সুন্নতী মুবারক তা’লীম
পবিত্র হামদ্ শরীফ, পবিত্র না’ত শরীফ ও পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ লেখা, পাঠ করা ও শোনা খাছ সুন্নত মুবারক। গান-বাজনা করা, শোনা হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত (৩)
, ১৩ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৯ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ১৭ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ০১ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
পবিত্র হামদ্ শরীফ, পবিত্র না’ত শরীফ ও পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ কখনোই হারাম গানের সুরে পাঠ করা যাবে না বরং বাদ্যযন্ত্র ও হারাম গানের সুর বাদ দিয়ে ক্বাছীদা শরীফ উনার লেহানে (স্বরে) পাঠ করতে হবে।
আমরা আরবী ভাষাকে মুহব্বত করি। কেননা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভাষা মুবারক আরবী, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষা আরবী এবং আখিরাতের ভাষা আরবী। কিন্তু পবিত্র হামদ্ শরীফ, পবিত্র না’ত শরীফ ও পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ বিভিন্ন ভাষায় পাঠ হয়ে থাকে। তাই যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হচ্ছে, যে ভাষায়ই পবিত্র হামদ্ শরীফ, পবিত্র না’ত শরীফ ও পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ পাঠ করা হোক না কেন তা যেন সঙ্গীত বা গানের সুরে পঠিত না হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর সকল ভাষাতেই পবিত্র হামদ্ শরীফ, পবিত্র না’ত শরীফ ও পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ পাঠ করা জায়িয এবং মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক; যদি তা সেই ভাষায় প্রচলিত সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্র থেকে মুক্ত হয়।
পবিত্র হামদ্ শরীফ, পবিত্র না’ত শরীফ ও পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ পাঠ করার জন্য কোনো সার্বজনীন লেহান তৈরি করা বাস্তবিক পক্ষে কঠিন। কেননা ভাষা, ভাষার উচ্চারণ এবং সেই ভাষায় পঠনের তারতীবের কারণে পবিত্র হামদ্ শরীফ, পবিত্র না’ত শরীফ ও পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ পঠনেও ভিন্নতা প্রকাশ পাবে এবং এটাই স্বাভাবিক।
সারা বিশ্বের অনেকে বর্তমানে কয়েকটি পদ্ধতিতে পবিত্র হামদ্ শরীফ, পবিত্র না’ত শরীফ ও পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ পাঠ করে এবং সামা মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। যা সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নয়। যেমনঃ-
১. বাদ্যযন্ত্রসহ পবিত্র হামদ্ শরীফ, পবিত্র না’ত শরীফ ও পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ পাঠ। নাউযুবিল্লাহ!
২. কোনো প্রকার বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার না করলেও দফ জাতীয় বাদ্য বাজিয়ে পবিত্র হামদ্ শরীফ, পবিত্র না’ত শরীফ ও পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ পাঠ। নাউযুবিল্লাহ!
৩. কোনো প্রকার বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার না করলেও মুখে যিকিরের ভঙ্গিতে শব্দ করে তাল-লয় রক্ষা করে পাঠ।
৪. কোনো প্রকার বাদ্যযন্ত্র ও মুখে শব্দ ব্যবহার না করলেও মেশিনে কৃত্রিম শব্দযোগে পাঠ করা। নাউযুবিল্লাহ!
৫. কখনো বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে, কখনো না করে কথিত “ছূফী-নৃত্য” নামে এক ধরনের নাচের মাধ্যমে পাঠ। নাউযুবিল্লাহ!
৬. সর্বপ্রকার বাদ্যযন্ত্র, বাদ্যের মতো শব্দ ব্যতীত কিন্তু গানের সুরে পাঠ। নাউযুবিল্লাহ!
৭. সমস্ত প্রকার বাদ্যযন্ত্র ব্যতীত, রাগ রাগিনী ও প্রচলিত গানের সুর কিন্তু যে কোনো একটি সুর করে পাঠ। নাউযুবিল্লাহ!
৮. উপরের সমস্ত পদ্ধতিতে পাঠের সাথে পাঠকের ভিডিও ধারণপূর্বক উপস্থাপন: আবার প্রাণীর ছবি ও বাজনা ব্যতীত উপস্থাপন । নাউযুবিল্লাহ!
