প্রসঙ্গ: প্রতি বছর নষ্ট হয় ৫০ হাজার কোটি টাকার খাবার ও খাদ্য শস্য খাদ্য অপচয় রোধ করতে ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই’-
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এই নির্দেশ সমাজের সর্বাত্মক প্রতিফলন ব্যতীত কোনো বিকল্প নেই।
, ২৫ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৯ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মন্তব্য কলাম
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “বিনা প্রয়োজনে গাছের একটি পাতাও ছিঁড়ো না।” পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এমনও ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “অযু করতে গিয়ে নদীর পানিও বিনা প্রয়োজনে ব্যবহার করা জায়িয নেই।” বলাবাহুল্য, কাফির-মুশরিকদের মধ্যে এই শিক্ষা নেই।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে দীর্ঘদিন বাবুর্চির কাজ করেন দিদার আলম। মাসে অন্তত ১২-১৫টি বিয়ের অনুষ্ঠানে রান্নার ডাক পড়ে তার। প্রতি অনুষ্ঠানে অতিথি থাকে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ পর্যন্ত। দিদারের মতে, এক হাজার জনের একটি অনুষ্ঠানে কমপক্ষে ২০০ জন মানুষের খাবার নষ্ট হয়। মাথাপিছু এ খাবারের মূল্য ৫০০ টাকা ধরলে নষ্ট হওয়া মোট খাবারের দাম দাঁড়ায় ১ লাখ টাকা। এভাবে মাসে গড়ে ১০টি অনুষ্ঠান ধরে হিসাব করলে শুধু সূচনা কমিউনিটি সেন্টারেই মাসিক খাদ্য নষ্টের আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ১০ লাখ টাকা।
এই তো গেল কমিউনিটি সেন্টারের সামাজিক অনুষ্ঠানের কথা। ঢাকার অভিজাত হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও ক্লাবগুলোর অবস্থা জানতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেওয়া হয়। কিন্তু খাবার নষ্টের তথ্য সংবাদমাধ্যমে দিতে কেউই রাজি হয়নি। অনেক চেষ্টার পর পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক কথা বলে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। সে জানায়, রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খাবার নষ্ট হয় খুবই সীমিত। যা হয় ভোক্তাপর্যায়ে। বুফে পদ্ধতির কারণে এসব রেস্টুরেন্টে খাবারের তিন ভাগের এক ভাগই নষ্ট করে ফেলে ভোক্তারা। দৈনিক যার আর্থিক মূল্য কমপক্ষে ৪-৫ হাজার টাকা।
বছরে কমিউনিটি সেন্টারে প্রায় ৬ কোটি টাকার খাদ্য নষ্ট : রাজধানীতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মালিকানায় কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে ৪৯টি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩টি। ঢাকা মহানগর কমিউনিটি সেন্টার মালিক সমিতির হিসাবে রাজধানীতে বেসরকারি কমিউনিটি সেন্টারের সংখ্যা প্রায় ১৫০টি। সামাজিক অনুষ্ঠানে কীভাবে খাদ্য নষ্ট হয় তার একটি উদাহরণ দিয়েছে ধানমন্ডির সাইয়েদানা কমিউনিটি সেন্টারের সুপারভাইজার গোলাম কবির। সে জানায়, স্বাভাবিক সময়ে মাসে অন্তত ১৫-২০টি বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। কমিউনিটি সেন্টারে নিম্ন, মাঝারি ও উচ্চ এ তিন ক্যাটাগরির খাদ্য তৈরি হয়। মাঝারি মানের মাথাপিছু খাবারের ব্যয় থাকে ৫২০-৫৫০ টাকা। গড়ে ১০টি করে অনুষ্ঠান ধরলে ২০০টি কমিউনিটি সেন্টারে মাসে অনুষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার। প্রতি অনুষ্ঠানে গড়ে ৪০০ করে অতিথি থাকলে এ সংখ্যা হয় আট লাখ। ৪০০ জনের অনুষ্ঠানে ৫০ জন মানুষের খাবার নষ্ট হলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার। এবার ১০ হাজার মানুষের মাথাপিছু ওই খাবারের মূল্য গড়ে ৫০০ টাকা ধরলে এর দাম দাড়ায় ৫০ লাখ টাকা। বছরে যা হয় ৬ কোটি টাকা।
২০২১ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইউনেপ ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে বছরে এক কোটি ৬ লাখ টন খাদ্য অপচয় হয়। মাথাপিছু খাদ্য অপচয়ের হারও বাংলাদেশে অনেক বেশি।
ইউনেপের ওই ইনডেক্স অনুযায়ী একজন বাংলাদেশি বছরে ৬৫ কেজি খাদ্য উপাদান কিংবা তৈরি খাদ্য নষ্ট করেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে চাল উৎপাদিত হয় প্রায় তিন কোটি ৮৬ লাখ মেট্রিক টন।
এর মধ্যে মানুষের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় আড়াই কোটি মেট্রিক টনের মতো। বাকিটা বীজ, পশুখাদ্যসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়। আমরা বছরে যে দুই কোটি ৫২ লাখ টন চাল খাবার হিসেবে গ্রহণ করি, তার মধ্যে ৫.৫ শতাংশ অসচেতনতা ও বিলাসিতার কারণে গৃহস্থালি পর্যায়ে অপচয় হয়। যার পরিমাণ অন্তত ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টন। এর মধ্যে খাদ্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি (চাল ধোয়া, রান্না ইত্যাদি) পর্যায়ে ৩ শতাংশ বা সাত লাখ ৫৬ হাজার টন এবং পরিবেশন ও প্লেট পর্যায়ে ২.৫ শতাংশ বা ছয় লাখ ৩০ হাজার টন অপচয় হয়। সরকারি হিসাবে জনপ্রতি দৈনিক চালের ভোগ ৪০৫ গ্রাম। সেই হিসাবে গৃহস্থালি পর্যায়ের অপচয় রোধ হলে প্রায় ৯৪ লাখ মানুষের সারা বছরের ভাতের চাহিদা পূরণ হতো। আর শুধু খাবার টেবিলের অপচয় রোধ হলেই ৪২ লাখ ৬২ হাজার মানুষের সারা বছরের ভাতের চাহিদা মিটত।
