পারিবারিক কলহে বাড়ছে হত্যাকান্ড, মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ
সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূরিকরণ করা।
, ১৫ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৬ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ২৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মন্তব্য কলাম
সম্প্রতি রাজধানীর তুরাগে তিন শিশুকন্যাকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যার নৃশংস ঘটনা ঘটে। মিরপুরে নিজ পিস্তল দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর মাথায় গুলি করে পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহত্যার ঘটনাগুলো প্রমাণ করে পারিবারিক নৃশংসতা কতটা ভয়াবহ পর্যায় পৌঁছেছে। প্রতিনিয়ত এরূপ খুনের ঘটনায় উদ্বেগ-আতঙ্ক বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব হত্যাকান্ডের রহস্য অনেকাংশে উদঘাটন করলেও লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।
এ সব ঘটনা পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় মানুষ এখন শুধু ঘরের বাইরেই নয়, তার আপন মানুষটির কাছেও নিরাপদ নয়। নীতি-নির্ধারক মহলের অবহেলায় সামাজিক অবক্ষয়ের শিকার ব্যক্তিদের প্রাণহানির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। অথচ এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কোনো রকম উদ্যোগ এখনো নেওয়া হচ্ছে না। সুষ্ঠু বিচারের অভাবে অপরাধীরা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে অন্যরাও এরকম অপরাধ করতে উৎসাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ বিভাগের তথ্যানুযায়ী বছরে মোট হত্যাকা-ের প্রায় ৪০% হয় পারিবারিক কলহের কারণে। মানুষ ঘর বাঁধে একবুক আশা নিয়ে । কিন্তু চলার পথে অসম মানসিকতার কারণে কখন যেন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে। ঝগড়া, কলহ-বিবাদ, অবিশ্বাস, সন্দেহ, ভুল বোঝাবুঝি আর অত্যাচার শুরু হয়। এ সমস্যা প্রভাব ফেলে চাকরিতে ও পেশায়। এমনকি নিরপরাধ শিশুরাও স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের কারণ হত্যার শিকার হয়।
সারা দেশে ৩ হাজার ৬১টি খুনের ঘটনা ঘটে। এ সময়ে রাজধানীতে ১৭২ জন খুন হন। যার মধ্যে ১৬২টি খুনের কারণ সামাজিক ও পারিবারিক। মূলত অর্থের প্রতি প্রবল দুর্বলতা, দাম্পত্য কলহ ও স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসহীনতা, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, সামাজিক-রাজনৈতিক-ব্যবসায়িক ও সাংস্কৃতিক অস্থিরতা, অন্য দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা, স্বল্প সময়ে ধনী হওয়ার আকাক্সক্ষা, সামাজিক উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ না থাকা, বিষন্নতা ও মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন কারণে এ ধরণের খুনের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশে প্রতিদিন গড়ে খুন হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ জন। আর এর অধিকাংশই পারিবারিক ও সামাজিক কারণে হচ্ছে।
মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয়, সহনশীলতা কমে যাওয়া ও পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাওয়ায় পারিবারিক নৃশংসতার প্রবণতা বাড়ছে। হতাশা, মানসিক বিষণœতা ও আর্থিক দৈন্যতা থেকে মানুষ মাদকের দিকেও ঝুঁকছে। নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিংবা প্রতিহিংসা মেটাতেও হত্যাকা- ঘটছে। অনৈতিক ও আপত্তিকর কর্মকা-ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আকাশ সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার অনেকাংশে দায়ী। অন্যদিকে, মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা ও চাকরির পাশাপাশি মোবাইল ফোন, ফেসবুক ও টুইটার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পরিবারের কেউ কারোর সঙ্গে সময় দিতে পারছে না। ফলে পারিবারিক বন্ধন ঢিলে হচ্ছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে, নৈতিকতা হ্রাস পাচ্ছে। এসব কারণে পারিবারিক কলহ থেকে খুনাখুনির ঘটনা বাড়ছে।
আমাদের দেশে আগে ছিল যৌথ পরিবার। যে কোনো কাজে সকলে মিলেমিশে সিদ্ধান্ত নিতেন। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ দিন দিন রোবটে পরিণত হচ্ছে। তাই এখন সবাই যৌথ পরিবারকে ভেঙে দিয়ে একক পরিবারে উৎসাহী হয়ে উঠছে। যার দরুন একাকী থাকতে থাকতে বিভিন্ন অপকর্ম করার সুযোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে জন্য বাংলাদেশে এখন যৌথ পরিবার প্রথা কমে গেছে। মানুষ ক্রমেই ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। মানুষ এখন যান্ত্রিক জীবনের কারণে মনুষ্যত্ববোধ হারাচ্ছে ফলশ্রুতিতে আপন মানুষটিকে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করছে না।
