প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা রাখা হারাম, যা লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৮)
, ০৭ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১২ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
অপরাধ শনাক্তকরণে আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার:
আমেরিকান ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস
কাজ শুরু হলো কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। অখ- বাংলায় তখন অ্যানথ্রোপমেট্রি (মানবদেহের আকৃতি) পদ্ধতিতে অপরাধীদের শনাক্ত করার কাজ চলত। ২০০১ সালে কলিন বিভানের প্রকাশিত ‘ফিঙ্গারপ্রিন্টস’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অ্যানথ্রোপমেট্রিক পদ্ধতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কাজী সাইয়্যিদ আজিজুল হক ভয়ানক অসুবিধার সম্মুখীন হন। ফলে নিজেই আঙ্গুলের ছাপ তথা ফিঙ্গারপ্রিন্টের শ্রেণীবিন্যাসকরণের একটা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকেন। তিনি উদ্ভাবন করেন গাণিতিক ফর্মুলা এবং আঙ্গুলের ছাপের কোডিং।
(১) (২) (৩) (৪)
বিভিন্ন প্রকার আঙ্গুলের ছাপের পর্যালোচনা
কাজী সাইয়্যিদ আজিজুল হক ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপের ধরণের ওপর ভিত্তি করে ৩২টি কলাম তৈরী করেন। প্রতিটি কলামের সাথে তিনি ৩২টি সারি যোগ করেন, এভাবে ৩২ী৩২=১০২৪ তথা এক হাজার ২৪টি খোপের সৃষ্টি করেন। লেখক কলিন বিভান তার বইতে আরো উল্লেখ করেছে যে, হিজরী ১৩১৪ (১৮৯৭ ঈসায়ী) নাগাদ কাজী সাইয়্যিদ আজিজুল হক উনার কর্মস্থলে ৭০০০ ফিঙ্গারপ্রিন্টের বিশাল এক সংগ্রহ গড়ে তুলেন। উনার সহজ-সরল এই পদ্ধতি লাখ লাখ ফিঙ্গারপ্রিন্টের শ্রেণীবিন্যাসও সহজ করে দেয়।
বিভিন্ন প্রকার আঙ্গুলের ছাপের সহজ শ্রেণী বিন্যাস
এর আগে অপরাধী শনাক্তকরণে কথিত বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের চাচাতো ভাই ফ্রান্সিস গ্যালটনের মনগড়া অ্যানথ্রোপমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। গ্যালটনের পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্টের শ্রেণীবিন্যাসকরণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যেত, অথচ সাইয়্যিদ আজিজুল হক উনার সাব-ক্ল্যাসিফিকেশন পদ্ধতির বদৌলতে তা হয়ে দাঁড়ায় খুব বেশি হলে মাত্র এক ঘণ্টার কাজ। অর্থাৎ যেভাবে মূসা আল খাওয়ারিজমি দশমিক সংখ্যাতত্ত্ব আবিষ্কারের মাধ্যমে খ্রিস্টানদের মনগড়া রোমান সংখ্যাতত্ত্বকে নাকচ করে বড় বড় গণনাকেও সহজ ও অল্প সময়ে সম্ভবপর করেছেন, ঠিক সেভাবেই কাজী সাইয়্যিদ আজিজুল হক তিনি খ্রিস্টানদের মনগড়া পদ্ধতিকে বাতিল করে দিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তিকে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করেছেন। অর্থাৎ মুসলিম বিজ্ঞানীগণ উনাদের কারণেই বিজ্ঞানচর্চার ধারা সহজ, সঠিক ও সুন্দর হয়েছে। বিপরীতে কাফির-মুশরিকদের মনগড়া ও ভুল থিওরীর কারণে বিজ্ঞানচর্চা কঠিন হয়েছে।
ফিঙ্গারপ্রিন্টের আধুনিক ব্যবহারসমূহ:
মহান আল্লাহ পাক উনার একটি অন্যতম আশ্চর্যজনক কুদরতী রহস্য হলো মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট।
পূর্বে উল্লেখিত পবিত্র সূরা ক্বিয়ামা শরীফ উনার ৪নং আয়াত শরীফখানা নিয়ে যতোই ফিকির করা হয়, যতই গবেষণা করা হয়, ততই বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যেতে হয় এবং সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি বান্দার শির আপনা থেকেই নত হয়ে যায়। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, ফিঙ্গারপ্রিন্টের নিত্য-নতুন উপযোগিতা ও কার্যকারিতা ততই মানবজাতির সম্মুখে পরিস্ফুট হচ্ছে। নিম্নে তার কিছু উদাহরণ দেয়া হলো-
