মন্তব্য কলাম
প্রসঙ্গ: সেবা পেতে ঘুষকে স্বাভাবিক মনে করছে দেশের সিংহভাগ মানুষ। বছরে ঘুষ গ্রহণের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ঘুষই সমাজে সব অভাব থেকে অনিয়মের মূল কারণ।
ঘুষ নির্মূলীকরণে পবিত্র দ্বীন ইসলামী আদর্শের প্রতিফলন ব্যতীত কোনো বিকল্প নেই
, ২৯ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৫ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ০২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৭ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মন্তব্য কলাম
সম্প্রতি প্রকাশিত টিআইবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি সেবা পেতে ৭১ শতাংশ খানা (পরিবার) দুর্নীতির শিকার হচ্ছে। তারা গড়ে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকা ঘুষ দিয়ে থাকে। বিগত বছরে দেশে ঘুষ দেওয়ার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।
মোট ১৭টি সেবা খাতে এ ঘুষের টাকা দিয়েছে সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা (৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ), এরপর পাসপোর্ট অধিদপ্তর (৭০ শতাংশ)। এ ছাড়া বিআরটিএ, বিচারিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও ভূমিসেবায়ও দুর্নীতির মাত্রা বেশি। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭২ দশমিক ১ শতাংশ মনে করে, ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। তারা ঘুষ দেয় হয়রানি বা ঝামেলা এড়াতে। আবার তাদের একটা বড় অংশ ঘুষ দিতে হলেও অভিযোগ করে না বিড়ম্বনার ভয়ে। যেখানে বেশি বয়সী মানুষের সহজে সেবা পাওয়ার কথা, তারা বেশি হয়রানির শিকার হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সরকারি সেবা বা বেসরকারি সেবা সবক্ষেত্রেই ঘুষ বিরাজমান। ঘুষের বিরুদ্ধে যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লড়বে সেই খোদ বাহিনীই ঘুষের সাথে জড়িত। টিআইবি পরিচালিত জরিপেও দেখা গেছে, সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং এ খাতে খানা প্রতি ঘুষ প্রদানের হার শতকরা ৭২ দশমিক ৫ ভাগ। সংস্থাটির কাছ থেকে সেবা নিতে গিয়ে গড়ে প্রতিটি খানাকে ৬ হাজার ৯৭২ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। পাসপোর্ট পাওয়া নাগরিকের অধিকার। কিন্তু টিআইবি জরিপ বলছে, এ অধিকার পেতে খানা প্রতি ঘুষ প্রদানের হার ছিল শতকরা ৬৭ দশমিক ৩ ভাগ। এ খাতে খানাপ্রতি গড় ঘুষের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৮১ টাকা। অন্যদিকে, বিচারিক সেবা (৬০ দশমিক ৫ শতাংশ), ভূমিসেবা (৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ), শিক্ষা (সরকারি ও এমপিওভুক্ত) (৪২ দশমিক ৯ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্য (৪২ দশমিক ৫ শতাংশ)।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা উত্তর এদেশে ঘুষ গ্রহণের হার প্রতিবছরই বাড়ছে। বাংলাদেশ দন্ডবিধিতে ১৬১ ধারায় ঘুষের শাস্তি ৩ বৎসর পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ সালের ৫ নং আইনের ১ ও ২ উপধারা এবং কাস্টমস এ্যাক্ট ১৯৬৯-এর ৮১ ও ৮২ ধারায় ঘুষের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। কিন্তু এতসব আইনের পরও দেশে ঘুষের প্রচলন কমেনি বরং উল্টো জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। প্রতিভাত হচ্ছে, প্রচলিত আইন তথা প্রচলিত ব্যবস্থায় আরো শক্ত আইন করলেও ঘুষ বন্ধ করা সম্ভব নয়।
ঘুষ মূলতঃ তখনই বন্ধ করা যাবে, যখন ঘুষের বিপরীতে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার অর্থের পরিবর্তে চিরস্থায়ী দুনিয়ার আযাব-গযব, জাহান্নামের আগুন তথা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অসন্তুষ্টির কথা মুবারক বিশ্বাস করানো যাবে। ঘুষ সম্পর্কিত পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আদেশ নিষেধ মুবারক উনার বাণী জানানো ও বুঝানো যাবে।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঘুষ প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক করেন- “তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না এবং মানুষের সম্পত্তির কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যায়রূপে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের ঘুষ দিও না। ” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৮)
পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৮ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে মানবজাতি, জমিনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে, তা থেকে তোমরা হালাল ও পবিত্র বস্তুসমূহ খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, কেননা সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ”
ঘুষের নিকৃষ্টতা সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনেক হাদীছ শরীফ মুবারক রয়েছে। তিনি উম্মতকে ঘুষের ভয়াবহতা সম্পর্কে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “ঘুষ দাতা-গ্রহীতা উভয়কেই অভিসম্পাত করেছেন। ” (পবিত্র তিরমিযি শরীফ ও পবিত্র আবু দাউদ শরীফ)
