বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৮)
, ২১ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০১ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৮ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) আইন ও জিহাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
অতঃপর মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূলের কাছ থেকে উঠে জুদী ইবনে আখতাব চলে গেলো তার ভাই হুয়াইয়ের কাছে। হুয়াই জিজ্ঞেস করলো, সংবাদ কি? জুদী বলল, খুবই খারাপ। আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে যখন তোমাদের কথা পেশ করলাম, তখন তিনি ও উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করলেন। তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এখন আমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে জিহাদে যাবো। এরপর আমি মুনাফিক সরদার উবাই বিন সুলূলের কাছে গেলাম। দেখলাম, তারা তেমন কোনো খবরই রাখে না। আমাকে সে কেবল বলল, আমি আমাদের মিত্র গাতফান গোত্রের কাছে সংবাদ পাঠাবো। তারা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবে।
বানী নাযীর জনপদে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র আছর উনার নামায আদায় করলেন। এরপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করার ব্যাপারে বললেন। এদিকে বনী নাযীরের লোকজন তাদের দূর্গের উপর উঠে তীর ও পাথর নিক্ষেপ করতে লাগলো। আর বনী কুরাইজা রইলো পৃথক অবস্থানে। তারা বনী নাযীরকে কোন প্রকার সাহায্য করলো না।
প্রসিদ্ধ সীরত ও তারিখসমূহে উল্লেখ রয়েছে-
فَلَمّا صَلّى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ رَجَعَ اِلَى بَيْتِهِ فِىْ عَشَرَةٍ مِنْ اَصْحَابِهِ عَلَيْهِ الدّرْعُ وَهُوَ عَلَى فَرَسٍ. وَقَدْ اسْتَعْمَلَ حَضْرَتْ عَلِيّا عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلَى الْعَسْكَرِ وَيُقَالُ حَضْرَتْ اَبَا بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ. وَبَاتَ الْمُسْلِمُونَ يُـحَاصِرُوْنَـهُمْ. يُكَبّرُوْنَ حَتّٰى اَصْبَحُوْا، ثُـمَّ اَذّنَ حَضْرَتْ بِلَالٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْه بِالْمَدِيْنَةِ. فَغَدَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ اَصْحَابِهِ الّذِيْنَ كَانُوْا مَعَهُ. فَصَلّى بِالنّاسِ بِفَضَاءِ بَنِىْ خَطْمَةَ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে পবিত্র ইশা উনার নামায মুবারক আদায় করে দশজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফে ফিরে আসলেন। সে সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন ঘোড়ার মধ্যে আরোহিত এবং উক্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন বর্ম পরিহিত। সুবহানাল্লাহ! আর সেখানে সেনাপতি হিসেবে রেখে এলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে। আর কেউ কেউ বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে সেনাপতি হিসেবে রেখে এসেছিলেন। অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সারা রাত তাদেরকে (শত্রুদেরকে) ঘেরাও করে রাখলেন। উনারা সকাল হওয়া পর্যন্ত তাকবীর ধ্বনি মুবারক দিচ্ছিলেন। অতঃপর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফে ফজর উনার আযান দিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। খুব ভোরেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার খিদমত মুবারকে যে সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ছিলেন, উনাদেরকে নিয়ে তিনি বানী খত্বমাহ্র প্রান্তরে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে পবিত্র ফজর উনার নামায আদায় করলেন। ” (তাফসীরে মাযহারী, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, শরহে যুরকানী)
এমতাবস্থায় হুয়াই ইবনে আখতাব সে প্রস্তাব পেশ করলো এই বলে, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যা করতে চান, আমরা তাতেই রাজী। আমরা এখন আপনার সম্মানিত শহর থেকে চলে যাবো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
لَا أَقْبَلُهُ الْيَوْمَ وَلَكِنْ اُخْرُجُوا مِنْهَا وَلَكُمْ مَا حَمَلَتْ الْإِبِلُ إلّا الْحَلْقَةُ
অর্থ: “আজ আর এরকম প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না। বরং তোমরা এই মহাসম্মানিত মদীনা শরীফ থেকে বের হয়ে যাও। উট যা বহন করতে পারে তা নিয়ে যেতে পারবে, যা চুক্তি হয়েছে তা ব্যতীত। ”
সালাম ইবনে মুশকাম বলল, হতভাগ্যের দল। এ প্রস্তাব গ্রহণ করো। তা না হলে তোমাদেরকে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। হুয়াই বলল, এর চেয়ে ভয়াবহ আর কি হবে? সালাম বলল, তোমাদের সন্তান-সন্ততিকে বানানো হবে দাস-দাসী। সহায়-সম্পত্তিতো যাবেই, তার সাথে চলে যাবে জীবন। জীবন চলে যাওয়ার চেয়ে শুধুমাত্র সহায়-সম্পত্তি চলে যাওয়া কি উত্তম নয়? হুয়াই এ প্রস্তাবে অসম্মতি জানাতে থাকলো।
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে-
فَلَمّا رَأَى ذَلِكَ حَضْرَتْ يَامِينُ بْنُ عُمَيْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه وَ حَضْرَتْ أَبُو سَعْدِ بْنُ وَهْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه قَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ وَإِنّك لَتَعْلَمُ أَنّهُ لَرَسُولُ اللّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا تَنْتَظِرُ أَنْ نُسْلِمَ فَنَأْمَنَ عَلَى دِمَائِنَا وَأَمْوَالِنَا؟ فَنَزَلَا مِنْ اللّيْلِ فَأَسْلَمَا فَأحْرَزَا دِمَائِهِمَا وَأمْوَالِهِمَا.
অর্থ: “অতঃপর হযরত ইয়ামীন ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আবূ সা’দ ইবনে ওয়াহহাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা খুব কঠিন অবস্থা দেখে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তোমরা যখন জানোই যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে শামিল হতে আর বাধা কিসের? আমরা সকলে মুসলমান হয়ে যাবো। এতে করে আমাদের জীবন ও সম্পদ দু’টোই হিফাযত হবে। উনারা দু’জন রাতে এসে ঈমানদার হয়ে গেলেন। উনারা হিফাযত করলেন জীবন ও স্বীয় সম্পদের নিরাপত্তা। ” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (তাফসীরে মাযহারী, বাহরুল উলূম, দালয়িলুন নুবুওওয়াহ, সুবুলূল হুদা ওয়ার রাশাদ, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী) (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)