প্রসঙ্গত, এই পারিবারিক কলহের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে সেগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বলার বিষয় হলো, কোন কার্যক্রমই কাজে আসবে না যতক্ষন না পর্যন্ত একটি পারিবারিক জীবন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আলোকে বাস্তবায়িত না হবে। পারিবারিক কলহ দূর করার জন্য প্রতিটি পরিবার হতে হবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চর্চাকেন্দ্র। পারিবারিক কলহ ও বিবাদ দূর করতে সর্বপ্রথম প্রতিটি পরিবারে ইসলাম ও দ্বীনচর্চার দিকে নজর দিতে হবে। প্রতিটি সদস্যকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। কেননা ইসলামই একমাত্র এ বিষয়টির দিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দৃষ্টি দিয়েছে। পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা ও এর স্থিতিশীলতায় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পারিবারিক বন্ধন যেন অটুট থাকে সে ব্যাপারে অসংখ্য দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে 'তোমাদের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম।' তাই পরিবারের প্রতিটি সদস্য যেন ইসলামিক রীতি-নীতির অনুসরণ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সেইসাথে বিশেষ করে সম্মানিত পর্দা পালনের মাধ্যমেও পারিবারিক কলহ সম্পূর্ণরূপে দূর করা যাবে। শরঈ পর্দা অসামাজিক কার্যকলাপ, যৌন হয়রানি, এসিড নিক্ষেপ ও পরকীয়া নির্মূল করে। সঠিক গবেষণা করলে দেখা যাবে, শরঈ পর্দা না মানা এর অন্যতম কারণ। যদি শরঈ পর্দা সঠিকভাবে মানা হতো, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষ্যমতে মাহরাম ব্যতীত অন্য কারও সামনে খোলামেলা চলাচল না করা হতো, তাহলে এ জাতীয় পারিবারিক কলহের মাধ্যমে দুর্ঘটনা ঘটত না। তাই শালীনতা ও শুচি-শুভ্রতার প্রতীক পর্দার বিধান মেনে চলতে স্বামী-স্ত্রী সবাইকেই উৎসাহ প্রদান করতে হবে।
পরিশেষে, পারিবারিক কলহের যে মূল একটি কারণ ‘অপসংস্কৃতির ঘৃণ্য আগ্রাসন দূর করে ফেলতে হবে। রোধ করতে হবে অপসংস্কৃতির সয়লাব। বিজাতীয় ভিনদেশি অপসংস্কৃতি অরুচিকর সংস্কৃতির কুপ্রভাবেই মূলত বর্তমানে ভয়ঙ্করভাবে পারিবারিক কলহ ও সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে। খুন, গুম, আত্মহত্যা ও পরকীয়া দিন দিন রেড়েই চলেছে। দ্বীনচর্চা ও ইসলাম পালন থেকে বিরত থাকতে ইন্ধন যোগায়। আক্বীদা বিশ্বাসে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে। বিশেষ করে পারিবারিক সম্পর্কের ভিত নাড়িয়ে দেয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে বিরোধ ও সমস্যা তৈরি করে। অতএব সমাজকে বাঁচাতে, বিশেষত পরিবারগুলোকে কলহমুক্ত রাখতে অপসংস্কৃতির সয়লাব রোধ করতে হবে। যা প্রতিটি পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের অপরিহার্য কর্তব্য। তাহলেই সন্তান ও পরিবার এর কুপ্রভাব থেকে বাঁচতে পারবে। সার্বিক সব ধরণের কলহ দূর হবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও বাংলাদেশে লিভ টুগেদারের স্রোত শুরু হয়েছে। লিভ টুগেদার কালচার ঠেকানোর নৈতিক ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নেই। লিভ টুগেদার সমাজে যে ভয়াবহ ক্রাইম তৈরী করছে তা প্রতিহত করতে ইসলামী অনুশাসনের বিকল্প নেই।
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাজারে ভয়ংকর ঘন চিনি মিথ্যা ঘোষণায় আসছে আমদানি নিষিদ্ধ ঘন চিনি পুরুষত্বহানি, মূত্রাশয়ে ক্যান্সারের তথা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর এই ঘন চিনি বন্ধে সরকারকে এখনি জিহাদ ঘোষণা করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: সেবা পেতে ঘুষকে স্বাভাবিক মনে করছে দেশের সিংহভাগ মানুষ। বছরে ঘুষ গ্রহণের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ঘুষই সমাজে সব অভাব থেকে অনিয়মের মূল কারণ।
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সমাজের স্রোত বা সময়ের সাথে আপোসকারীরা উলামায়ে হক্ব নয়। ইসলামী আহকাম ও আন্দোলন পদ্ধতি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় না। ইবনুল ওয়াক্ত নয়; কেবলমাত্র আবুল ওয়াক্ত উনারাই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ত্রাণকর্তা ও অনুসরণীয়।
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ডিজিটালাইজেশনের নামে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের ইন্টারনেট জগতে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শিশু-কিশোররা আক্রান্ত হচ্ছে অশ্লীলতায়। শিখছে অনৈতিকতা, বেহায়াপনা, হিংস্রতা।
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রোগের খনি সাদা চিনি! বিপরীতে ব্র্যান্ডিং, যথাযথ প্রচারণার অভাবে অবহেলায় উপকারি দেশীয় লাল চিনি সরকারের উচিত, লাল চিনিকে বাজারসুলভ করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা।
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা গবেষণার দিকে আগ্রহী না হয়ে বিসিএস পরীক্ষায় আগ্রহী হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তহবিল বা অর্থায়ন আসার প্রক্রিয়াটি সরকারের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে হবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক স্থাপন হয়নি
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কাদিয়ানীদের মালিকানায় প্রাণ গ্রুপসহ বৃহৎ শিল্পগ্রুপগুলো দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে পথে বসানোর ষড়যন্ত্র করছে। অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। সরকারের আশু পদক্ষেপ কাম্য।
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে- সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কতিপয় ফযীলত মুবারক বর্ণনা
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও চরাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যর উন্নয়ন হয়নি
২৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অধিকাংশ টিকাই মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যুক্ত তথাকথিত করোনার টিকার ভয়াবহ ক্ষতি এখন সারা বিশ্বে বহুল আলোচিত
২৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
২৫০ বছর আগে আরব বণিকরা আবিষ্কার করেছিলেন নারিকেল দ্বীপ
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)