পবিত্র শবে বরাত শরীফ পালন করার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী তারতীব মুবারক
, ১৪ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৭ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১২ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
اِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِىْ لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ (٣) فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍ حَكِيْمٍ (٤) اَمْرًا مِنْ عِنْدِنَا اِنَّا كُنَّا مُرْسِلِيْنَ (٥)
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে (পবিত্র শবে বরাতে) মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমিই সতর্ককারী। উক্ত রাত্রিতে আমার পক্ষ হতে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজগুলো ফায়ছালা করা হয়। নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা দুখান শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩,৪,৫)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِىْ خَمْسِ لَيَالٍ اَوَّلُ لَيْلَةٍ مِّنْ رَجَبَ وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَلَيْلَةُ الْقَدْرِ الْمُبَارَكَةِ وَلَيْلَتَا الْعِيْدَيْنِ.
অর্থ: নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দু‘আ নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে (১) পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাসের প্রথম রাতে (২) পবিত্র শবে বরাতের রাতে (৩) পবিত্র শবে ক্বদরের রাতে (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাতে (৫) পবিত্র ঈদুল আযহার রাতে।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন পবিত্র শা’বান শরীফ মাসের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ পবিত্র বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। কোনো রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি ? আমি তাকে রিযিক দান করবো। কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো। এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ শরীফ)
দেখা যাচ্ছে, এই সম্মানিত রাতটি অত্যন্ত বরকতপূর্ণ। সুতরাং সম্মানিত শবে বরাত উনার রাতে ইবাদত-বন্দেগী এমনভাবে করা উচিত যেভাবে ইবাদত-বন্দেগী করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সন্তুষ্ট হবেন।
পবিত্র লাইলাতুল বরাত শরীফ হচ্ছেন মুক্তি বা ভাগ্য অথবা নাজাতের রাত। অর্থাৎ পবিত্র বরাত শরীফ উনার রাতে ইবাদত-বন্দেগী করে ও দিনে রোযা রাখার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মহাসম্মানিত সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করা।
পবিত্র লাইলাতুল বরাত শরীফ পালন করার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
পবিত্র ইশা উনার ফরয ও সুন্নত নামায আদায়ের পর পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করতঃ সংক্ষিপ্ত নছীহত করে ছওয়াব রেসানী করতঃ ইমাম ছাহিব সমবেত মুছল্লীবৃন্দকে নিয়ে দু‘আ করবেন। এতে যার যার নেক আরজু রয়েছে তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত উছীলা মুবারকে খ¦ালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অত্যন্ত আযীযী-ইনকিছারীর সাথে মুনাজাত করবে। অতঃপর দু‘আ শেষে ইমাম ছাহিব মুছল্লীদেরকে পর্যায়ক্রমে যেসব ইবাদত বান্দিগী করতে হবে তা অবহিত করবেন। তা হলো-
পবিত্র বরাত শরীফ উনার নামায পড়বে
ছলাতুল বরাতের নিয়তে দুই দুই রাক‘আত করে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাক‘আত সুন্নত নামায পড়বে।
পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার সাথে যেকোনো পবিত্র সূরা শরীফ মিলালেই চলবে।
পবিত্র লাইলাতুল বরাত শরীফের নামায উনার নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوةِ الْبَرَائَةِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ.
অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ নামায পড়বে
ছলাতুত তাসবীহ উনার নামায পড়বে। যার দ্বারা যিন্দেগীর সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়।
নিয়ত -
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلٰوةِ التَّسْبِيْحِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ.
অতঃপর ৪,৬ বা ৮ রাকায়াত তাহাজ্জুদ নামায আদায় করা অতঃপর বিতির নামায আদায়ের পর বসে দুই রাকায়াত হালকী নফল নামায আদায় করা। যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য মুবারক হাছিল হয়।
অতঃপর যিকির-আযকার করবে
যিকির-আযকার করবে, যার দ্বারা ক্বলব বা অন্তর ইছলাহ হয়।
অতঃপর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে
কিছুক্ষণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর কবর যিয়ারত করবে
সম্ভব হলে কবরস্থান যিয়ারত করবে, যার দ্বারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক আদায় হয়।
অতঃপর দান-ছদক্বা করবে
গরীব-মিসকীনকে দান-ছদক্বা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবে, যার দ্বারা “হাবীবুল্লাহ” হওয়া যায়। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ করবে
পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মহাসম্মানিত সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়।
অতঃপর ছওয়াব রেসানী করে খালিছ তওবা করে আখিরী মুনাজাত করবে। আখিরী মুনাজাত অবশ্যই ছুবহে ছাদিক্বের পূর্বে করতে হবে। কারণ ছুবহে ছাদিক্বের পর বরাত উনার রাত থাকে না। আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিক্বের এতটুকু পূর্বে শেষ করতে হবে, যাতে করে পরের দিন রোযা রাখার জন্য সাহরী খাওয়া শেষ করতে পারে।
উল্লেখ্য, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক তত্ত্বাবধানে পবিত্র রাজারবাগ দরবার শরীফে খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারকে পবিত্র শবে বরাত পালন করা হয়ে থাকে।
আহলু বাইতি রসূল্লিাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি এমনভাবে পবিত্র শবে বরাত উনার ইবাদত-বন্দেগী ধারাবাহিকভাবে সাজিয়েছেন যে, এক মুহূর্তের জন্যেও গাফেল থাকার সুযোগ নেই।
সেজন্য সকলের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হলো পবিত্র রাজারবাগ শরীফে উপস্থিত হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক তত্ত্বাবধানে পবিত্র শবে বরাত পালন করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সেই তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (১)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘তালবীনা’
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নতী খাবার পরিচিতি ও উপকারিতা : দুধ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খেজুরের রস খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)