মন্তব্য কলাম
প্রসঙ্গ: সেবা পেতে ঘুষকে স্বাভাবিক মনে করছে দেশের সিংহভাগ মানুষ। বছরে ঘুষ গ্রহণের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ঘুষই সমাজে সব অভাব থেকে অনিয়মের মূল কারণ। ঘুষ নির্মূলীকরণে পবিত্র দ্বীন ইসলামী আদর্শের প্রতিফলন ব্যতীত কোনো বিকল্প নেই
, ২৯ শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০২ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ১৬ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মন্তব্য কলাম
সম্প্রতি প্রকাশিত টিআইবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি সেবা পেতে ৭১ শতাংশ খানা (পরিবার) দুর্নীতির শিকার হচ্ছে। তারা গড়ে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকা ঘুষ দিয়ে থাকে। বিগত বছরে দেশে ঘুষ দেওয়ার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।
মোট ১৭টি সেবা খাতে এ ঘুষের টাকা দিয়েছে সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা (৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ), এরপর পাসপোর্ট অধিদপ্তর (৭০ শতাংশ)। এ ছাড়া বিআরটিএ, বিচারিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও ভূমিসেবায়ও দুর্নীতির মাত্রা বেশি। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭২ দশমিক ১ শতাংশ মনে করে, ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। তারা ঘুষ দেয় হয়রানি বা ঝামেলা এড়াতে। আবার তাদের একটা বড় অংশ ঘুষ দিতে হলেও অভিযোগ করে না বিড়ম্বনার ভয়ে। যেখানে বেশি বয়সী মানুষের সহজে সেবা পাওয়ার কথা, তারা বেশি হয়রানির শিকার হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সরকারি সেবা বা বেসরকারি সেবা সবক্ষেত্রেই ঘুষ বিরাজমান। ঘুষের বিরুদ্ধে যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লড়বে সেই খোদ বাহিনীই ঘুষের সাথে জড়িত। টিআইবি পরিচালিত জরিপেও দেখা গেছে, সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং এ খাতে খানা প্রতি ঘুষ প্রদানের হার শতকরা ৭২ দশমিক ৫ ভাগ। সংস্থাটির কাছ থেকে সেবা নিতে গিয়ে গড়ে প্রতিটি খানাকে ৬ হাজার ৯৭২ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। পাসপোর্ট পাওয়া নাগরিকের অধিকার। কিন্তু টিআইবি জরিপ বলছে, এ অধিকার পেতে খানা প্রতি ঘুষ প্রদানের হার ছিল শতকরা ৬৭ দশমিক ৩ ভাগ। এ খাতে খানাপ্রতি গড় ঘুষের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৮১ টাকা। অন্যদিকে, বিচারিক সেবা (৬০ দশমিক ৫ শতাংশ), ভূমিসেবা (৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ), শিক্ষা (সরকারি ও এমপিওভুক্ত) (৪২ দশমিক ৯ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্য (৪২ দশমিক ৫ শতাংশ)।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা উত্তর এদেশে ঘুষ গ্রহণের হার প্রতিবছরই বাড়ছে। বাংলাদেশ দন্ডবিধিতে ১৬১ ধারায় ঘুষের শাস্তি ৩ বৎসর পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ সালের ৫ নং আইনের ১ ও ২ উপধারা এবং কাস্টমস এ্যাক্ট ১৯৬৯-এর ৮১ ও ৮২ ধারায় ঘুষের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। কিন্তু এতসব আইনের পরও দেশে ঘুষের প্রচলন কমেনি বরং উল্টো জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। প্রতিভাত হচ্ছে, প্রচলিত আইন তথা প্রচলিত ব্যবস্থায় আরো শক্ত আইন করলেও ঘুষ বন্ধ করা সম্ভব নয়।
ঘুষ মূলতঃ তখনই বন্ধ করা যাবে, যখন ঘুষের বিপরীতে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার অর্থের পরিবর্তে চিরস্থায়ী দুনিয়ার আযাব-গযব, জাহান্নামের আগুন তথা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অসন্তুষ্টির কথা মুবারক বিশ্বাস করানো যাবে। ঘুষ সম্পর্কিত পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আদেশ নিষেধ মুবারক উনার বাণী জানানো ও বুঝানো যাবে।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঘুষ প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক করেন- “তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না এবং মানুষের সম্পত্তির কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যায়রূপে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের ঘুষ দিও না। ” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৮)
পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৮ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে মানবজাতি, জমিনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে, তা থেকে তোমরা হালাল ও পবিত্র বস্তুসমূহ খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, কেননা সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ”
ঘুষের নিকৃষ্টতা সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনেক হাদীছ শরীফ মুবারক রয়েছে। তিনি উম্মতকে ঘুষের ভয়াবহতা সম্পর্কে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “ঘুষ দাতা-গ্রহীতা উভয়কেই অভিসম্পাত করেছেন। ” (পবিত্র তিরমিযি শরীফ ও পবিত্র আবু দাউদ শরীফ)
