পবিত্র সুন্নত মুবারক কতটুকু অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে?
, ১৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১৯ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ ، يَقُولُ جَاءَ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أُخْبِرُوْا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوْهَا فَقَالُوْا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِيِّ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلاَ أُفْطِرُ وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلاَ أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُولُ اللهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَّغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي.
অর্থ: হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন তিনজন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আসলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের কাছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইবাদত বা আমল মুবারক সম্পর্কে জানার জন্যে। যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইবাদত বা আমল মুবারক সম্পর্কে উনাদেরকে সংবাদ দেয়া হলো, তখন উনারা ইবাদতগুলোকে (নিজেদের জন্য) কম মনে করলেন এবং বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তুলনায় আমরা কোথায়? কারণ উনার পূর্বের এবং পরের সমস্ত কিছু ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (সে কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কম ইবাদত করলেও চলবে কিন্তু আমাদেরকে এর চাইতে বেশী ইবাদত করতে হবে এরূপ চিন্তা করে) উনাদের মধ্যে একজন বললেন, আমি সারা রাত্রি নামায পড়বো, কখনো ঘুমাবো না। আরেকজন বললেন, আমি সারা জীবন রোযা রাখবো, কখনো রোযা ভঙ্গ করবো না। আরেকজন বললেন, আমি সারা জীবন আহলিয়া বা স্ত্রীর থেকে দূরে থাকবো। কখনো বিবাহ-শাদী করবো না।
এমন সময় সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের কাছে এসে বললেন, “আপনারাই কি সেই ব্যক্তিত্ব, যারা এ কথা বলেছেন যে, সারা রাত্র নামায পড়বেন, সারা জীবন রোযা রাখবেন, আর আহলিয়া বা স্ত্রীর কাছে যাবেন না, বিবাহ-শাদী করবেন না। ” নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “সাবধান! আপনারা সতর্ক হয়ে যান। আমি মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে আপনাদের চেয়ে বেশী ভয় করি এবং আপনাদের চেয়ে বেশী মুত্তাকী, তথাপি আমি নামায পড়ি, ঘুমাই, রোযা রাখি, রোযা ভঙ্গ করি, পরিবারের কাছে যাই। ” নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “যে আমার সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ করবে, সে আমার উম্মত থেকে খারিজ হয়ে যাবে। ” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে কিরমানী, শরহে নববী, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, তা’লীকুছ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রতিক্ষেত্রে অর্থাৎ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ইত্যাদি সকল অবস্থাতেই হুবহু অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কোন প্রকার ইফরাত ও তাফরীত (কম-বেশী) করা যাবে না।
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ اُمَّتِىْ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ اِلَّا مَنْ اَبَى قِيْلَ وَمَنْ اَبىَ قَالَ مَنْ اَطَاعَنِىْ دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِىْ فَقَدْ اَبَى.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে যাবে, তবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে আমাকে অস্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসা করা হলো- ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কে আপনাকে অস্বীকার করেছে? জবাবে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ করেছে, সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে। আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করেছে (আমাকে অনুসরণ করেনি), সে ব্যক্তিই আমাকে অস্বীকার করেছে। ” (বুখারী শরীফ, মেশকাত শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে কিরমানী, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মুযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)
অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফের উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত যে, বান্দা তখনই রেযামন্দী সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে পারবে, যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক সমূহের পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে। আর এটাই মূলতঃ বান্দার জন্য সবচেয়ে বিরাট সফলতা। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا.
অর্থ: “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অনুসরণ করলো, সে ব্যক্তি বিরাট সফলতা অর্জন করলো। ” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ/৭১)
মূলতঃ মাথার তালু হতে পায়ের তলা, হায়াত হতে মউত পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ও প্রতিটি বিষয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হুবহু অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কোন বিষয়েই যেমন বাড়ানো যাবে না, তদ্রুপ কমানোও যাবে না।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘কিস্সা’
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (২)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন বিভিন্ন প্রকারের সুন্নতী খাবার ‘খেজুর’
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মাঠা (লাবান)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘যব’
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)