বদ নযর বা কুদৃষ্টি এবং তার শরয়ী আহকাম (২)
, ০৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৭ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ১৯ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বদ নযর কি? বদ নযর কাকে বলে?
বদ অর্থ: খারাপ, নযর অর্থ: দৃষ্টি। যে দৃষ্টির কারণে ক্ষতি সাধিত হয় কিংবা কারো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে দৃষ্টি দেয় তাকে বদ নযর বলে। কেউ কেউ উহাকে চোখ লাগা বা নযর লাগা, কুদৃষ্টিও বলে থাকে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَإِنْ يَّكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ.
অর্থ: কাফিরেরা যখন পবিত্র কুরআন শরীফ শুনে তখন তারা আপনার দিকে এমনভাবে তাকায়, যেন তারা আপনাকে তাদের বদ নযর বা কুদৃষ্টি দ্বারা আপনাকে আছাড় দিয়ে ফেলে দেবে। নাউযুবিল্লাহ! অবশেষে তারা বলে, তিনি তো একজন পাগল- নাউযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা ক্বলম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫১)
এ পবিত্র আয়াত শরীফের তাফসীরে হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, মক্কা শরীফে এক লোক বদ নযরে বিখ্যাত ছিলো। মক্কা শরীফের কাফিররা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষতি সাধনের লক্ষ্যে তাকে নিয়োগ করলো। নাউযুবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন, তখন ঐ বদলোকটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বদ নযর দেয়ার চেষ্টা করতো। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিফাজত করেন। তার বদ নযর উনার উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। ব্যর্থ হয়ে পরিশেষে উনার পবিত্র শান-মান মুবারকের খিলাফ কথা বলা-বলি শুরু করে দিত। নাউযুবিল্লাহ! (তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে মাজহারী, তাফসীরে বাগবী, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন-৮/৫৫০)
পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাদের ভাইগণের ঘটনা বর্ণনায় ইরশাদ মুবারক করেন-
وَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوا مِن بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُوا مِنْ أَبْوَابٍ مُّتَفَرِّقَةٍ ۖ وَمَا أُغْنِي عَنكُم مِّنَ اللهِ مِن شَيْءٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ.
অর্থ: হযরত ইয়া’কুব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার প্রিয় সন্তানগণ, মিশরে প্রবেশের সময় আপনারা সবাই এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন না। বরং ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম-আহকাম থেকে বিরত রাখার অধিকার কারো নেই। হুকুমদাতা কেবলই মহান আল্লাহ পাক তিনিই। উনার উপরই আমরা ভরসা করি। আর তাওয়াক্কুল বা ভরসাকারীগণের উচিত উনার উপরই তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা। (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৭)
রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু, হযরত ইমাম মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাসহ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের সকল মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এই আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তিনি উনার সন্তানগণের ব্যাপারে বদ নযরের আশঙ্কা করেছিলেন যে, উনার সন্তানদের দেখে লোকদের বদ নযর লাগতে পারে। কারণ উনারা ছিলেন ১১ ভাই। আবার উনারা প্রত্যেকেই সুস্বাস্থ্যবান ও সুঠাম দেহ মুবারকের অধিকারী ছিলেন। এজন্য সন্তানদের মিশরে প্রবেশের সময় আলাদা আলাদাভাবে প্রবেশ করতে বলেছেন। সাথে সাথে এটাও উল্লেখ করেছেন যে, এসব (বদ নযর এবং তা থেকে বাঁচার পদ্ধতি) মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের উপর নির্ভরশীল। তাই সর্বক্ষেত্রে সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার উপরই তাওয়াক্কুল বা ভরসা রাখা আবশ্যক। (তাফসীরে মাজহারী, তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন-৫/৯৫)
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْعَيْنُ حَقٌّ.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বদ নযর বা কুদৃষ্টি সত্য। তার তা’ছীর বা প্রভাব আছে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ-৪০৬৪)
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)