সুওয়াল-জাওয়াব:
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
, ১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
একইভাবে প্রথমদিকে নামাযের মধ্যে কথা বলা নিষেধ ছিল না, যার কারণে মুছল্লীগণ নামাযের বিষয়ে নামাযরত মুছল্লীদেরকে এবং অন্য বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও কথাবার্তা বলতেন। এখন বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত সেই হাদীছ শরীফ দলীল হিসেবে গ্রহণ করে নামাযে কথা বলা যাবে কি? বললে নামায হবে কি?
এ ধরণের আরো অনেক বিষয়ই রয়েছে যা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রথমদিকে নাজায়িয ও হারাম ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে তা নাজায়িয ও হারাম ঘোষণা করা হয়।
উক্ত বিষয়সমূহের ন্যায় একটি হচ্ছে মূর্তি ও ছবি।
চরম জাহিল ও কাট্টা মুনাফিক ব্যক্তিটি ছবি ও পুতুল সংক্রান্ত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার মানসূখ বর্ণনাসমূহ উল্লেখ করেছে, কিন্তু উনার থেকে ছবি, মূর্তি হারাম হওয়া সংক্রান্ত যে পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ বর্ণিত আছে, তা সে উল্লেখ করেনি। যেমন-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُوْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَنَّهَا اِشْتَرَتْ نُمْرَقَةً فِيْهَا تَصَاوِيْرُ فَلَمَّا رَاٰهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ عَلَى الْبَابِ فَلَمْ يَدْخُلْ فَعَرَفَتْ فِىْ وَجْهِهِ الْكَرَاهِيَّةَ قَالَتْ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَتُوْبُ اِلَى اللهِ وَاِلٰى رَسُوْلِهِ مَا ذَا اَذْنَبْتُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا بَالُ هٰذِهِ النُّمْرَقَةِ قُلْتُ اِشْتَرَيْتُهَا لَكَ لِتَقْعُدَ عَلَيْهَا وَتَوَسَّدَهَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اَصْحَابَ هٰذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ يُقَالُ لَهُمْ اَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ وَقَالَ اِنَّ الْبَيْتَ الَّذِىْ فِيْهِ الصُّوْرَةُ لَا تَدْخُلُهُ الْمَلٰئِكَةُ
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি একটি বালিশ মুবারক ক্রয় করেছিলেন। তাতে ছবি আঁকা ছিল। পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দৃষ্টি মুবারকে এসে পতিত হলে তখন তিনি আর পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ গ্রহণ করলেন না। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বুঝতে পেরে বললেন- ‘আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিকট তওবা করছি। ’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এই বালিশ মুবারক কোথায় পেলেন? তিনি বললেন; আমি এটা এজন্য খরিদ করেছি যাতে আপনি এতে হেলান দিয়ে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যারা এই সমস্ত ছবি অঙ্কন করেছে তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন কঠিন আযাব দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে; তোমরা যাদেরকে সৃষ্টি করেছিলে তাদের জীবিত করো। অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (মুসলিম শরীফ ‘পোশাক ও সৌন্দর্য’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ নং ২৬)
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُوْمِنِيْنَ الثَّالِثَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ حَدَّثَتْهُ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمْ يَكُنْ يَتْرُكُ فِىْ بَيْتِهِ شَيْئَا فِيْهِ تَصَالِيْبُ اِلَّا نَقَضَهُ
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় পবিত্র হুজরা শরীফে (প্রাণীর) ছবিযুক্ত কোনো জিনিসই রাখতেন না। দেখলেই ভেঙ্গে চূর্ণ করে দিতেন। (বুখারী শরীফ: মিশকাত শরীফ)
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُوْمِنيْنَ الثَّالِثَةِ عَلَيْهَا السَّلَام اَنَّهَا كَانَتْ قَدْ اِتَّخَذْتُ عَلٰى سَهْوَةٍ لَّهَا سِتْرًا فِيْهِ تَمَاثِيْلُ فَهَتَكَهُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে অপর একটি বর্ণনা মুবারকে এসেছে যে, একবার তিনি পবিত্র হুজরা শরীফ উনার জানালা মুবারকে একটি পর্দা মুবারক ঝুলিয়ে ছিলেন, যাতে প্রাণীর ছবি ছিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পর্দাটিকে ছিঁড়ে ফেললেন। (মিশকাত শরীফ)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে- খোদ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার বর্ণনা মুবারকে উল্লেখ রয়েছে যে, ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে হারাম।
কাজেই, মূর্তি, ভাস্কর্য, ছবি ইত্যাদি জায়িয সাব্যস্ত করতে হলে উক্ত আহকাম সংক্রান্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মোকাবেলায় আহকাম সংক্রান্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দলীল দিতে হবে। অন্যথায় কস্মিনকালেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা মূর্তি, ভাস্কর্য, ছবি তৈরি করা, আঁকা, তোলা ইত্যাদি হারাম ও কুফরী এবং তার পরিণতি জাহান্নাম এ সংক্রান্ত আহকাম সংক্রান্ত বহু পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বিদ্যমান।
কিন্তু উক্ত চরম জাহিল ও গ-মূর্খ লোকটি মূর্তির পক্ষে আহকাম সংক্রান্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের পরিবর্তে এমনসব দলীল উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে যা তাকে কাট্টা মুনাফিক ও কাট্টা কাফিরে পরিণত করেছে এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে চরম অজ্ঞ, গ-মূর্খ ও আশাদ্দুদ দরজার জাহিল হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের এতসব সুস্পষ্ট দলীল থাকার পরও উক্ত মুসলমান নামধারী কাট্টা মুনাফিক ব্যক্তিটি বলেছে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম নাকি মূর্তির বিরুদ্ধে নয়। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সুওয়াল-জাওয়াব
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ ছবি তোলা এবং ছবি সংরক্ষণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গঃ ঘরের কাজে আহালের ভূমিকা
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ : নামাযের পর ঘুরে বসা
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুওয়াল : নামাজে পুরুষ ও মেয়েদের হাত বাঁধার সুন্নত তরীক্বা কি?
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ: মৃত ব্যক্তিকে দেখানো
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: আহলিয়া বা স্ত্রীকে তালাক দেয়া
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)