(১) মোবাইল ফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যবহার:
‘বায়োমেট্রিক’ শব্দ দ্বারা বোঝানো হয় মানুষের বিভিন্ন বিশেষায়িত শারীরিক বৈশিষ্ট্যকে, যার দ্বারা কোন ব্যক্তিকে অন্যান্য ব্যক্তি হতে আলাদা করে শনাক্ত করা সম্ভবপর হয়।
যেমন মানুষের চেহারা, কণ্ঠস্বর, স্বাক্ষর, ডিএনএ প্রোফাইল, চোখের রেটিনা, চোখের আইরিস, ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রভৃতি। এসব শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার সবগুলোর মধ্যেই নানা ধরণের ত্রুটি ও অসুবিধা বিদ্যমান কেবলমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট বাদে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট শনাক্তকরণের প্রক্রিয়াটি অনেক বেশি দ্রুত, ঝামেলাহীন, ঝুঁকির সম্ভবনা নেই এবং স্বল্পমূল্যে ব্যবহারের উপযুক্ত। বিশেষ করে মোবাইল ডিভাইস আনলক করার ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এর একটি মূল কারণ হলো, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর মোবাইল ফোনে সহজে স্থাপনযোগ্য। সম্মানিত শরীয়তে নিষিদ্ধ ছবির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ফ্রন্ট ক্যামেরার সামনে চেহারাটি ঠিকমতো রাখতে পারলে তবেই ক্যামেরার পক্ষে চেহারা শনাক্ত করা সম্ভব হয়, অন্যথায় সম্ভব হয় না। যার ফলে বারবার একই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করতে হয়। কণ্ঠস্বরের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, মোবাইল ডিভাইস আনলক করতে বারবার ব্যবহারকারীকে চেষ্টা করতে হয়।
কারণ বিভিন্ন সময়ে কণ্ঠস্বরের উঠা-নামার কারণে যন্ত্রের পক্ষে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
কিন্তু ফিঙ্গারপ্রিন্টের ক্ষেত্রে এমনটি হয় না। মোবাইল ডিভাইসের সেন্সরের উপর যেভাবেই আঙ্গুল রাখা হোক না কেন, অতিদ্রুত স্মার্টফোনের পক্ষে (০.৩ সেকেন্ডে) ব্যবহারকারীর আঙ্গুলের ছাপ শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
এই প্রক্রিয়ার ধপপঁৎধপু অত্যন্ত বেশি, যে কারণে প্রথম চেষ্টাতেই মোবাইল ডিভাইসের পক্ষে ব্যবহারকারীর আঙ্গুলের ছাপ শনাক্ত করা সম্ভব হয়। ছবি বা কণ্ঠস্বর প্রক্রিয়ার মতো এতে ব্যবহারকারীকে বারবার ফোন আনলক করার চেষ্টা করতে হয় না।
সবকিছু মিলিয়ে পিন, পাসওয়ার্ড ও প্যাটার্ন লকসহ যত প্রক্রিয়া আছে মোবাইল ফোনের ংবপঁৎরঃু বা নিরাপত্তার জন্য, সেগুলোর তুলনায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আনলক অনেক বেশি সুবিধাজনক ও দ্রুত হওয়ায় বর্তমানে এই প্রক্রিয়াই অধিকাংশ স্মার্টফোন ইউজার ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকে। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-গোলাম মুর্শিদ
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৬)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গান-বাজনা অকাট্য দলীল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে হারাম
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪২)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে সমস্ত নামধারী আলিমরা শাসকদের দরবারে আসা-যাওয়া করে তারাই উলামায়ে সূ এবং সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব (৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যে সমস্ত নামধারী আলিমরা শাসকদের দরবারে আসা-যাওয়া করে তারাই উলামায়ে সূ এবং সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)