বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৯)
, ০৬ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ০৩ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এমতাবস্থায় কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূলসহ কতিপয় নাফরমান তথা কাট্টা মুনাফিক ওয়াদীয়া মালিক ইবনে কাওকাল, সুওয়াইদ, দাইস প্রমুখরা বানূ নাযীর গোত্রকে এই মর্মে বার্তা পাঠালো যে, হে ইহুদীরা! তোমরা অবিচল থাকো এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফিরে দাঁড়াও। আমরা কিছুতেই তোমাদের পরিহার করবো না। তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হলে আমরা তোমাদেরকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করবো। তোমাদের বহিষ্কার করা হলে আমরা তোমাদের সাথে বের হয়ে যাবো। সে মতে বানূ নাযীর তাদের সাহায্যের অপেক্ষায় থাকলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কোন সাহায্য করতে পারলো না। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চয় করে দিয়েছেন। তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আরজি পেশ করলো, যেন বিনা রক্তপাতে তাদেরকে বহিষ্কৃত করা হয়। এই শর্তে তারা তাদের অস্ত্র-শস্ত্র হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের হাত মুবারকে সমর্পণ করে কেবল সেই পরিমাণ অস্থাবর সম্পত্তি সাথে নিয়ে যাবে, যা তাদের উট বহন করতে পারে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের আরজি কবুল করলেন। তারা উটের পিঠে বহনযোগ্য মালামাল নিয়ে চলে গেল। তাদের এক একজন কড়িকাঠ থেকে শুরু করে পুরো ঘরটাই ভেঙ্গে উটের পিঠে তুলে নিলো। এরপর তাদের কতক ইহুদী খায়বরে এবং কতক ইহুদী শাম দেশে চলে গেল।
যারা খায়বরে চলে যায়, তাদের মধ্যে ছিলো সাল্লাম ইবনে হুকাইক, কিনান ইবনে রাবী ইবনে হুকাইকা ও হুয়াই ইবনে আখতাব। তারা সেখানে গেলে স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের নেতৃত্ব মেনে নিলো। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ছিদ্দীক্বে আকবর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বানূ নাযীর গোত্র তাদের নারী, শিশু ও অস্থাবর সম্পত্তি সাথে নিয়ে গিয়েছিল। ঢোল-তবলাগুলোও সাথে তুলে নিয়েছিল। তাদের নর্তকীরা পেছন থেকে বাজনা বাজিয়ে যাচ্ছিল। নাউযুবিল্লাহ! তাদের মধ্যে উরওয়া ইবনে ওয়ারদ্ আবাসীলের স্ত্রী উম্মু আমরও ছিল। তারা তার স্বামীর কাছ থেকে তাকে কিনে নিয়েছিল। সে ছিল বানূ গিফার গোত্রের নারী। (তাফসীরে মাযহারী, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বানূ নাযীর এত সমারোহ ও গর্বসহকারে পলায়ন করছিল যে, সেকালে কোন সম্প্রদায়কে কোন কাজে এমনটি করতে দেখা যায়নি।
এই ইহুদীরা পবিত্র মদীনা শরীফে তাদের যা কিছু সম্পদ রেখে পলায়ন করে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেসব সম্পদ মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
প্রসিদ্ধ ‘সীরত ও তারিখ’ গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে-
وَلَمْ يُسْلِمْ مِنْ بَنِي النّضِيرِ إلّا رَجُلَانِ حَضْرَتْ يَامِينُ بْنُ عُمَرَ أَبُو كَعْبِ بْنِ عَمْرِو بْنِ جِحَاشٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه; وَ حَضْرَتْ أَبُو سَعْدِ بْنِ وَهْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه، أَسْلَمَا عَلَى أَمْوَالِهِمَا فَأَحْرَزَاهَا.
অর্থ: ‘বানূ নাযীর থেকে মাত্র দু’জন ব্যক্তি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। উনাদের একজন হযরত ইয়ামীন ইবনে উমর (আবূ কা’ব) ইবনে আমর ইবনে জিহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, অন্যজন হযরত আবূ সা’দ ইবনে ওয়াহহাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনারা সম্মানিত ঈমান মুবারক গ্রহণ করার পর উনাদের যাবতীয় সম্পত্তিতে উনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত থাকে। ’ (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইয়ামীন পরিবারের জনৈক ব্যক্তি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আপনার চাচাতো ভাইয়ের পক্ষ থেকে কি কষ্ট গ্রহণ করতে হয়েছে এবং সে আমার বিরুদ্ধে কি জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল? এ কথা শুনে হযরত ইয়ামীন ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চাচাত ভাই আমর ইবনে জিহাশকে হত্যা করার জন্য নির্ধারিত পরিশ্রমের বিনিময়ে এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করলেন। বলা হয়ে থাকে, লোকটি তাকে হত্যা করেছিল। (শরহে ছহীহ বুখারী, উমদাতুল ক্বারী, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরতে লি-ইবনে হিব্বান, ইমতিয়াউল আসমা’, উসুদুল গবা, তারিখে উমাম ওয়াল মুলক্ব)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
فَتَحَصّنُوا مِنْهُ فِي الْحُصُونِ فَأَمَرَ رَسُولَ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِقَطْعِ النّخِيلِ وَالتّحْرِيقِ فِيهَا، فَنَادَوْهُ أَنْ يَا حَضْرَتْ مُحَمّدُ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَدْ كُنْت تَنْهَى عَنْ الْفَسَادِ، وَتَعِيبُهُ عَلَى مَنْ صَنَعَهُ فَمَا بَالُ قَطْعِ النّخْلِ وَتَحْرِيقِهَا؟
অর্থ: “বানূ নাযীর গোত্র তাদের দূর্গসমূহে লুকালো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উনাদেরকে খেজুর বাগান কেটে ফেলতে ও তা জ্বালিয়ে দিতে আদেশ মুবারক দিলেন। তা দেখেই ইহুদীরা চিৎকার করে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিতো নাশকতামূলক কাজ করতে নিষেধ করতেন এবং কেউ করলে তার নিন্দা করতেন। এখন যে নিজেই খেজুর বাগান কাটছেন এবং তাতে অগ্নি সংযোগ করছেন। ” নাউযুবিল্লাহ! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, জাওয়ামিউস সীরাহ, উয়ূনুল আছার ফি-ফুয়ূনিল মাগাযী, গাওয়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া আলিহী, তারিখে ইবনে খালদুন, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
অর্থাৎ বানী নাযীর ইহুদীদের গাছ কাটা ও আগুন লাগিয়ে দেয়ার মধ্যে লক্ষ কোটি হিকমত মুবারক রয়েছে যা জ্বিন-ইনসানের আক্বল সমঝের উর্ধ্বে। আর বিশেষ করে এই নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন স্বয়ং খ¦লিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى. إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ছাড়া নিজ থেকে কোন কিছু বলেন না। (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৩, ৪) (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)