ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ লাভের প্রকারভেদ ও সংক্ষিপ্ত রূপরেখা
, ২৪ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৭ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০৬ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২২ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সম্মানিত তরীক্বত উনার পরিভাষায়, ফয়েজ হচ্ছে এক প্রকার নূর বা আলো বিশেষ। যা সম্মানিত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার তরফ থেকে মুরীদের প্রতি নিক্ষেপ করা হয়। যা মুরীদের হিদায়েত, ইছলাহ অর্জন এবং হক্বের উপর ইস্তিক্বামত থাকার কারণ হয়।
সমস্ত ওলীআল্লাহ উনারা উনাদের মুরীদ, মু’তাকিদদেরকে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ দান করেন। আর সমস্ত সালিক বা মুরীদ উনাদের সম্মানিত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট থেকে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করে পূর্ণতায় পৌঁছে থাকেন এবং খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীক্বী রেযামন্দী-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করে থাকেন।
ফয়েজের প্রকারভেদ: ফয়েজ অনেক প্রকার। তবে তাছাউফের কিতাবসমূহে সাধারনভাবে ৪ প্রকার উল্লেখ করা হয়, যথা-
১. ফয়েজে ইনয়িকাসী। ২. ফয়েজে ইল্ক্বায়ী। ৩. ফয়েজে ইছলাহী। ৪. ফয়েজে ইত্তেহাদী।
প্রথম “ফয়েজে ইনয়িকাসী।” যেমন, কোন ব্যক্তি আতর শরীরে মেখে কোন মজলিসে উপস্থিত হলে তার সুঘ্রাণে মজলিসের সমস্ত লোক মোহিত হয়। এটা সাধারণ ও প্রাথমিক পর্যায়ের ফয়েজের উদাহরণ। কেননা, সেই ব্যক্তি মজলিস হতে প্রস্থান করলে উক্ত সৌরভ বা সুঘ্রাণ স্থায়ী থাকেনা। অনুরূপ কোন ওলীউল্লাহ কোনস্থানে উপস্থিত হলে উনার রূহানী ফয়েজ বা জ্যোতির প্রভাবে সাধারণ লোক বিমোহিত হতে থাকে। আর এর কারণেই উক্ত এলাকার মৃত ব্যক্তিরা পর্যন্ত ফায়দা হাছিল করে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
দ্বিতীয় “ফয়েজে ইল্ক্বায়ী।” যেমন, কোন ব্যক্তি তার প্রদীপকে অন্য ব্যক্তির প্রদীপের আগুন দ্বারা প্রজ্জ্বলিত করে নেয়। এই প্রকার ফয়েজ প্রথম প্রকার ফয়েজ অপেক্ষা অধিক প্রভাবযুক্ত হয়ে থাকে। কেননা, কিছুকাল এর প্রভাব স্থায়ী থাকে কিন্তু প্রবল বাতাস প্রবাহিত হলে এটা নির্বাপিত হয়ে যায়। এতে নফ্স ও লতিফাসমূহ সম্পূর্ণরূপে পরিশুদ্ধ হয়না।
তৃতীয় “ফয়েজে ইছলাহী।” যেমন, কোন ড্রেন বা নালা দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। উক্ত ড্রেন বা নালাতে যদি কোন ময়লা, তৃণ, ঘাস বা দুব্বা ইত্যাদি পড়ে তৎক্ষনাৎ তা দূরীভূত হয়ে উক্ত ড্রেন বা নালা পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে যদি কোন বড় আকারের পাথর বা বড় মাটির টুকরা উক্ত ড্রেন বা নালায় পড়ে তবে তা বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রকার ফয়েজের প্রভাব অনেককাল স্থায়ী হয়ে থাকে।
চতুর্থ “ফয়েজে ইত্তেহাদী।” কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা নিজ আত্মাকে (রূহকে) দৃঢ়তার সাথে মুরীদের আত্মার সাথে সংযোগ করেন। এতে কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আত্মার প্রভাব মুরীদের আত্মায় প্রবেশ করে, এটা সর্বাপেক্ষা প্রবল ফয়েজ।
ফয়েজে ইত্তেহাদী ব্যতিত মূল নিয়ামত হাছিল করা কখনোই সম্ভব নয়।
আল্লামা মাওলানা মুহম্মদ রুহুল আমীন বশিরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘মুর্শিদে মুকাম্মিল ব্যক্তিগণ তাওয়াজ্জুহ দানে নিজের আত্মাকে সজোরে মুরীদের আত্মার সাথে সংযোগ করত: স্বীয় আত্মিক নূর বা জ্যোতি তার আত্মার উপর নিক্ষেপ করেন।’ তিনি আরো বলেন, ফয়েজে ইত্তেহাদীর তাছীর বা প্রভাব অন্যান্য ফয়েজ অপেক্ষা সর্বাপেক্ষা অধিক প্রবল। যেহেতু তাতে ‘মুর্শিদে মুকাম্মিল’ উনার সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিক ক্রিয়া বা ফয়েজ মুরীদের হৃদয়ে সঞ্চালিত হয়ে থাকে।’ (তাফসীরে আব্দুল হাই ছিদ্দিক্বী)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَتَزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰى
অর্থ: ‘তোমরা পাথেয় সঞ্চয় করো। নিশ্চয়ই তাক্বওয়া বা পরহেযগারীতা সর্বোত্তম পাথেয়।’ (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ-১৯৭)
হযরত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ ব্যতীত হাক্বীক্বী তাক্বওয়া হাছিল করা সম্ভব নয়। হক্ব মত ও হক্ব পথের উপর ইস্তিকামত (অটল) থাকাও সম্ভব নয়। কাজেই সেই ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ লাভের জন্য সবসময় তৎপর থাকা আবশ্যক।
শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি গভীর মুহব্বত, তা’যীম-তাকরীম বিশুদ্ধ নিয়ত এবং সুধারণা, চেষ্টা, সাধনা যদি যথার্থ হয় তাহলে পৃথিবীর যে কোন স্থানে অবস্থান করলেও ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ লাভ করা যায়। কিন্তু ছোহবত মুবারকের বরকত ও ফায়দা ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা ব্যতীত লাভ করা সম্ভব নয়। সম্মানিত শায়েখ উনার দু’চোখের ভ্রু’দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থান থেকে যে ফয়েজের স্রোতধারা বিচ্ছুরিত হয় তাও ছোহবত মুবারক ব্যতিত হাছিল করা যায় না।
শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনিই ফয়েজ হাছিলের উৎস। উনার কথা মুবারক, আচার-আচরণ মুবারক এমনকি উনার নাম মুবারক থেকেও সেই নূর মুবারক প্রবাহিত হয়। সালিক বা মুরীদ আদব ও শ্রদ্ধার সাথে উনার ছানা-ছিফত করলে ও নছীহত মুবারক শুনলে এবং তাছাওউর (ছূরত মুবারকের ধ্যান) করলে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল হয়।
তাছাওউফের কিতাবে উল্লেখ আছে, দুচোখের ভ্রু’দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থান থেকে বিশেষ এবং অধিক পরিমাণে ফয়েজ বিচ্ছুরিত হয়। কাজেই সালিক বা মুরীদের সেদিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা উচিত।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)