বাদ্যযন্ত্র, দফ এবং রাগ-রাগিনী এবং প্রচলিত গানের সুরে পবিত্র হামদ্ শরীফ, পবিত্র না’ত শরীফ ও পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ হারাম এবং নাজায়িয। সর্বপ্রকার নর্তন-কুর্দন সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। সামা শুনে ওজূদের হাল হতে পারে তবে কথিত ছূফী-নৃত্যের নাম দিয়ে ইচ্ছাকৃত নর্তন-কুর্দন করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয।
বর্তমানে একটি সম্প্রদায় দেখা যায়, যারা কোনো বাদ্যযন্ত্র, দফ, প্রচলিত গানের সুর ব্যবহার না করলেও তারা তাদের সামা পরিবেশনের সময় মুখে যিকিরের ভঙ্গিতে এক ধরনের শব্দ করে থাকে- এটিও সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। কেননা যিকির শব্দের অর্থ মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ। আর যিকিরের ছবক করার জন্য প্রয়োজন হয় একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ উনার নিছবত মুবারক। সারাজীবন যিকিরের ভঙ্গিতে শব্দ করলেও ফায়দা পাবে না, যদি না কোনো মহান ওলীআল্লাহ উনার হাত মুবারকে বাইয়াত হয়ে ছবক না নিবে।
এছাড়াও যিকিরের জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ নিয়ত। প্রথমত যিকির করতে হয় মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য আর যিকিরের পূর্বে যিনি কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ হবেন উনার প্রতি থাকতে হবে চূড়ান্ত হুসনে যন বা বিশুদ্ধ ধারণা, নতুবা যিকিরকারী কোনো ফায়দা পাবে না। বর্তমানে যারা সামা পরিবেশনে যিকিরের ভঙ্গিতে শব্দ করছে তারা একই সঙ্গে অনেকগুলো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যেমন-
১. মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণে যিকির না করে তাল রক্ষার্থে যিকির করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ হারাম।
২. যিকিরের ভঙ্গিতে স্বরের তাল রক্ষার শব্দ করাতে যিকিরকে ইহানত করা হচ্ছে, যা কুফরী।
৩. যিকিরের শব্দকে তাল-লয় হিসেবে ব্যবহার করায় বাদ্যযন্ত্রের সহযোগিতা নেয়ার মতো গুনাহ হচ্ছে, যা কবীরা গুনাহ।
৪. বিশুদ্ধ নিয়তবিহীন মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ ব্যতীত যিকিরের ভঙ্গিতে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারণে ইহানত করার কারণে দিল মুর্দা হয়ে গোমরাহ হয়ে যায়।
সুতরাং এ পদ্ধতিতে পবিত্র হামদ্ শরীফ, পবিত্র না’ত শরীফ ও পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ পাঠ করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও আরো একটি সম্প্রদায় রয়েছে, যারা মুখে কোনো যিকিরের ভঙ্গিতে শব্দ না করলেও মেশিনের সাহায্যে এক ধরনের কৃত্রিম শব্দ সৃষ্টি করে, যাতে পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ পাঠের মধ্যে এক ধরনের ঝোঁক সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ঝোঁক সৃষ্টি করার নেপথ্যে থাকে আসলে তাল-লয় রক্ষার প্রবণতা। ফলে এ ধরনের শব্দ সৃষ্টি করাও জায়িয নয় বরং হারাম।
অনেকের আওয়াজকে বুলন্দ করার জন্য যে ইকো সৃষ্টি করা হয়, তা ভিন্ন ব্যাপার। কেননা এর উদ্দেশ্য থাকে পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ উনার আওয়াজ ও শব্দগুলো স্পষ্ট করা। আসলে পবিত্র ক্বাছীদাহ শরীফ লেখা, পাঠ করা, শোনা, শোনার আয়োজন করা, উপস্থিত থাকা, ইলমে আরূজীর তারতীবে বা লেহানে পাঠ করা (যা গানের আওয়াজে নয়) সব খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (১)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘তালবীনা’
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নতী খাবার পরিচিতি ও উপকারিতা : দুধ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খেজুরের রস খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)