বদরের জিহাদে সংঘটিত বিশেষ কয়েকটি ঘটনা
, ১৮ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২০ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১৯ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ৪ চৈত্র, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ

* সেদিন জনৈক হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একজন মুশরিককে পিছনে জোরে ধাওয়া করছিলেন। এ সময় তিনি তার উপর দিক থেকে বেত্রাঘাতের শব্দ ও অশ্বারোহীর আওয়াজ শুনতে পান। অশ্বারোহী বলছিলেন, “হে হায়যূম (ফেরেশতার ঘোড়ার নাম) সম্মুখে অগ্রসর হও। ’ তখন তিনি দেখতে পেলেন উনার সম্মুখে ওই মুশরিক চিৎ হয়ে পড়ে আছে। এরপর তিনি লক্ষ্য করে দেখলেন যে, তার নাক ফাটা ও মুখম-ল ক্ষত-বিক্ষত। যেন কেউ তাকে বেত্রাঘাত করেছে। বেতের আঘাতে তার সমস্ত দেহ নীল হয়ে গিয়েছে। এরপর ওই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। এই সাহায্য তৃতীয় আসমান থেকে এসেছে। ’ সেদিন মুসলমানগণ ৭০ জন কাফিরকে হত্যা এবং ৭০ জনকে বন্দি করেন।
* বদরের জিহাদের দিন একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কিছু সংখ্যক গৌরবর্ণের লোককে সাদাকালো বর্ণের ঘোড়ার উপর আসমান ও যমীনের মাঝখানে দেখেছেন। উনারা ছিলেন বিশেষ প্রতীক চিহ্নধারী। উনারা শত্রুদের হত্যা করেছিলেন এবং বন্দিও করেছিলেন।
* বদরের জিহাদে নিহতদের মধ্যে যারা হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাতে নিহত হয়েছিলো লোকজন তাদের চিনতে পারতো। কেননা তাদের কাঁধের উপরে ও জোড়ায় আগুনে পোড়ানোর মতো দাগ থাকতো।
* বর্ণনাকারী বলেন, বদরের দিন আমি দেখলাম, আকাশ থেকে দিগন্তব্যাপী এক বিরাট চাদর নেমে আসছে। এরপর দেখলাম গোটা উপত্যকা ছেয়ে গেছে। তখন আমার মনে হলো, এটা অবশ্যই আসমান থেকে আগত কিছু হবে, যা দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাহায্য করা হচ্ছে। বস্তুত এ ছিলো হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমন- যার পরিপ্রেক্ষিতে কাফিরদের পরাজয় ঘটে।
* বর্ণনাকারী বলেন, আমরা উভয় পক্ষ মুখোমুখি হই এবং জিহাদে জড়িয়ে পড়ি। হঠাৎ এক আওয়াজ শুনতে পাই যেন আকাশ থেকে পৃথিবীতে কিছু পড়েছে। তামার পাত্রে পাথরের টুকরা পড়লে যেমন আওয়াজ হয় তেমন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের দিকে এক মুঠো কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। যার ফলে আমরা ভীত হয়ে পড়ি।
* নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ধুলোবালিযুক্ত এক মুঠো কঙ্কর শত্রু পক্ষের দিকে নিক্ষেপ করেন। দেখা গেলো, এমন কোনো মুশরিক ছিলো না, যার দুই চোখে ওই ধুলোবালি লাগেনি। এরপর মুসলমানরা পিছনে ধাওয়া করে তাদেরকে হত্যা ও বন্দি করেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন-
فلم تقتلومن ولكن الله قتلهم وما رميت اذ رميت ولكن الله رمى.
অর্থ: “আপনারা তাদেরকে হত্যা করেননি, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে হত্যা করেছেন এবং আপনি যখন ধুলো নিক্ষেপ করেছিলেন তখন আপনি নিক্ষেপ করেননি। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিক্ষেপ করেছেন। ” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)
কাঠ তরবারী হয়ে যাওয়া:
* হযরত উক্কাস ইবনে মিহসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ‘বদর জিহাদে আমার নিজের তরবারিটি ভেঙে যায়। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে একখানা কাঠ দিলেন। আমার হাতে এলে তা একটি ঝকঝকে লম্বা তরবারিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
আঘাতপ্রাপ্ত চোখ নিমিষেই সুস্থ হওয়া:
* হযরত কাতাদা ইবনে নু’মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, ‘বদর জিহাদে উনার চোখে দারুণভাবে আঘাত লাগে। এতে চোখের পুত্তলি বের হয়ে গ-দেশে ঝুলতে থাকে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঝুলে থাকা চোখ কেটে ফেলার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অনুমতি চান। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমতি না দিয়ে উনাকে ডেকে কাছে এনে পুত্তলিটি ধরে যথাস্থানে বসিয়ে দেন। এতে উনার চোখ এমন ভালো হয়ে যায় যে, তিনি বুঝতেই পারতেন না যে, কোন চোখে আঘাত লেগেছিলো। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, উনার এ চোখটি অপর চোখের চেয়েও উত্তম দেখাতো। সুবহানাল্লাহ!
বদর কূয়ায় কাফির সর্দারদের লাশ নিক্ষেপ:
বদরের জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে ২৪ জন কুরাইশ সর্দারের লাশ বদর প্রান্তরের একটি কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছিলো। কূপটি ছিলো ভীষণ নোংরা ও কদর্য। শত্রুদের লাশগুলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তিন দিন পর্যন্ত রেখে দেন। অবশেষে লাশে পচন ধরে। তখন তিনি তাদের কাছে অর্থাৎ সেই কূপের কাছে গিয়ে বলেন, “হে উমাইয়া ইবনে খালফ, হে আবূ জাহল ইবন হিশাম, হে উতবা ইবনে রাবীআ, হে শায়বা ইবনে রাবীআ! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন, তা কী তোমরা যথাযথভাবে পেয়েছো? আমার প্রতিপালক আমার সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন, তা তো আমি যথাযথভাবে পেয়েছি। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তখন বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কী এমন এক সম্প্রদায়ের সাথে কথা বলছেন, যারা মরে পচে গলে গেছে? জবাবে তিনি বললেন, সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার জীবন মুবারক, আমি যা যা বলছি তা তাদের তুলনায় আপনারা অধিক শুনছেন না। কিন্তু তারা উত্তর দিতে পারছে না। ’
আবু জাহিলের পরিণতি:
জনৈক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললো, আমি বদর প্রান্তর দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি একজন লোক মাটির নিচ থেকে উপরের দিকে উঠে আসছে। আর একজন তাকে হাতুড়ি দিয়ে এমনভাবে আঘাত করছে যে, সে মাটির নিচে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। এরপরও সে আবার উঠছে এবং বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। এটা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সে হলো আবু জাহিল। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে। আর তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য একজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
-আহমদ আজিমা ফারহা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৭৫)
১৮ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৭৪)
১১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৭৩)
০৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৭২)
২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৭১)
১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নাজরান অভিযান
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৭০)
১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৩য় হিজরী মুবারকের সম্মানিত গাতফানের জিহাদ (২)
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৬৯)
০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৩য় হিজরী মুবারকের সম্মানিত গাতফানের জিহাদ (১)
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)