বসনিয়ায় দ্বীন ইসলাম ও মুসলমান
, ১৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৫ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পাঁচ মিশালী
বসনিয়া প্রায় স্থলবেষ্টিত। তবে অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে তার ২০ কিলোমিটার সৈকত আছে। বসনিয়া একটি পর্বতসংকুল দেশ। এর উত্তর-পশ্চিম অংশের ভূমি পাহাড়ি এবং উত্তর-পূর্ব অংশ কিছুটা সমতল।
দেশটি ৩ মার্চ ১৯৯২ সালে যুগোসøাভিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। বসনিয়ার মোট আয়তন ৫১ হাজার ১২৯ বর্গকিলোমিটার। মোট জনসংখ্যা ৩৮ লাখ ২৪ হাজার ৭৮২ জন। জনসংখ্যার ৫০.৭ শতাংশ মুসলিম।
রাজনৈতিকভাবে বসনিয়া বিভিন্ন সময়ে বানাতে অব বসনিয়া, কিংডম অব বসনিয়া, উসমানীয় সাম্রাজ্য, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য ও কিংডম অব যুগোসøাভিয়ার অধীনে ছিল।
বসনিয়ায় ইসলামের আগমন:
১৪৬৩ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয় সুলতানের হাতে ‘কিংডম অব বসনিয়া’-এর পতন হলে অত্র অঞ্চলে দ্বীন ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ে। তবে ঐতিহাসিকরা এ বিষয়ে একমত যে, বসনিয়ায় জোরপূর্বক ও গণধর্মান্তরের ঘটনা ঘটেনি; বরং বসনিয়ায় মুসলমানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত হয়েছে কয়েক শতাব্দীর মুসলিম প্রচেষ্টার ফলে। তুর্কি আলেম ও সুফিরা দীর্ঘদিন বলকান অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে কাজ করে গেছেন।
বসনিয়ায় দ্বীন ইসলাম প্রচারকারীরা হানাফী মাযহাব, মাতুরিদি মতবাদ ও সুফি আদর্শে উজ্জীবিত ছিলেন। যার প্রভাব এখনো বলকান অঞ্চলে দেখা যায়। উসমানীয় শাসকরাও বলকান অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে, ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও জ্ঞানচর্চায় যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন।
উসমানীয়দের পর মুসলিম সমাজ:
১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয় শাসকরা বসনিয়াকে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হলে বসনিয়ান মুসলিমদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতার জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। এ সময় বহু মুসলিম তুর্কি শাসিত অঞ্চলে হিজরত করেন। তবে বেশির ভাগ বসনিয়ান মুসলিম নিজ দেশে থেকে যান। অবশ্য অস্ট্রিয়ান শাসকরাও চাচ্ছিলেন বসনিয়ার মুসলিম সম্প্রদায় দেশত্যাগ না করে এবং ইস্তাম্বুলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে। ফলে ১৮৮২ সালেই তারা বসনিয়ায় ‘রাইসুল উলামা’ নিয়োগ দেন এবং পাঁচ বছর পর ‘শরিয়াহ আইন’ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বসনিয়ান মুসলিমদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০৯ সালে শাসকরা ‘ওয়াকফ’ ও ইসলামী শিক্ষা পরিচালনায় স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়।
মুসলিমদের দুঃসময়:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বসনিয়াকে কমিউনিস্ট শাসিত যুগোসøাভিয়ার সঙ্গে একীভূত করা হলে মুসলিমদের দুঃসময় শুরু হয়। কমিউনিস্ট শাসকরা সব ধরনের দ্বীনি আবহে ইসলাম চর্চার স্বাধীনতা কেড়ে নেয় এবং বিভিন্ন মাদরাসা ও মক্তব অর্থাৎ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ করে। মুসলিমরা আরো বিপন্ন হয়ে ওঠে, যখন ১৯৯০-এর দশকে সাবেক যুগোসøাভিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই সময় ক্ষমতাসীন সার্বদের গণহত্যার শিকার হয় বসনিয়ান মুসলিমরা। সার্ব বাহিনী সাধারণ নিরীহ মুসলিমদেরকে থামিয়ে দিতে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম নারীদের গণসম্ভ্রমহরণ করে। মুসলিম নিধনের জন্য সার্বপ্রধান গ্রামগুলোতে অসংখ্য নির্যাতন শিবির গড়ে ওঠে।
বসনিয়া-হারজেগোভিনা কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, ৫০ হাজারের মতো বসনিয়ান নারী গণসম্ভ্রমহরণের শিকার হন। শুধু নির্যাতন শিবিরের নয়, তাদের সম্ভ্রমহরণ করা হতো বাসায়, রাস্তায়-সর্বত্র। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বসনিয়ায় মুসলিম নিধনকে ‘গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূল প্রচেষ্টা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুদ্ধের সময় সহস্রাধিক মসজিদসহ প্রায় চার হাজার মুসলিম স্থাপনা ধ্বংস করা হয়। মুসলমানদের মসজিদ, দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খানকা ও সমাধিসৌধের প্রায় ৮০ শতাংশ এই সময় ধ্বংস করা হয়। বসনিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম হলেও সব ধর্মাবলম্বীরা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করে থাকে এবং সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখে। ‘দ্য ইসলামিক কমিউনিটি ইন বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনা’ বসনিয়ার রাষ্ট্র স্বীকৃত মুসলিম প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান। উসমানীয় শাসনামল থেকে সংস্থাটি মুসলিমদের দ্বীনি বিষয়গুলো তত্ত্বাবধান করে। এ ছাড়া দেশটির প্রধান আটটি শহরে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত আটজন মুফতি আছে। যারা মুসলিমদের স্থানীয় সমস্যাগুলো সমাধান করে থাকে।
সূত্র : প্রবন্ধ-দ্য প্রফাইল অব বসনিয়ান ইসলাম, বিবিসি বাংলা ও এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দিনে তিন কাপ কফি মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি করতে সক্ষম - ক্যানসার-হার্টের মত আত্মঘাতী রোগ-ব্যাধি দূর করে
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম প্রজাতন্ত্রের দেশ সেনেগাল
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সেনেগালে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও ইসলামী আদর্শে নতুন মাত্রা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঘরোয়া ঔষধ হিসেবে আদা
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
রাশিয়ার আকাশে দেখা মিললো উজ্জ্বল গ্রহাণুর
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মসজিদের ভেতরে ৫৪০ বছরের পুরনো জিনের মসজিদ!
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চাঁদের বয়স কত? এক খ- পাথরের মাধ্যমে যা জানা গেল
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পাখির অভয়াশ্রম যে গ্রাম
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বায়ুদূষণ কতোটা ক্ষতিকর, জানালো গবেষণা
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রতিদিন ডাল খেলে যে ৩টি দারুণ উপকার মিলবে
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
চাঁদে বসছে ট্রেন লাইন!
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)