আসছেন। তোমাদের মনে কি পড়ে, একদিন আমাদের বিখ্যাত দুইজন আলিম ইবনুল হাইবান আবূ উমাইর এবং ইবনে হিরাশ পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ থেকে এসেছিলেন। উনারা দু’জনই আমাদেরকে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসারী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা বলেছিলেন, তোমরা উনার দীদার বা সাক্ষাত মুবারক পেলে উনাকে আমাদের তরফ থেকে আদবের সাথে সালাম পৌঁছিয়ে দিয়ো। উনাদের ইন্তেকালতো হক্ব বা সত্যের উপর হয়েছিল এবং উনাদের দাফন করা হয়েছিল সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী। ’ সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সীরতে হালাবিয়্যাহ, খতিমুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখুল ইসলাম)
আমর ইবনে সা’দের কথা শুনে সকলে চুপ করে রইলো। কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভাঙ্গলো কাট্টা কাফির আমরের। সে তার বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করলো। বনী কুরাইজা জনতাকে ভয় দেখালো যুদ্ধের, বন্দীত্বের ও দেশান্তরের। তার বক্তব্য শেষে মুখ খুললো যুবাইর ইবনে বাত্বা। সে বললো, তাওরাত শরীফের ক্বসম! আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিবরণ আমার তাওরাত শরীফের অনুলিপিতে পেয়েছি, যা অবতীর্ণ হয়েছিল সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপর। অন্যান্য অনুলিপিতো প্রকৃত অনুলিপি নয়। এরপর কা’ব ইবনে সা’দ বললো, হে আবূ আব্দুর রহমান! তাহলে তোমাকে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসারী হতে বাধা দিচ্ছে কে? যুবাইর বললো, তুমি। কা’ব বললো, কিভাবে? আমিতো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আর তোমার মধ্যে প্রতিবন্ধক হইনি। যুবাইর বললো, তুমিই আমাদের জাতীয় নেতা। তুমি যার অনুসরণ করবে, আমরাও তার অনুসরণ করবো। আর তুমি যাকে অস্বীকার করবে, আমরাও তাকে অস্বীকার করবো। নাউযুবিল্লাহ! আমর ইবনে সা’দ সে কা’বের দিকে লক্ষ্য করে বললো, শোন! তাওরাত শরীফের ক্বসম! যা সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপরে সিনাই পর্বতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, নিঃসন্দেহে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবে উনার মর্যাদা ও বিজয়। নিঃসন্দেহে সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি একজন রসূল ছিলেন। আগামীতে তিনি ও উনার উম্মত সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কা’ব বললো, আমরা প্রতিষ্ঠিত থাকবো আমাদের অঙ্গীকারের উপর।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওয়াদা বা অঙ্গীকার ভঙ্গ করবো না। তবে আমরা দেখতে চাই, হুয়াই কি করে। তাকে তো তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে চরম লাঞ্চনার সাথে। আমার ধারণা, সে অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যুদ্ধ করবে। নাউযুবিল্লাহ! ওই যুদ্ধে সে যদি বিজয়ী হয়, আমরা অবশ্যই তাই চাই, তবেই আমরা আমাদের ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবো। আর যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিজয়ী হন, তাহলে আমাদের জীবন হবে কল্যাণ বিবর্জিত। আমরা তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গ ছেড়ে দিবো। নাউযুবিল্লাহ! চলে যাবো অন্য কোন দেশে। আমর ইবনে সা’দ বললো, তাহলে এ ব্যাপারে আর বিলম্ব করছো কেন? দেশত্যাগ করার এটাই প্রকৃষ্ট সময়। কা’ব বললো না, এখনো সময় আছে। আমি যখনই পবিত্র মদীনা শরীফ ছেড়ে চলে যেতে চাইবো, তখনই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমোদন করবেন। আমর বললো, না, তা নয়। তখন সময় ও সুযোগ আমাদের পরিত্যাগ করবে। তাওরাত শরীফের ক্বসম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন আমাদের দিকে অগ্রসর হবেন, তখন অবশ্যই আমাদের দূর্গের মধ্যে আবদ্ধ হতে হবে। আবার এক সময় উনার নির্দেশ মুবারকে বের হয়েও আসতে হবে। তখন তিনি আমাদের ধ্বংস ও নিপাত করবেন। কা’ব বললো, আমি যা বুঝি, তাই বললাম। আমার প্রবৃত্তি উনাকে স্বীকার করতে পারছে না। তিনিতো আমাদের নবী বংশের মর্যাদা দিবেন না। নাউযুবিল্লাহ! খাতির করবেন না আমাদের কর্মকান্ডের। নাউযুবিল্লাহ! সাধারণভাবে আমাদেরকে অভিহিত করবেন কেবল ইসরায়েলি বলে। নাউযুবিল্লাহ! আমর বললো, তা বলবেন না। আমার জীবনের ক্বসম করে বলছি, তিনিতো আমাদের মর্যাদা সম্পর্কে সম্যক অবগত। (তাফসীরে মাযহারী) (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)