হযরত আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, “যে সমাজে জেনা-ব্যভিচার, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে অথচ এর কোন বিচার হয় না। সেই সমাজ দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে নিপতিত না হয়ে পারে না। আর যে সমাজে ঘুষের কারবার ছড়িয়ে পড়ে সে সমাজে ভীতি ও সন্ত্রাস সৃষ্টি না হয়ে পারে না। ” (পবিত্র মুসনাদে আহমদ)।
প্রতিভাত হচ্ছে যে, ঘুষ শুধু ঘুষ দাতা ও গ্রহীতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এটার কারণেই গোটা সমাজে অভাব থেকে আরম্ভ করে সব অনিয়মই বিরাজ করে। ঘুষ একটি সামাজিক ব্যাধি। এর বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধ তথা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মূল্যবোধ বিস্তারের কোনো বিকল্প নেই। সঙ্গতকারণেই তাই বলতে হয়, রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র ইসলাম উনার দেশ বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি ঘুষ সম্পর্কিত পবিত্র দ্বীন ইসলামী আদর্শের প্রতিফলন ঘটাতে পারবে তত তাড়াতাড়ি সব অভাব-অনটন-অনিয়ম অরাজকতা থেকে উত্তরণ লাভ করতে পারবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইতিহাসের নিরীখে, বর্তমান সংবিধান প্রণেতা গণপরিষদেরই কোন আইনী ভিত্তি বা বৈধতা ছিল না। গত ৫৪ বৎসর দেশবাসীকে যে অবৈধ সংবিধানের অধীনে বাধ্যগত করে রাখা হয়েছিলো এর প্রতিকার দিবে কে? ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের দ্বীন ইসলামের প্রতিফলন ব্যাতীত কোন সংবিধানই বৈধ হতে পারে না কারণ দেশের মালিক ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বাধীনতার বয়স ৫৪ বছরে দেশ জাতি- ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, সামরিক সরকার, জাতীয়তাবাদী সরকার, স্বৈরাচার সরকার, তত্তাবধায়ক সরকার, কথিত ফ্যাসিস্ট বা মাফিয়া সরকারের পর নতুন অন্তবর্তী সরকারের’ আবর্তে জনতার না চেয়ে শুধু ছাত্র সমন্বয়কদের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে বর্তমান উপদেষ্টা সরকার প্রতিষ্ঠা করে- কথিত অন্তর্বর্তী সরকারকে জন্মগতভাবে বৈষম্যম-িত করা হয়েছে
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও বাংলাদেশে লিভ টুগেদারের স্রোত শুরু হয়েছে। লিভ টুগেদার কালচার ঠেকানোর নৈতিক ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নেই। লিভ টুগেদার সমাজে যে ভয়াবহ ক্রাইম তৈরী করছে তা প্রতিহত করতে ইসলামী অনুশাসনের বিকল্প নেই।
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাজারে ভয়ংকর ঘন চিনি মিথ্যা ঘোষণায় আসছে আমদানি নিষিদ্ধ ঘন চিনি পুরুষত্বহানি, মূত্রাশয়ে ক্যান্সারের তথা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর এই ঘন চিনি বন্ধে সরকারকে এখনি জিহাদ ঘোষণা করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সমাজের স্রোত বা সময়ের সাথে আপোসকারীরা উলামায়ে হক্ব নয়। ইসলামী আহকাম ও আন্দোলন পদ্ধতি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় না। ইবনুল ওয়াক্ত নয়; কেবলমাত্র আবুল ওয়াক্ত উনারাই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ত্রাণকর্তা ও অনুসরণীয়।
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ডিজিটালাইজেশনের নামে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের ইন্টারনেট জগতে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শিশু-কিশোররা আক্রান্ত হচ্ছে অশ্লীলতায়। শিখছে অনৈতিকতা, বেহায়াপনা, হিংস্রতা।
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রোগের খনি সাদা চিনি! বিপরীতে ব্র্যান্ডিং, যথাযথ প্রচারণার অভাবে অবহেলায় উপকারি দেশীয় লাল চিনি সরকারের উচিত, লাল চিনিকে বাজারসুলভ করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা।
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা গবেষণার দিকে আগ্রহী না হয়ে বিসিএস পরীক্ষায় আগ্রহী হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তহবিল বা অর্থায়ন আসার প্রক্রিয়াটি সরকারের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে হবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক স্থাপন হয়নি
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কাদিয়ানীদের মালিকানায় প্রাণ গ্রুপসহ বৃহৎ শিল্পগ্রুপগুলো দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে পথে বসানোর ষড়যন্ত্র করছে। অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। সরকারের আশু পদক্ষেপ কাম্য।
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে- সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কতিপয় ফযীলত মুবারক বর্ণনা
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও চরাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যর উন্নয়ন হয়নি
২৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অধিকাংশ টিকাই মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যুক্ত তথাকথিত করোনার টিকার ভয়াবহ ক্ষতি এখন সারা বিশ্বে বহুল আলোচিত
২৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)