বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৫)
, ০১ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১২ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৮ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আইন ও জিহাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ إِذْ هَمَّ قَوْمٌ أَن يَّبْسُطُوْا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنْكُمْ ۖ وَاتَّقُوا اللهَ ۚ وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ.
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! আপনাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার বেমেছাল নিয়ামত তথা অনুগ্রহ মুবারকের কথা স্মরণ করুন যখন এক সম্প্রদায় আপনাদের বিরুদ্ধে হস্ত উত্তোলন করতে চেয়েছিল, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের হাত সংযত করেছিলেন; সুতরাং তোমরা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনাকেই ভয় করো। আর মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভর করা ঈমানদারগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়, হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আমর রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের বর্ণনা মতে, সালাম ইবনে মুশকাম সে ইহুদীদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে নিষেধ করেছিলো এবং বলেছিলো তোমরা এ রকম করলে এ কথা অবশ্যই প্রমাণ হয়ে যাবে যে, আমরা সন্ধি ভঙ্গকারী। আর আমরাতো উনাদের সাথে সন্ধিবদ্ধ বা চুক্তিবদ্ধ। সুতরাং তোমরা এমন কাজ করো না। (তাফসীরে ইবনে মাযহারী)
উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে হযরত আবদ ইবনে হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইহুদীদের দূরভিসন্ধির কথা জানিয়ে দিলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে এলেন। তখন কেনানা ইবনে সুরিয়া নামের এক ইহুদী অন্যান্য ইহুদীদের বলল, তোমরা কি জানো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হঠাৎ চলে গেলেন কেন? তারা বলল, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এর কারণ আমরা যেমন জানি না, তেমনি তুমিও জানো না। কেনানা বলল-
بَلٰى وَالتَّوْرَاةِ إِنِّيْ لَأَدْرِيْ قَدْ أُخْبِرَ حَضْرَتْ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَا هَمَمْتُمْ بِهٖ مِنَ الْغَدْرِ فَلَا تَخْدَعُوْا أَنْفُسَكُمْ وَاللهِ إِنَّهٗ لَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا قَامَ إِلَّا أَنَّهٗ أُخْبِرَ بِمَا هَمَمْتُمْ بِهٖ وَإِنَّهٗ لَاٰخِرُ الْأَنْبِيَاءِ
অর্থ: ‘হ্যাঁ, তাওরাতের ক্বসম! আমি এর কারণ জানি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের দূরভিসন্ধির কথা জানতে পেরেই চলে গেছেন। সুতরাং তোমরা উনার বিরুদ্ধে আর ষড়যন্ত্র করো না। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল তথা হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে তিনি আখিরী নবী তথা সর্বশেষ নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ’ সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, তাফসীরে মাযহারী, সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ)
কেনানা আরো বললো, তোমরা চেয়েছিলে আখিরী নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেনো নবী হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনার বংশধর থেকে হন। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আখিরী নবী ও রসূল হিসেবে সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকেই মনোনীত করে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! আর তাওরাত শরীফতো আমাদের সামনেই রয়েছে। উনার মধ্যে তো এ কথা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে-
أَنَّ مَوْلِدَهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكَّةَ وَأَنَّ هِجْرَتَهٗ يَثْرِبُ وَصِفَتُهٗ بِعَيْنِهَا مَا تُخَالِفُ مَا فِي كِتَابِنَا وَلَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْكُمْ ظَاعِنِيْنَ تَتَنَاغَى صِبْيَانُكُمْ قَدْ تَرَكْتُمْ دُورَكُمْ خُلُوْفًا وَأَمْوَالَكُمْ إِنَّمَا هِيَ شَرَفُكُمْ
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই যিনি আখিরী নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক উনার স্থান হবেন পবিত্র মক্কা শরীফ। সুবহানাল্লাহ! এবং নিশ্চয়ই উনার মহাসম্মানিত হিজরত মুবারক উনার স্থান হবেন পবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক ও খুছূছিয়াত মুবারক ইত্যাদি হুবহু সেরকম যেরকম লেখা রয়েছে আমাদের তাওরাত শরীফে। (বরং তার চেয়ে কোটি কোটি গুণ বেশি। যা সমস্ত জ্বীন-ইনসানের আক্বল সমঝের উর্ধ্বে)। সুবহানাল্লাহ! আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমরা এ স্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছো। ধ্বংস হবে তোমাদের সন্তান-সন্ততি, বাড়ি-ঘর, সহায়-সম্পদ। তোমাদের পরিণতি খুবই মন্দ তথা খারাপ। ’ নাউযুবিল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, তাফসীরে মাযহারী, সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ)
সুতরাং তোমরা আমার কথা শোন। মেনে নাও দু’টো বিষয়ের যে কোন একটিকে। তৃতীয় বিষয় তোমাদের জন্য কল্যাণকর নয়। ইহুদীরা জিজ্ঞেস করলো, প্রথম দু’টো বিষয় কি? কেনানা বললো, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে দাখিল হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার পুতঃপবিত্র মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত গোলামে পরিনত হওয়া। তাহলে তোমাদের সন্তান-সন্ততি, সহায়-সম্পদ সবকিছুই রক্ষা পাবে। তোমরাও মর্যাদাবান হবে উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মতো। সুবহানাল্লাহ! (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বীরত্ব মুবারক (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬২)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ উনার ময়দানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ একজন অপরজনকে প্রাধান্য দেয়ার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)