সুওয়াল-জাওয়াব:
প্রসঙ্গ : নামাযের পর ঘুরে বসা
, ১৪ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২০ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ১৮ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ০২ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সুওয়াল:
আমাদের মসজিদের ইমাম আগে ফজর ও আছরের ফরজ নামাযের পর মুছল্লীদের দিকে ঘুরে মুনাজাত করতেন আর যোহর, মাগরিব ও ইশা’র নামাযের পর না ঘুরে মুনাজাত করতেন। কিন্তু এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর ঘুরে বসেন। বিশেষ করে যোহর, মাগরিব ও ইশা’র ফরয নামাযের পর মুনাজাত শেষ করে অধিকাংশ মুছল্লিদেরকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে বিভিন্ন মাসনূন দোয়া পাঠ করেন। এরপর দু রাকায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামায আদায় করেন। এ বিষয়ে দলীল তলব করলে বুখারী শরীফ থেকে একটি হাদীছ শরীফ পেশ করে । এখন আমার জানার বিষয় হলো- পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর কি ঘুরে বসা সুন্নত? ও যেসব ফরয নামাযের পর সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামায রয়েছে ঐ ফরয নামাযের মুনাজাতের পর কি মাসনূন দোয়া পাঠ বা দেরি করা যাবে? শরীয়তের দলীল সহকারে জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব:
শরীয়তের হুকুম বা ফতওয়া হলো, যেস ব নামাযে ফরযের পর সুন্নতে মুয়াক্কদাহ নামায রয়েছে যেমন- যুহর, জুমুয়াহ, মাগরিব, ইশা সেসব নামাযে ইমাম ছাহেব ফরযের পর মুক্তাদীর দিকে ফিরে বা ঘুরে বসে মুনাজাত করবেন না। বরং ক্বিবলামুখী হয়েই মুনাজাত করবেন। মুনাজাতের পর সাথে সাথে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আদায় করতে হবে। মুনাজাতের পর সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামায না পড়ে মাসনূন দোয়া পাঠ করার জন্য দেরী বা বিলম্ব করা ঠিক হবে না। তা সুন্নত মুবারকের খিলাফ।
আর যেসব নামাযে ফরযের পর সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামায নেই যেমন- ফজর ও আছর সেসব নামাযে ইমাম ছাহেব ফরয নামায শেষে মুক্তাদীর দিকে ঘুরে বসে মুনাজাত করবেন।
কেননা স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেসব ফরয নামাযের পর সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামায নেই সেসব ফরয নামাযে সালাম ফিরানোর পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন অতঃপর দুআ মুবারক করতেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে- হযরত আসওয়াদ আমিরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন, উনার পিতা বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ফজর নামায পড়লাম। যখন তিনি নামায শেষ করে সালাম ফিরালেন তখন তিনি ঘুরে বসলেন এবং উভয় হাত মুবারক উঠিয়ে দুআ (মুনাজাত) মুবারক করলেন। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে- হযরত যায়িদ ইবনে খালিদ জুহানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে নিয়ে হুদায়বিয়াতে ফজরের নামায আদায় করলেন। যখন নামায শেষ করলেন তখন মুছল্লীগণের দিকে ফিরে বসলেন। (বুখারী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে- হযরত সুদ্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, নামায শেষ করার পর কিভাবে মুখ ফিরাবো, আমার ডান দিকে, না বাম দিকে? তিনি বললেন, মূলতঃ আমি অধিকাংশ সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার ডান দিকে ফিরে বসতে দেখেছি। (মুসলিম শরীফ ও নাসায়ী শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহ থেকে প্রতিভাত যে, যেসব ফরয নামাযের পর সুন্নত নামায নেই সেসব নামাযে ইমাম ছাহেব সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসবেন। তবে প্রথম কাতারে যদি মাসবূক মুক্তাদী থাকে তাহলে ইমাম ছাহেব ডান দিকে ফিরে বসবেন। উল্লেখ্য, পরবর্তীতে ফতওয়া দেয়া হয়েছে ডান দিকে ফিরাটাই খাছ সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত। আর ইমাম ছাহেব একজন মুক্তাদী নিয়ে নামায পড়লে সেক্ষেত্রে ইমাম ছাহেবকে পিছনে ফিরতে হবে না। বরং একটু ডান দিকে ফিরে বসবেন অতঃপর দুআ বা মুনাজাত করবেন। এটাই হচ্ছে সম্মানিত শরীয়ত উনার মাসয়ালা। এ মাসয়ালা মুতাবিক প্রত্যেক ইমাম ও মুছল্লীদের আমল করা অপরিহার্য কর্তব্য।
উল্লেখ্য, সুওয়ালকারীর মসজিদের ইমাম বুখারী শরীফ কিতাব থেকে যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে তাতে কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর মুছল্লীদের দিকে ফিরে ইমাম ছাহেবের দুআ করার বিষয়টি বর্ণিত নেই।
কাজেই বুখারী শরীফ থেকে দলীল দিলেই সেটা আমল করতে হবে, তা নয়। কারণ বুখারী শরীফ কিতাবে অনেক হাদীছ মওজু বা জাল রয়েছে। যা মোটেও অনুসরণযোগ্য ও আমলযোগ্য নয়। আমলের ক্ষেত্রে ফিক্বাহের কিতাব অনুসরণীয়। অর্থাৎ মাজহাব অনুসরণ করতে হবে।
দলীলসমূহ: বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ফতহুল বারী, তাইসিরুল ক্বারী, মাআরিফে মাদানিয়াহ, তাহতাবী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ফতহুল মুলহিম, শামী, কবীরী, দুররুল মুখতার, শরহে মুনিয়া, তাতারখানিয়া, খুলাছা, নূরুদ্দিরায়া, শরহে হিদায়া ইত্যাদি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সুওয়াল-জাওয়াব
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ ছবি তোলা এবং ছবি সংরক্ষণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গঃ ঘরের কাজে আহালের ভূমিকা
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সুওয়াল : নামাজে পুরুষ ও মেয়েদের হাত বাঁধার সুন্নত তরীক্বা কি?
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ: মৃত ব্যক্তিকে দেখানো
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: আহলিয়া বা স্ত্রীকে তালাক দেয়া
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)