প্রসঙ্গ: কোন সন্তানকে বেশী সম্পদ দেয়া কোন সন্তানকে কম সম্পদ দেয়া
সুওয়াল-জাওয়াব
, ২৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
জাওয়াব: উক্ত জমি বন্ধক সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্মত নয়। উল্লেখিত বর্ণনা মোতাবেক জমি বন্ধক নেয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। কারণ টাকা দিয়ে জমি বন্ধক নিয়ে তার উৎপাদিত ফসল ভোগ করা সুদের শামিল। কেননা বন্ধক গ্রহীতার টাকা সম্পূর্ণই অক্ষত বা জমা থাকে। আর জমির ফসল সে ভোগ করে অতিরিক্ত হিসেবে। বন্ধকদাতা যতদিন বা যত বছর টাকা ফেরত না দিবে, ততদিন বা তত বছর বন্ধক গ্রহীতা জমির ফসল ভোগ করতেই থাকবে। অথচ তার কোন বিনিময় সে দিবে না। তার বিনিময় শুধু এতটুকু যে, সে জমির মালিককে টাকা কর্জ দিয়েছে। আর এরূপ টাকা কর্জ দিয়ে তার বিনিময়ে ফায়দা হাছিল করা খালেছ সুদ গ্রহণ করার নামান্তর।
হ্যাঁ, জমি বন্ধক নিয়ে তার ফসল ভোগ করতে পারবে। তবে শর্ত হলো- সে যত টাকার ফসল ভোগ করবে, তত টাকা জমির মালিককে কর্জ দেয়া টাকা থেকে কাটা যাবে। অনেকে বলে থাকে, বন্ধক গ্রহীতা জমির খাজনা আদায় করলে বা দিলে সে ফসল ভোগ করতে পারবে। এ ফতওয়াও শুদ্ধ নয় বরং নাজায়িয ও হারাম। শুদ্ধ হলো- খাজনা বাবদ বন্ধকী জমিনের উপর যত টাকা বন্ধক গ্রহীতা খরচ করবে, তত টাকারই ফসল ভোগ করতে পারবে। তার চেয়ে এক পয়সার ফসল বেশি ভোগ করলে, সেটাও সুদ হবে। (দলীলসমূহ: তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে দুররে মানছূর, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া, বাহরুর রায়িক, ক্বাযীখান, দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, এনায়া, কেফায়া, নেহায়া ইত্যাদি)
সুওয়াল: পিতা-মাতার সম্পদ সব ভাই বোনেরা বণ্টন করে নেয়ার পর এক বোন তার নিজের অংশ এক ভাইকে মুহব্বত করে দিয়ে দিয়েছে। এখন সুওয়াল হলো, বাকী দু ভাইকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র এক ভাইকে তার বোনের অংশ দেয়া ঠিক হবে কি?
জাওয়াব: কোন বোন যদি তার তিন ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাইকে না দিয়ে এক ভাইকে মুহব্বত করে তার নিজের সম্পদ দিয়ে দেয়। তবে এটা জায়িয রয়েছে। এতে সম্মানিত শরীয়ত উনার কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।
(দলীলসমূহ: তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে দুররে মানছূর, বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী ইত্যাদি)
সুওয়াল: পিতার যৌথ সংসার থেকে বড় ছেলে কিছু সম্পদ তার নামে করে নিয়েছে এবং পিতার ওয়ারিশ সূত্র সম্পদ থেকেও অর্ধেক সম্পদ নিয়েছে। পিতাও তাকে (বড় ছেলে) মুহব্বত করে নয় কাঠা জমি দিয়েছে। এরূপ করা পিতা এবং বড় ছেলের জন্য ঠিক হয়েছে কি?
জাওয়াব: এটা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম হবে। পিতা ও বড় ভাই উভয়ে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে এবং পরকালে বড় ছেলে এবং পিতা উভয়কেই জাহান্নামের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ولا تأكلوا اموالكم بينكم بالباطل
অর্থ: তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না অর্থাৎ আত্মসাত করো না। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৮)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت سعيد بن زيد رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من اخذ شبرا من الارض ظلما فانه يطوقه يوم القيمة من سبع ارضين
অর্থ: হযরত সায়ীদ ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কারো এক বিঘত যমীন যলুম করে দখল করবে, ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় সাত তবক যমীন বেড়িরূপে পরিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابى حرة الرقاشى رحمة الله عليه عن عمه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الا لاتظلموا الا لايحل مال امرى الا بطيب نفس منه.
অর্থ: তাবিয়ী হযরত আবু হুররা রাক্কাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার চাচা (ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাবধান! যুলুম করো না। সাবধান কারো মাল তার মনের সন্তুষ্টি ব্যতীত নেয়া কারো জন্য হালাল নয়। (বাইহাক্বী, শুয়াবুল ঈমান, দারু কুতনী মুজতাবায়)
عن حضرت سالـم رحمة الله عليه عن ابيه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من اخذ من الارض شيئا بغير حقه خسف به يوم القيامة الى سبع ارضين.
অর্থ: বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত সালিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে অন্যায়ভাবে কারো কোন যমীন নিয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক যমীন পর্যন্ত ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী শরীফ)
عن حضرت يعلى بن مرة رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من اخذ ارضا بغير حقها كلف ان يحمل ترابها الـمحشر.
অর্থ: হযরত ইয়া’লা ইবনে মুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো কোন জমি দখল করেছে, তাকে তার মাটি (মাথায় করে) হাশরের মাঠে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হবে। (আহমদ শরীফ)
عن حضرت يعلى بن مرة رضى الله تعالى قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ايما رجل ظلم شبرا من الارض كلفه الله عز وجل ان يحفره حتى يبلغ اخر سبع ارضين ثم يطوقه الى يوم القيمة حتى يقضى بين الناس.
অর্থ: হযরত ইয়া’লা ইবনে মুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যে কোন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিঘত জমি দখল করে, তাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সাত তবকের শেষ পর্যন্ত খুঁড়তে বাধ্য করবেন। অতঃপর তার গলায় তা বেরীরূপে পরিয়ে দেয়া হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ক্বিয়ামতের দিন মানুষের বিচার শেষ করা হয়। (আহমদ শরীফ)
কাজেই, কোন ছেলের জন্য যৌথ সংসার থেকে জমি বা টাকা-পয়সা নিজের নামে নেয়া যেরূপ জায়িয নয় তদ্রƒপ পিতা ও মাতার জন্যও কোন ছেলেকে বা মেয়েকে বেশি দেয়াটা জায়িয নয় বরং কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে। এবং পরকালে কঠিন আযাবের সম্মুখিন হবে। (দলীলসমূহ: তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে দুররে মানছূর, বুখারী শরীফ, বাইহাক্বী, শুয়াবুল ঈমান, দারু কুতনী, আহমদ শরীফ মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া, বাহরুর রায়িক, ফতহুল ক্বাদির, দুরুরল মুখতার, বেনায়া ইত্যাদি)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)