পৃথিবীর সবচেয়ে বিধ্বংসী পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায় রাশিয়া
, ১০ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৩ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পাঁচ মিশালী
১৯৫২ সালে পৃথিবীর প্রথম হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নও হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে থাকে। অল্প দিনের মধ্যেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বোমার চেয়ে বিধ্বংসী একটি বোমা তৈরি করতে সক্ষম হয়, যা জার বোমা নামে অধিক পরিচিত।
তিন স্তরবিশিষ্ট এই হাইড্রোজেন বোমার নকশা করে আন্দ্রে শাখারভসহ বেশ কজন পরমাণুবিজ্ঞানী। প্রথমে ১০০ মেগাটন টিএনটিসম্পন্ন এবং ফ্যাটম্যানের চেয়ে পাঁচ হাজার গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন বোমার নকশা করা হয়। তবে এত ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা বহনকারী বিমান বিস্ফোরণের পর ফিরে আসার মতো পর্যাপ্ত সময় না-ও পাওয়া যেতে পারে, এই চিন্তা থেকে বোমার ক্ষমতা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। বোমাটি তৈরি করার পর এর ওজন দাঁড়ায় ২৭ মেট্রিক টন, যার দৈর্ঘ্য ৮ মিটার এবং প্রস্থ ২ মিটার। বোমাটি তৈরির পাশাপাশি বোমা বহনের জন্য একটি বিমানকেও উপযোগী করে তোলা হচ্ছিল।
তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের কোনো বিমান এই বোমা বহনে সক্ষম ছিল না। বিকল্প হিসেবে টিইউ-৯৫ভি বিমানকে এই বোমা বহনের জন্য উপযোগী করে তোলা হয়। বিমানটিকে বিশেষ প্রতিফলক দ্বারা রং করা হয়, যা বোমার বিস্ফোরণে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয়তা প্রতিফলন করতে সক্ষম ছিল। তা ছাড়া বোমাটি নিক্ষেপ করার পর বহনকারী বিমান যাতে নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে পারে, সে জন্য (অর্থাৎ বোমাটির পতনকে ধীর করার জন্য) প্যারাসুটের মাধ্যমে নিক্ষেপ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও বহনকারী বিমানটির চালকের বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা ছিল ৫০ শতাংশ।
১৯৬১ সালের ৩০ অক্টোবর বোমাটিকে উত্তর মহাসাগরে অবস্থিত নোভেয়া জেমলিয়া দ্বীপের ওপর নিয়ে আসা হয়। একটি পর্যবেক্ষক বিমান এই ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে থাকে এবং একই সঙ্গে বাতাসে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরিমাপ করতে থাকে। বোমাটিকে সাড়ে ১০ কিলোমিটার ওপরে প্যারাসুটের মাধ্যমে মুক্ত করা হয় এবং সেটি বিস্ফোরিত হয় ভূমি থেকে ৪ কিলোমিটার ওপরে। ততক্ষণে বহনকারী বিমানটি ৩৯ কিলোমিটার এবং পর্যবেক্ষক বিমানটি ৫৪ কিলোমিটার দূরে চলে আসতে সক্ষম হয়। তা সত্ত্বেও বিস্ফোরণের শক ওয়েভ বহনকারী বিমানটিকে ১১৫ কিলোমিটার এবং পর্যবেক্ষক বিমানটিকে ২০৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ধাক্কা দেয়। এর ফলে বিস্ফোরণের শক ওয়েভ বহনকারী বিমানটিকে ১ কিলোমিটার দূরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তবে এতে বিমানটির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় না।
বোমাটির বিস্ফোরণে ৫৬ মেগাটন টিএনটি নির্গত হয়। বিস্ফোরণে সৃষ্ট মাশরুম আকৃতির মেঘ প্রায় ১০০ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়ে ৬৪ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছে যায়, অর্থাৎ বায়ুম-লের স্ট্যাটোস্ফিয়ার পার হয়ে মেসোস্ফিয়ারের মধ্যে চলে যায়। বিস্ফোরণে সৃষ্ট অগ্নিগোলকটির ঝলকানি এক হাজার কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা যায়। ধ্বংস হয়ে যায় বিস্ফোরণ স্থলের ৫৫ কিলোমিটার দূরে সেভারি দ্বীপের সব স্থাপনা। দ্বীপটি অবশ্য আগে থেকেই জনশূন্য করা হয়েছিল। ভূপৃষ্ঠের ৪ কিলোমিটার ওপরে বিস্ফোরিত হওয়ার পরও এর শক ওয়েভ ৪ দশমিক ৫ মাত্রার ভূকম্পন সৃষ্টি করে এবং বেতার যোগাযোগব্যবস্থা হয়ে পড়ে অকেজো।
জার বোমা ছিল পৃথিবীতে বিস্ফোরিত সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা। এর শক্তি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত সব ধরনের অস্ত্র ও বোমার সম্মিলিত শক্তির ১০ গুণ। পরমাণুবিজ্ঞানীরা জানান, কোনো বড় শহর ধ্বংস করতে হলেও এমন একটি বোমার ব্যবহার অতিরিক্ত হয়ে যাবে। এই বোমা যদি কোনো শহরে নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে এর প্রভাব থেকে আক্রমণকারী রাষ্ট্রও বাঁচবে না। কারণ, এর তেজস্ক্রিয়তা সারা বিশ্বের বায়ুম-লে ছড়িয়ে পড়বে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মঙ্গলে বিস্ময়কর ‘সবুজ দাগের’ সন্ধান!
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আইসল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির গর্ভে বিজ্ঞানীদের নজর
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পরোক্ষ ধূমপান স্বাস্থ্যগত দিক থেকে যে সমস্ত মারাত্মক ক্ষতি করে?
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানদের বসবাস বা দ্বীন ইসলাম প্রচার নিষিদ্ধ করে রেখেছে যে সমস্ত বিধর্মী রাষ্ট্র
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
২০২২ সালে সৌরজগতের বাইরে মিলেছে ২০০ গ্রহের সন্ধান
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম দেশ সিয়েরা লিওনে যেভাবে দ্বীন ইসলাম ও দ্বীনি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আবাসন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপিয়ানরা
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হেঁটে যে রাস্তা আজও শেষ করতে পারেনি কেউ
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
লাওসে মুসলমানদের জীবনধারা
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কাতারের মরুভূমিতে খোদাই করা রহস্যময় শত শত চিহ্ন
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! কেন তেমন দেখা মেলে না (২)
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! কেন তেমন দেখা মেলে না (১)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)