প্রসঙ্গ- বেইলি রোডে অগ্নিকা- :রাজধানীতে ঠাসাঠাসি করে কেন এত রেস্তোরা? (১)
, ০৬ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ০৩ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) আপনাদের মতামত
সম্প্রতি বেইলি রোডে রেস্তোরায় আগুন ধরার পর অনেকে বলেছে, এক ভবনে এত এত রেস্তোরা, বিশাল ঝুঁকি ইত্যাদি। সুতরাং এর বিরুদ্ধে অভিযান করে রেস্তোরা কমাতে হবে, ঝুঁকি কমাতে হবে।
আসলে এ ধরনের কথা আমার কাছে মূল্যহীন মনে হয়। রাজধানী ঢাকায় কেন সবকিছুর এত ঠাসাঠাসি, কেন এক ভবনে এতগুলো রেস্তোরা করতে হলো, এই কথার উত্তর খোঁজা না পর্যন্ত এই সমস্যার কোন সমাধান হবে না।
আসলে যে কোন কিছু সৃষ্টির কারণ চাহিদা। চাহিদার কারণেই যোগান এসেছে, মানে রাজধানীবাসীর চাহিদা থেকেই এত রেস্তোরা তৈরী হয়েছে। যেহেতু রাজধানী ঢাকাতেই সবকিছুই ঠাসাঠাসি, তাই রেস্তোরাগুলো সেভাবে ঠাসাঠাসি ও চাপাচাপি করে গড়ে উঠেছে।
রাজধানীর রেস্তোরা সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে প্রতিদিন সন্ধার পর অথবা ছুটির দিনে অবস্থাটা দেখলে বিষয়টি অনুধাবন করা যায়, কারণ প্রচুর ভীড় থাকে। মানুষের চাহিদা আছে বলে রেস্তোরা মালিকারা সেখানে রেস্তোরা বানাতে চেয়েছে এবং ভবন মালিকরাও সে সুযোগ নিয়ে প্রতি ফ্লোরে ফ্লোরে, ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে এমনকি ছাদেও রুফ টপ রেস্তোরা ভাড়া দিয়েছে।
এখান আপনি যদি মোবাইল কোর্ট বানিয়ে, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে কিংবা রাজউকের লোক দিয়ে ভবন মালিক কিংবা রেস্তোরা মালিকদের ধরপাকড় করেন তবে হয়ত সরকার কিছু রাজস্ব ভাবে কিংবা কিছু ঘুষ বাণিজ্য হবে, এর থেকে বেশি কিছু হবে না। দুইদিন পর হুজুগে বাঙালীর হুজুগ নেমে গেলে কিংবা ইস্যু ঘুরে গেলে আবার আগের মত সব হয়ে যাবে। কোন কিছুই পরিবর্তন হবে না।
আসলে কোন সমস্যা দেখলে হুজুগে তার সমাধান করতে না নেমে সমস্যা তৈরীর কারণ অনুসন্ধান করা উচিত আগে। আপনি যতক্ষণ সমস্যা সৃষ্টির কারণকে সমাধান না করতে পারবেন, ততক্ষণ হাজার বার সমস্যার সমাধান করেও লাভ হবে না।
আসলে রাজধানী ঢাকাতে ঝুকিপূর্ণভাবে এত এত রেস্তোরা তৈরী হওয়ার মূল কারণ ঢাকা একটি অতি-জনবহুল নগরী। এই অতি-জনবহুলতাই সকল সমস্যা ও দুর্ঘটনার মূল কারণ। অগ্নিকা- অনেক এলাকাতেই ঘটে। কিন্তু ঢাকা অতি জনবহুল হওয়ায় অগ্নিকা-সহ যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দুর্ঘটনায় এখানে প্রাণহানী হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেড়ে যায়।
ঢাকা কতটুকু জনবহুল, এটা বুঝতে আসুন একটা হিসেব কষি। সরকারী হিসেবে ঢাকা শহরের আয়তন ২৭০ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২ কোটি ১০ লক্ষ। তাহলে ঢাকা প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা প্রায় ৭৭ হাজার জন। এই জনসংখ্যার অনুপাত যদি পুরো বাংলাদেশে হতো, তবে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা কত হতো? ১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটারের বাংলাদেশের জনসংখ্যা হতো প্রায় ১১৪৩ কোটি, অথচ পৃথিবীর অফিসিয়াল জনসংখ্যা ৭শ’ কোটি প্লাস। অর্থাৎ ঢাকার জনসংখ্যা ঘনত্ব হিসেব করলে মানচিত্রের এক বিন্দু বাংলাদেশের মধ্যে পুরো পৃথিবীর জনসংখ্যার দেড়গুণ ঢুকানো যাবে।
