প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা রাখা হারাম, যা লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৪)
, ১৫ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ১৮ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আঙুলের ছাপ কোন বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য নয়, বরং চামড়ার আভ্যন্তরীণ স্তরের মৌলিক বৈশিষ্ট্য এবং মানুষের জেনেটিক কোডের উপর নির্ভরশীল:
আমরা পূর্বের সংখ্যাগুলোতে আলোচনা করেছি যে, আইডেন্টিক্যাল টুইন বা ‘হুবহু জমজ’ সন্তানদের ডিএনএ প্যাটার্ন একই হলেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট হয় ভিন্ন, যেহেতু তারা মাতৃ রেহেমের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করে। তবে ফিঙ্গারপ্রিন্টের গঠন হুবহু এক না হলেও তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্টের প্রকরণ এক হয়, যেহেতু তাদের ডিএনএ কোড তথা জেনেটিক গঠন হয় অভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, হুবহু জমজের কারো আঙ্গুলের ছাপ যদি ষড়ড়ঢ় হয়, সেক্ষেত্রে অপরজনেরও সাধারণত ষড়ড়ঢ় হয়ে থাকে। প্রকরণ এক হয়ে থাকে, কিন্তু আঙ্গুলের ছাপ হুবহু এক হয় না। আবার আঙ্গুলের ছাপের উপর ভিত্তি করে লিঙ্গ নির্ধারণ করাটাও সম্ভবপর। কারণ কোনকিছু স্পর্শ করলে তার উপর আঙ্গুলের ছাপ বসে যায় মানুষের আঙ্গুলের ডগায় ঘামগ্রন্থি ও তেলগ্রন্থি থেকে বের হওয়া ঘাম ও তেলের কারণে। নারীর ঘামে এমাইনো এসিডের পরিমাণ পুরুষের দ্বিগুণ হয়। যে কারণে ফিঙ্গারপ্রিন্টের নমুনা থেকে সংগ্রহকৃত ঘাম বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করা সম্ভব যে, ফিঙ্গারপ্রিন্টটি পুরুষ না মহিলার। অর্থাৎ আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে যে আঙ্গুলের ডগার উদাহরণ টানলেন, এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অনেক কুদরতী রহস্য। ফিঙ্গারপ্রিন্ট মানুষের কোন বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য নয় যা চাইলেই পরিবর্তন করা যায়, বরং এটি মানুষের আভ্যন্তরীণ মৌলিক বৈশিষ্ট্য যা মানুষ মাতৃরেহেমে থাকা অবস্থাতেই লাভ করে এবং এই বৈশিষ্ট্য তার ডিএনএ কোডের সাথেও সম্পর্কিত। অর্থাৎ আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মাঝে আঙ্গুলের ডগার উদাহরণ দ্বারা বুঝিয়েছেন যে হাশরের ময়দানে মানুষকে এমনভাবে উত্থাপন করা হবে, হুবহু যেভাবে সে দুনিয়াতে ছিল। দুনিয়াতে সে যেই আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ছিল সেভাবেই হাশরের ময়দানে তার আঙ্গুলের ছাপ হবে, আবার আঙ্গুলের ছাপের সাথে যেহেতু বংশগতির বিষয়টিও সম্পর্কিত সেহেতু তার ডিএনএ কোডিংও তখন একইরকম হবে। আবার ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে লিঙ্গও যেহেতু সম্পর্কিত, সেহেতু লিঙ্গও একইরকম হবে। পুরুষ পুরুষ হিসেবেই উত্থিত হবে আবার মহিলাও মহিলা হিসেবেই উত্থিত হবে। অর্থাৎ এক আঙ্গুলের ছাপ দিয়েই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কার্য মুবারক উনার ব্যাপকতাকে নির্দেশ করলেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেননি যে হাশরের ময়দানে মানুষের হাত এক রকম হবে, পা একরকম হবে। তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে আঙ্গুলের ছাপ একরকম হবে, কারণ এই এক আঙ্গুলের ছাপেই মানুষের পুরো বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়ে যায়। একারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই এই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মাঝে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন মুবারক রয়েছে। ” (পবিত্র সূরা রূম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২২)
