প্রসঙ্গ: প্রতি বছর নষ্ট হয় ১৩০ কোটি টন খাবার! খাদ্য অপচয় রোধ করতে ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই’-
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এই নির্দেশ সমাজের সর্বাত্মক প্রতিফলন ব্যতীত কোনো বিকল্প নেই।
, ১৪ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মন্তব্য কলাম
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “বিনা প্রয়োজনে গাছের একটি পাতাও ছিঁড়ো না।” পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এমনও ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “অযু করতে গিয়ে নদীর পানিও বিনা প্রয়োজনে ব্যবহার করা জায়িয নেই।” বলাবাহুল্য, কাফির-মুশরিকদের মধ্যে এই শিক্ষা নেই।
জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) প্রচারিত এক তথ্যে জানিয়েছে, ‘বিশ্বে প্রতি বছর ১৩০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয়। অথচ বিশ্বে একশ কোটিরও বেশি মানুষ প্রতিদিন অভুক্ত অবস্থায় বহু রাত কাটায়। খাদ্য অপচয়ের বদঅভ্যাস এবং সরবরাহ চেইনে অদক্ষতার কারণে এ বিপুল পরিমাণ খাদ্য মানুষের কোনো কাজে আসছে না।’ ফাও’র পক্ষে সুইডিশ ইনস্টিটিউট ফর ফুড অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি এ জরিপ করে। ফাও’র প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যাসের কারণে এবং উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণের সময় ব্যাপক পরিমাণ খাদ্য বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, শুধু উন্নত দাবিদার দেশগুলোতে নয়; কথিত উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও বিপুল পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হয়। কিন্তু এর মূল কারণ অভ্যাস নয়, এখানে মূল কারণ দুর্বল অবকাঠামো। অর্থাৎ গুদামজাতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মোড়কীকরণের মতো সুবিধার অপ্রতুলতা।
ফাও’র প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য নষ্ট হওয়ার কারণে একদিকে যেমন ক্ষুদ্র কৃষক তার ন্যায্য মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়; অন্যদিকে গরিব ভোক্তাদের তুলনামূলক বেশি দামে তা কিনতে হয়। ফাও’র প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ধনী দেশগুলোর ভোক্তারা বছরে ২২ কোটি টন খাদ্য নষ্ট করছে, যা সাব-সাহারান আফ্রিকার এক বছরের প্রকৃত উৎপাদনের সমান। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ভোক্তাপ্রতি খাদ্য নষ্টের পরিমাণ বছরে ৯৫ কেজি থেকে ১১৫ কেজির মতো। এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায় এর পরিমাণ ৬ থেকে ১১ কেজি। গবেষণায় দেখা গেছে, ভোক্তারা ফল ও সবজি নষ্ট করছে সবচেয়ে বেশি।
ফাও’র প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে প্রতিবছর উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই অপচয় বা নষ্ট হয়। সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, বিশ্বের উন্নত দাবিদার দেশে ও কথিত উন্নয়নশীল দেশে খাদ্য অপচয় হওয়ার হার বা প্রবণতা প্রায় কাছাকাছি। ফাও’র মতে, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর যে পরিমাণ মানুষ খাদ্যাভাবে থাকে, এর চেয়েও অনেক বেশি খাবার অপচয় হয়। জানা গেছে, বুভুক্ষু মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় ৯২ কোটি ৫০ লাখ। তারপরও নষ্ট বা অপচয় হয় ১৩০ কোটি টনেরও অধিক খাদ্য। অপচয় হওয়া এ পরিমাণ খাদ্যের দাম অনেক।
আরো দুঃখজনক খবর হলো, বিশ্বে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়, অপচয় হওয়া খাদ্যের পরিমাণ এর অর্ধেকের কাছাকাছি বা কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে বছরে অপচয় হয় প্রায় ৬৭ কোটি টন খাদ্য। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর পরিমাণ প্রায় ৬৩ কোটি টন। ফাও এ তথ্য জানায়।