লক্ষ্য করলে দেখবেন, বাংলাদেশে যারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল ও নীতি নির্ধারক তারা কখণই রাজধানীর এই অতি-জনবহুলতা ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নেয়নি। বরং রাজধানীকে ঘিরে আরো রাস্তা, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে বানিয়ে মুড়ির টিনের মত আরো কত ঝাকি দিয়ে মুড়ি বা মানুষ ভর্তি করা যায়, সেই তাল খুজেছে। ঢাকা কেন্দ্রীক উন্নয়ন হওয়াতে মানুষ প্রতিদিন ঢাকাতে প্রবেশ করছে। একটি হিসেব বলে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৫ হাজার নতুন জনসংখ্যা সংযুক্ত হয়। দেখা যাচ্ছে, ঢাকাকে কেন্দ্র করে চর্তুপাশে ব্যাঙের ছাতার মত হাউজিং কোম্পানি তৈরী হচ্ছে এবং তার প্লট বিক্রি করছে। অর্থাৎ ঢাকাকে কেন্দ্র করেই হচ্ছে সবকিছু।
২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এবং বাংলাদেশের টেকসই নগরায়ণ’ শীর্ষক একটি সেমিনার হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছিলো, “আমাদের সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক, এটাই বাস্তবতা। তবে এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ” (তথ্যসূত্র: ঢাকা পোস্ট, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩)
১৩ জানুয়ারী, ২০২৪ তারিখে ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ন: সমস্যা ও সমাধান’ বিষয়ক এক বিশেষ সম্মেলনে ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের চেয়ারম্যান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “ঢাকায় যেভাবে একটি নগরীর মধ্যে সবকিছু কেন্দ্রীভূত হয়েছে, এরকম উদাহরণ আর কোথাও নেই। যে কোনো শহরে জন ঘনত্বের একটা সুবিধা পাওয়া যায়। সেটাকে বলে ‘বেনিফিট অব একোমোডেশন’। সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাছাকাছি থাকলে নাগরিকরা সুবিধা পায়। কিন্ত সেই ঘনত্ব বেশি বেড়ে গেলে তৈরি হয় ডিজঅ্যাডভান্টেজ অব কনজেশন। এবং সেটাই আমরা সবাই দেখতে পাই। ঢাকায় সুবিধার থেকে অসুবিধা অনেক বেশি হয়ে গেছে সেটা আমরা সবাই অনুভব করি। আমরা ঢাকায় যতই উড়াল সেতু বানাই, এলিভেটেড সেতু বানাই, তাতে কোনো লাভ হবে না। ” (তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ২৪, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৪)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুসলমানদের দমিয়ে রাখতেই ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ বুলি
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
এ সকল মুখোশধারীদের আসল পরিচয় অনেকেরই অজানা!
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১০ ব্যক্তি শয়তানের বন্ধু
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যুব সমাজকে খেলাধুলার প্রতি ঝুঁকিয়ে দেয়া একটি ভয়াবহ চক্রান্ত
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, তাহলেই রাজধানী হবে সমস্যামুক্ত
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুলুমতন্ত্র থেকে খালিছ ইস্তিগফার-তওবা করুন
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
উপজাতিদের যেভাবে উস্কানি দিচ্ছে এনজিওগুলো
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হিন্দুদের পূর্বপুরুষরাও একসময় মুসলমান ছিলো
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাবার খাবেন কোথায়?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভারতে মুসলিম নির্যাতনের রক্তাক্ত ইতিহাস, যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
জায়নবাদী ইহুদী পরিকল্পনার গোপন দস্তাবেজ
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিধর্মীরা কখনোই চায়নি, এখনও চায় না মুসলমানদের উন্নতি
১৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)