সুওয়াল -জাওয়াব :
প্রসঙ্গ গান-বাজনা, সঙ্গীত নাজায়িজ ও হারাম (৩)
, ০৩ রা শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৬ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২০ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা

সুওয়াল:
গান-বাজনা করা কি? কেউ কেউ বলে থাকে, “ইসলামী গান” যেমন- নবীতত্ত, মুর্শীদি, জারী ইত্যাদি জায়িয। কারণ হিসেবে তারা বলে, হযরত সুলত্বানুল হিন্দ খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নাকি গান-বাজনা করেছেন। তারা আরো বলে থাকে যে, বুখারী শরীফ- এর ২য় খ-ের ২২৫ পৃষ্ঠায় এবং ৫ম খ-ের ৫৫৫ পৃষ্ঠায় নাকি “গান-বাজনা” জায়িয বলে লেখা আছে।
সুওয়াল হলো- “গান-বাজনা” সম্পর্কে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা কি? সত্যিই কি হযরত সুলত্বানুল হিন্দ খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “গান-বাজনা” করেছেন? আর বুখারী শরীফ কিতাবের মধ্যে “গান-বাজনা” জায়িয লেখা আছে কি? পবিত্র কুরআন শরীফ এবং সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব (৩য় অংশ):
যারা বলে যে, হযরত সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গান-বাজনা করেছেন, এটা উনার প্রতি চরম মিথ্যা তোহমতের শামিল। কারণ তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ। যিনি সারা জীবন সুন্নত মুবারকের পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন। উনার পক্ষে কি করে হারাম গান-বাজনা করা সম্ভব? বাতিলপন্থী বা বিদয়াতীরা এ ব্যাপারে একটি দলীলও দেখাতে পারবে না।
মূলতঃ হযরত সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সামা পাঠ করেছেন। আর এটাকেই বিদয়াতী, ভন্ড ফক্বীরেরা গান-বাজনা বলে প্রচার করছে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ গান-বাজনার সাথে সামা’র বিন্দুমাত্রও সম্পর্ক নেই।
এ প্রসঙ্গে “ফাওয়ায়েদুল ফুওয়াদ” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, একদা দিল্লীর ৫০০ আলিমের সাথে হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাহাছ হয়। কারণ দিল্লীর কিছু বিদয়াতী আলিম অপবাদ দিয়েছিল যে, হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গান-বাজনা করেন। নাঊযুবিল্লাহ! বাহাছে যখন এ প্রশ্ন উত্থাপন করা হলো তখন হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি কস্মিনকালেও গান-বাজনা করি না। বরং আমি ‘সামা’ করি। আর আমার ‘সামা’ পাঠের শর্ত হচ্ছে-
(১) সেখানে কোন বাদ্য-যন্ত্র থাকবে না,
(২) কোন মহিলা থাকবে না,
(৩) কোন নাবালেগ দাড়ীবিহীন বালক থাকবে না,
(৪) যে ছন্দগুলো পাঠ করা হবে তা শরীয়ত সম্মত হতে হবে,
(৫) পঠিত ছন্দগুলি মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব, মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে আকৃষ্টকারী হতে হবে,
(৬) আর যারা শুনবেন উনাদের সকলকে বুযুর্গ, পরহেজগার ও আল্লাহওয়ালা হতে হবে।
যখন হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ কথা বললেন, তখন দিল্লীর উক্ত আলেমরা উনাকে হক্ব বলে মেনে নিলেন এবং নিজ ভুলের জন্য লজ্জিত হলেন। কাজেই পূর্ববর্তী হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যে সামা পাঠ করেছেন তা এরূপই ছিল। সেই সামা’র সাথে বর্তমানে প্রচলিত জারী বা কাওয়ালীকে তুলনা করা কুফরী ছাড়া কিছু নয়।
প্রতিভাত যে, হযরত সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জীবনে কখনোই গান-বাজনা করেননি। এ ব্যাপারে উনার নামে যারা মিথ্যা তোহমত দেয় তারা চরম ফাসিক এবং কবীরা ও কুফরী গুণাহে গুণাহ্গার। নাঊযুবিল্লাহ!
এরপর যারা বলে যে, বুখারী শরীফ কিতাবের মধ্যে গান-বাজনা জায়িয লেখা আছে, তারা চরম জাহিল, মিথ্যাবাদী ও বেদয়াতী। আর জাহিল বলেই বুখারী শরীফ কিতাবের ৫ম খ- দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে। অথচ মূল বুখারী শরীফ কিতাবের ৫ম খ-ই নেই।
তাদেরকে শুধু এতটুকু বলবেন যে, বুখারী শরীফ কিতাবে যেখানে গান-বাজনা জায়িয বলা হয়েছে সেই অংশটুকু বাংলায় অনুবাদ করে দাও। তবেই তাদের মিথ্যা দলীলের হাক্বীক্বত প্রকাশ পেয়ে যাবে।
মূলতঃ বুখারী শরীফ কিতাবের মধ্যে কোথাও যদি গান-বাজনা জায়িয লেখা থাকতো তাহলে হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “আদাবুল মুফরাদ” কিতাবে গান-বাজনা হারাম বললেন কেন? কাজেই যারা এ ব্যাপারে বুখারী শরীফ কিতাবের দলীল দেয়, তারা চরম জাহিল, মিথ্যাবাদী, বেদয়াতী ও প্রতারক।
মূল কথা হচ্ছে, সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সর্বপ্রকার গান-বাজনা হারাম। এটাকে হালাল বলা কুফরী। হযরত সুলত্বানুল হিন্দ গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জীবনে কখনো গান-বাজনা করেননি। আর বুখারী শরীফ কিতাবের কোথাও গান-বাজনা জায়িয বলা হয়নি।
(দলীলসমূহ: তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে দুররে মানছূর, তাফসীরে মাদারিক, তাফসীরে মায়ালিম, তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে আবী সাউদ, তাফসীরে যাদুল মাছীর, তাফসীরে জালালাইন, বায়হাক্বী শরীফ, দায়লামী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ইরশাদুস্ সারী শরহে বুখারী, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, খুলাছাতুল ফতওয়া, জামিউল ফতওয়া, মুহীত, মুগনী, হিদায়া, তাতারখানিয়া, ফতহুল ক্বাদীর, ফতওয়ায়ে আযীযী ইত্যাদি। )
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৮৮তম সংখ্যা থেকে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নিষিদ্ধ মহিলা জামায়াত নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ছু’দের বিভ্রান্তিকর ও জিহালতী বক্তব্যের জবাব (৮)
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইলমে গইব শান মুবারক (৩)
০৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ সংশ্লিষ্ট সুওয়াল-জাওয়াব (২)
০২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র রোযা সংক্রান্ত জরুরী সুওয়াল-জাওয়াব
০১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ সংশ্লিষ্ট সুওয়াল-জাওয়াব
২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইলমে গইব শান মুবারক (২)
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ “নূর” সম্পর্কিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা (২)
২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ “নূর” সম্পর্কিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা (১)
১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব : প্রসঙ্গ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইলমে গইব শান মুবারক (১)
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দ্বীন ইসলামের বিশেষ রাত সমূহের মধ্যে একটি বিশেষ ফযীলতপূর্ণ রাত ‘পবিত্র শবে বরাত’ (২)
০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: নামাযের মাসায়িল
৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ গান-বাজনা, সঙ্গীত নাজায়িজ ও হারাম (২)
২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)