উল্লেখ্য, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে প্রতিবছর খাদ্য উৎপাদন হয় প্রায় ২৩ কোটি টন। ফাও’র প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, বছরে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় মাথাপিছু খাবার অপচয় হয় প্রায় ৯৫ থেকে ১১৫ কিলোগ্রাম। আর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায় বছরে মাথাপিছু খাদ্য অপচয় হয় প্রায় ৬ থেকে ১১ কিলোগ্রাম। সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় শাক-সবজি, ফলমূল ও কন্দজাতীয় খাবার। আবার অনেক দেশে বোনাস বা দুটির দামে তিনটি বা আরো বেশি কেনার মতো সুযোগের কারণেও বাড়ছে অপচয়ের পরিমাণ। কারণ, অনেকের বাড়তিটুকুর প্রয়োজন হয় না। যা মেটাতে পারে অন্যজনের চাহিদা। অনেক দেশে শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যতটা মনোযোগ দেয়া হয়, ফসল তোলা-পরবর্তী ধাপ বা পর্যায়গুলোতে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয় না। সেন্টার অন ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (সিরডাপ) এক কর্মশালায় জানিয়েছে, বিশ্বে ফসল কাটা, পরিষ্কার ও সংরক্ষণ থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে শস্য নষ্ট হয় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশও এ থেকে পিছিয়ে নেই। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (ফাও) এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণার মাধ্যমে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে খাদ্যশস্যে ফসল কাটা-পরবর্তী সময়ে অপচয় হয় অনেক বেশি খাদ্য। খাদ্যশস্যভেদে এই অপচয়ের পরিমাণ প্রায় ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাদ্যশস্য অপচয় বা নষ্ট হয়ে যায় আউশ ধান। সেই তুলনায় আমন ফসল একটু কমই নষ্ট হয়। জানা গেছে, ফসল কাটার পর এর সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় বাংলাদেশে। ধান কাটার সময় প্রচুর ধান ক্ষেতে পড়ে থাকে, ধান কাটার পর তা বাড়িতে নেয়ার সময় রাস্তায় ঝরে পড়ে কিছু পরিমাণ, ধান শুকাতে দিলেও নষ্ট হয় অনেক ধান। অনেক সময় আশপাশ দিয়ে চলাচলের সময় পায়ের আঘাতেও হারিয়ে যায় অনেক ধান। অনেক সময় ধান বেশি শুকানো হলে তা ভেঙে যায়। আবার কম শুকানোর কারণে তাতে আর্দ্রতা থাকায় পোকায় ধরে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেছে, পাঁচ শতাংশ অপচয় কমানো গেলে প্রতি বিঘায় সাশ্রয় হতে পারে প্রায় ২০ কেজি করে চাল।
বিপুল পরিমাণ ধান থেকে প্রতিবছর প্রায় ৬০ লাখ টন খাদ্য সচেতনতার অভাবে নষ্ট বা অপচয় হয় (তা কাটা-পরবর্তী সময়ে)। এর মাত্র প্রায় পাঁচ শতাংশ অপচয় কমানো গেলে প্রায় ২০ লাখ টন খাদ্যশস্য সাশ্রয় করা সম্ভব হবে, যা খাদ্য নিরাপত্তাকে জোরদার করবে। আর পুরো অপচয় কমানো গেলে কেবল ধানই অতিরিক্ত পাওয়া যাবে ১ কোটি টন। আর ফলমূল-সবজি মেলালে লাখ লাখ কোটি টন। সুবহানাল্লাহ!
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শহীদ করা জায়নবাদী তথা বর্বর ইহুদীরা কাপুরুষতার প্রমাণ দিয়ে অতীত ইতিহাস থেকে একের পর এক গুপ্তহত্যা করে আসছে ইহুদীদের গুপ্তহত্যার অনেক নিন্দা, ধিক্কার এবং প্রচারণা ও প্রতিহতের প্রচেষ্টা দরকার (পর্ব-১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে গেছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফও বেশি বেশি করতে হবে।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উম্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, খুন আর আত্মহত্যা মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূরিকরণ করা।
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ইনশাআল্লাহ আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রথম ধনী দেশ। এক উত্তারাঞ্চলের খনিজ উত্তোলন করলেই গোটা দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা বরদাশতযোগ্য নয়।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি?
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রতি বছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক “অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নতুন আশঙ্কা এবং বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমেছে”- এ তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নচেৎ সাধারণ অসুখেই প্রাণনাশ হতে পারে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘ইসলামভীতি মোকাবেলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস’ হলেও কার্যকরী কিছুই হচ্ছে না ইসরাইলকে সহযোগিতা করতে আমেরিকায় ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার আরো বাড়ানো হচ্ছে
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রতারণার ফাঁদে নাগরিক জীবন। সরকারের নজরদারী নেই। রকমফের প্রতারণা বন্ধে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বিস্তারের বিকল্প নেই।
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)