হযরত আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, “যে সমাজে জেনা-ব্যভিচার, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে অথচ এর কোন বিচার হয় না। সেই সমাজ দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে নিপতিত না হয়ে পারে না। আর যে সমাজে ঘুষের কারবার ছড়িয়ে পড়ে সে সমাজে ভীতি ও সন্ত্রাস সৃষ্টি না হয়ে পারে না। ” (পবিত্র মুসনাদে আহমদ)।
প্রতিভাত হচ্ছে যে, ঘুষ শুধু ঘুষ দাতা ও গ্রহীতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এটার কারণেই গোটা সমাজে অভাব থেকে আরম্ভ করে সব অনিয়মই বিরাজ করে। ঘুষ একটি সামাজিক ব্যাধি। এর বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধ তথা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মূল্যবোধ বিস্তারের কোনো বিকল্প নেই। সঙ্গতকারণেই তাই বলতে হয়, রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র ইসলাম উনার দেশ বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি ঘুষ সম্পর্কিত পবিত্র দ্বীন ইসলামী আদর্শের প্রতিফলন ঘটাতে পারবে তত তাড়াতাড়ি সব অভাব-অনটন-অনিয়ম অরাজকতা থেকে উত্তরণ লাভ করতে পারবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খাবারের নামে আমরা কী খাচ্ছি? ভেজাল খাবারে দেশব্যাপী চলছে নীরব গণহত্যা। ভেজাল দমনে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার রোবে, দোয়ার বরকতে- কুদরতীভাবে কমে যাচ্ছে ডলারের আধিপত্য বাংলাদেশের রিজার্ভ ডলারে রাখা উচিৎ নয়- এতে লাভ আমেরিকার মুসলিম বিশ্বে অভিন্ন মুদ্রা ব্যবস্থা বিশেষত মূল্যহীন কাগজী মুদ্রা বাদ দিয়ে সুন্নতী দিনার-দিরহাম মুদ্রা চালু করা আবশ্যক ইনশাআল্লাহ (চতুর্থ পর্ব)
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নারীরা এখন প্রকাশ্যে সিগারেট থেকে সব ধরণের মাদক সেবন ও বিকি-কিনিতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। রক্ষা পেতে নারীদের জন্য সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার বিকল্প নেই
০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নির্মূলে দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান
৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে নাটক-সিনেমা করা ও দেখা হারাম- ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তা মানে না। ভারতীয় অপরাধমূলক টিভি সিরিজ দেখে হত্যা, ব্যাংক ডাকাতি, পরকিয়ার মতো অপরাধ আয়ত্ত্ব করছে দেশবাসী। কিন্তু নাটক-সিনেমার ভয়াবহ কুফল রাষ্ট্র অস্বীকার করতে পারছে না। ডিশ এন্টেনার প্রসারে হিন্দি সিরিয়ালের কুপ্রভাবে দেশ জাতি বিপর্যস্ত।
২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রতারণার ফাঁদে নাগরিক জীবন। সরকারের নজরদারী নেই। রকমফের প্রতারণা বন্ধে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বিস্তারের বিকল্প নেই।
২৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আলোকে- সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের বেমেছাল ফযীলত মুবারক বর্ণনা।
২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আইএমএফের শর্তে রাজস্ব আহরণে চাপ সৃষ্টি করছে সরকারের অর্থ বিভাগ পৃথিবীর অন্যসব দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও অতীত থেকে এযাবত পর্যন্ত আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে জনগণের চরম দুর্ভোগ বৃদ্ধি এবং দেশের বড় ক্ষতি ছাড়া কোনোই লাভ হয় নি
২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: ভয়ঙ্কর জেদ, মহা দাম্ভিকতা, চরম সীমালঙ্ঘন, প্রতিহিংসা, ক্ষমতা কুক্ষিগত করা ইত্যাদি কুরিপুর কারণে সরকারের পতন কিন্তু কুরিপুর সংজ্ঞা, প্রতিকার, পরিশুদ্ধির প্রক্রিয়ার বর্ণনা সংবিধানে তথা রাষ্ট্রীয় কোন কিতাবে নেই তাহলে রাষ্ট্রের সংস্কার হবে কীভাবে? নাগরিক সুরক্ষা হবে কেমনে?
২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে না অনলাইন জুয়া-বেটিং-ক্যাসিনো মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়া কাজে আসছে না বিটিআরসির কলা-কৌশল নিয়ন্ত্রণ প্রায় অসম্ভব, বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবনেই জুয়া বন্ধ সম্ভব (পর্ব-১)
২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলার বুকে নতুন ইসরাইল সৃষ্টির পাঁয়তারা। আলাদা জুম্মল্যান্ড বানানোর গভীর ষড়যন্ত্র। তৈরি করছে আলাদা মানচিত্র ও নিজস্ব মুদ্রা। অবিলম্বে সবকিছু নস্যাৎ করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারকেই। সে সাথে সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে গোটা দেশবাসীকে (পর্ব-১)
২২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
কাদিয়ানীদের মালিকানায় প্রাণ গ্রুপসহ বৃহৎ শিল্পগ্রুপগুলো দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে পথে বসানোর ষড়যন্ত্র করছে। অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। সরকারের আশু পদক্ষেপ কাম্য।
২১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)