আঙুলের ছাপের স্থায়িত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে কিছু কথা:
প্রত্যেকটি মানুষই আলাদা আঙুলের ছাপ নিয়ে জন্ম নেয়। মায়ের রেহেমে অবস্থানের বারো সপ্তাহে শিশুর আঙুলের ছাপ তৈরী হওয়া শুরু করে। শিশুর ডিএনএ এবং ভ্রুণের নড়াচড়ার উপর ভিত্তি করে তৈরী হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট। যে কারণে আইডেন্টিকাল টুইন বা যমজ শিশুদের ডিএনএ এক হলেও তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট কখনো এক হয় না।
মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার শরীরের সব অংশেরই পরিবর্তন হতে থাকে। কিন্তু আঙুলের ছাপের কোন পরিবর্তন হয় না।
আঙুলের ছাপ সৃষ্টিকারী যে রেখাগুলো আঙুলের ডগায় দেখা যায়, তাকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা তাদের ভাষায় বলে থাকে ফ্রিকশন রিজ বা ঘর্ষণ রেখা (ছবিতে দেখুন)।
এই ফ্রিকশন রিজ বা ঘর্ষণ রেখাগুলো শুধু আঙুলের ডগাতেই থাকে না, সাথে সাথে আঙুলের নীচের অংশে, হাতের তালুতে, পায়ের আঙুলে এবং পায়ের পাতাতেও এই ফ্রিকশন রিজ বা ঘর্ষণ রেখাসমূহ দেখা যায়। এই ফ্রিকশন রিজ বা ঘর্ষণ রেখাগুলো বয়সের সাথে অপরিবর্তনীয় থাকে। তবে রাজমিস্ত্রি তথা বাড়িঘর তৈরী বা ইট-সুরকি ওঠানামার কাজ করা, বা বিভিন্ন ক্ষয়কারী কাজ করা ব্যক্তিদের হাত বারবার ঘর্ষণের সম্মুখীন হওয়ায় আঙুলের ছাপ মলিন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তারা তাদের কাজগুলো বন্ধ করার পরপরই তাদের ক্ষয়প্রাপ্ত ফ্রিকশন রিজ বা ঘর্ষণ রেখাগুলো ফের তৈরী হয় এবং আঙুলের ছাপ আগের মতো হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
ফিঙ্গারপ্রিন্টের দ্বারা পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করে থাকে। যে কারণে ইতিহাসের বিভিন্ন কুখ্যাত অপরাধীরা বারবার তাদের আঙুলের ছাপ পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে। অনেকে চেষ্টা করেছে ছুরি দিয়ে কেটে আঙুলের ছাপ বিকৃত করার। তাতে করে বড়জোর আঙুলে ছুরির দাগ বসে, কিন্তু দাগের চারপাশে ফ্রিকশন রিজ বা ঘর্ষণ রেখাগুলো অক্ষত থাকায় তা দিয়ে ঠিকই অপরাধীকে শনাক্ত করা যেতো। আমেরিকার কুখ্যাত অপরাধী জন ডিলিঞ্জার এসিড এবং আগুন দিয়ে ঝলসিয়ে আঙুলের ছাপ মুছে ফেলতে চেয়েছিলো, কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তার আঙুলের চামড়াগুলো ঠিক হতেই আঙুলের ছাপ ফের ফিরে আসে।
-গোলাম মুর্শিদ
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকারী, কটাক্ষকারী, অবমাননাকারীদেরকে শরঈ শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৭)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দ্বীন ইসলাম উনার জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ৩ শ্রেণী
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মালিকুত তামাম, ক্বাসিমুন নিআম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল ফাতহ মুবারক উনার বরকত ও ফযীলত (৩)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন (৭)
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)