বিনা'র গবেষণার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে পেঁয়াজে ২০-২৫ শতাংশ, আমে ৩০-৩৫ শতাংশ, কলা, পেপে, পেয়ারা ও লিচুতে ২৫-৩০ শতাংশ, চালে ৮-৯ শতাংশ, ডালে ৬-৭ শতাংশ, আলুতে ১০ শতাংশ এবং আদায় পোস্ট-হার্ভেস্ট লস ৫-৭ শতাংশ। এই ১০টি পণ্যের বছরে মোট উৎপাদন হয় ৫২ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন। আর পোস্ট-হার্ভেস্ট লস হচ্ছে ৫ দশমিক ১৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়, শাকসবজি ও ফলমূলে ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৪৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সারা পৃথিবীতেই উৎপাদিত খাদ্যের বিরাট একটা অংশ নষ্ট ও অপচয় হয়।
প্রসঙ্গত, খাদ্যশস্যের অপচয় দেশের প্রবৃদ্ধিকে খেয়ে ফেলছে। অপচয়ের মাধ্যমে আমরা মানুষের অধিকার ও খাদ্য নিরাপত্তাকে বাধাগ্রস্ত করছি। এ ধরনের অপচয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি, খাদ্য অধিকারকেও বঞ্চিত করছে। সার্বিকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে পুষ্টি নিরাপত্তাকে। আর দেশের অর্থ ও সম্পদের অপচয়ও হচ্ছে। দরিদ্রতা থেকে মানুষকে উন্নতির যে পরিকল্পনা সেটিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে খাদ্যের অপচয় রোধে রাষ্ট্রের উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। শস্য সংরক্ষণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে ছোট ছোট প্রযুক্তি দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর কৃষকের ভর্তুকি বাড়াতে হবে।
দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ব্যবস্থাপনা, খাদ্যশস্যের সহজলভ্যতা এবং নীতি ও কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা। খাদ্যের অপচয়ের কারণে খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় হুমকি হচ্ছে। পণ্যের দাম বাড়ছে। তাই খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। পাশাপাশি সরকারের ভর্তুকি কার্যক্রমে প্রযুক্তির দিকে আরও জোর দিতে হবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত খলীফাতুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার অনবদ্য তাজদীদ ‘আত-তাক্বউইমুশ শামসী’ সম্পর্কে জানা ও পালন করা এবং শুকরিয়া আদায় করা মুসলমানদের জন্য ফরয। মুসলমান আর কতকাল গাফিল ও জাহিল থাকবে?
০৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নির্মূলে দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান
০৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নির্মূলে দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান
০৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ : কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা ও ক্বিয়ামতের তথ্য
০৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের বাজার ৪০ ট্রিলিয়ন ডলার। সুবিশাল এই বাজারে প্রবেশে অনেকটাই ব্যর্থ বাংলাদেশ। মান নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নত পণ্য ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশও এই সুবিশাল বাজার ধরতে পারে
০২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ: শিশুদের জন্য ইন্টারনেট নিরাপদ করতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল গাইড লাইন তৈরি করছে সরকার নিয়ন্ত্রনহীন ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করে অশ্লীলতা, হিংস্রতা ও অপসংস্কৃতিতে লিপ্ত হচ্ছে শিশু কিশোররা
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নারীরা এখন প্রকাশ্যে সিগারেট থেকে সব ধরণের মাদক সেবন ও বিকি-কিনিতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। রক্ষা পেতে নারীদের জন্য সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার বিকল্প নেই
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বাংলাদেশের শিক্ষার মান ক্রমশই নিম্নমুখী। সার্টিফিকেট ও মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রতে পরিণত হচ্ছে শিক্ষা। কর্মমূখী ও বাস্তবিক শিক্ষার অভাবে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠছে না বাংলাদেশে। সরকারের উচিত, এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘মানুষ বাড়ে কিন্তু জমি বাড়ে না’- এ ধারণা মহাভুল। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতে বাংলাদেশের জমি বাড়ছে। বাংলাদেশের পাশে জেগে উঠছে আরেক বাংলাদেশ।
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গঃ সম্মানিতা হুর, গেলমানের আলোচনায় কুণ্ঠা। তার বিপরীতে অশ্লীল শব্দ আওড়াতে স্বতঃস্ফূর্ততা
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দেশের ৮২ শতাংশ উচ্চ মেধাবী তরুণ উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দিয়ে আর ফিরছে না। পাশাপাশি বিদেশে পড়াশোনার নামে অর্থও দেদারছে পাচার হচ্ছে। বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রী এনে দেশের জন্য যারা কাজ করতে চান তাদের জন্য নেই কোনো সুযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা।
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম অন্যান্য ধর্মের সাথে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সহাবস্থানে থাকতে পারে না। পবিত্র দ্বীন ইসলাম কখনোই কথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র অধীন হতে পারে না।
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)