পবিত্র শবে বরাত শরীফ উনার পরিচিতি
, ১৪ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৭ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১২ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
شب ফার্সী শব্দ, যার অর্থ রাত বা রজনী। আর برات শব্দটি আরবী, ফার্সী ও উর্দূ ভাষাতে ব্যবহৃত হয়। আরবীতে بَـرَاءَةٌ শব্দের অর্থ নাজাত বা মুক্তি। ফার্সীতে برات শব্দের অর্থ ভাগ্য। شب برات অর্থ ভাগ্য রজনী বা মুক্তির রাত।
‘শবে বরাত’ বাক্যাংশটি যদিও বাহ্যত আরবী ও ফার্সীর সমন্বয়ে গঠিত। তবুও তা ফার্সী ভাষা। কেননা, ফার্সী ভাষা মূলত আরবী ও ফার্সীর সংমিশ্রণে গঠিত। তদ্রƒপ উর্দূ ভাষাও মূলত আরবী ও ফার্সী ইত্যাদির সংমিশ্রণে গঠিত। ফার্সী এমন অনেক শব্দ রয়েছে যা এখনো এ অঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে। যেমন, شب معراج (শবে মিরাজ), اب حياة (আবে হায়াত), قدرت خدا (কুদরতে খোদা), اب زمزم (আবে যমযম), شب قدر (শবে ক্বদর)।
পাক-ভারত উপমহাদেশে বহু বছর মুসলমানদের শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। এ অঞ্চলে ফার্সী ভাষা মাতৃভাষা হওয়ার কারণে, এখানে তখন ফার্সীই ছিল সরকারী ভাষা। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ নৌদস্যু লুটেরা এ অঞ্চলে শাসন প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৮৩৪ হতে ১৮৩৬ সালের মধ্যে তারা এ অঞ্চলে ফার্সী ভাষা নিষিদ্ধ করে এবং ইংরেজী ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রচলন করে। যদিও এ অঞ্চলে ফার্সী ভাষা নিষিদ্ধ করা হয় তথাপিও মানুষ ফার্সী ভাষাতে অভ্যস্ত থাকায় ফার্সী অনেক শব্দ এখনো প্রচলিত রয়েছে।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় ‘পবিত্র শবে বরাত শরীফ’ উনাকে لَيْـلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ'’ বা ‘বরকতময় রজনী’ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষায় ‘পবিত্র শবে বরাত শরীফ’ উনাকে لَيْـلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বা ‘পবিত্র শা’বান মাস উনার মধ্যরাত অর্থাৎ চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআন শরীফে পবিত্র শবে বরাত শরীফ উনার বর্ণনা
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
حم. وَالْكِتَابِ الْمُبِيْـنِ. اِنَّا اَنْـزَلْنَاهُ فِـىْ لَيْـلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ اِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ. فِيْـهَا يُـفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍحَكِيْمٍ. اَمْرًا مِّنْ عِنْدِنَا ۚ اِنَّا كُنَّا مُرْسِلِيـْنَ. رَحْـمَةً مِّن رَّبِّكَ ۚ اِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
অর্থ: “হা-মীম (হুরূফে মুক্বত্ত্বয়াত)। কসম সেই প্রকাশ্য কিতাব উনার। নিশ্চয়ই আমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ নাযিল করেছি বরকতময় রাত্রিতে (পবিত্র শবে বরাত শরীফে) অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত মুবারক নিয়েছি। এবং নিশ্চয়ই আমি হচ্ছি সতর্ককারী, ভয় প্রদর্শনকারী। এই সম্মানিত রাত্রি মুবারকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো ফায়ছালা করা হয়। নিশ্চয়ই সমস্ত কাজগুলো আমার তরফ থেকে ফায়সালা করা হয়। এবং নিশ্চয়ই (এই সম্মানিত রাত্রি মুবারকে যত রহমত, বরকত, মাগফিরাত, সাকিনা, দয়া-দান ইহসান সব আমার তরফ থেকেই পাঠানো হয়ে থাকে) আমিই প্রেরণকারী। আপনার যিনি রব তায়ালা উনার পক্ষ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রহমত মুবারক, নিশ্চয়ই যিনি খ¦ালিক্ব মালিক্ব রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সব শুনেন, সবজানেন, সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞাত।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা দুখান শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৬)
এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এবং হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন-
هِىَ لَيْـلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَتُسَمّى لَيْـلَةُ الرَّحْـمَةِ وَاللَّيْـلَةُ الْمُبَارَكَةُ وَلَيْـلَةُ الصَّكِّ
অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান অর্থাৎ অর্ধ শা’বানের রাত (শবে বরাত) কে বুঝানো হয়েছে। এবং উহার নামকরণ করা হয়েছে যেমন ليلة الرحمة (লাইলাতুর রহমত) অর্থাৎ রহমতের রাত, ليلة المباركة (লাইলাতুল মুবারাকাতু) অর্থাৎ বরকতের রাত। ليلة الصك (লাইলাতুছ ছক) ভাগ্য লিপিবদ্ধকরণের রাত অর্থাৎ ভাগ্য রজনী।” (তাফসীরে আলূসী, রূহুল মা‘আনী)
আর ليلة مبارك (বরকতপূর্ণ রাত) দ্বারা শবে বরাত অর্থাৎ ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ বহন করে তার পরবর্তী পবিত্র আয়াত শরীফ উনার يفرق (বণ্টন করা হয়) শব্দ দ্বারা। কেননা তাফসীর জগতের সকল তাফসীরে সমস্ত মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা يفرق শব্দের তাফসীর করেন يكتب (লেখা হয়) يفصل (ফায়ছালা করা হয়) يتجوز (বণ্টন বা নির্ধারণ করা হয়) يبرم (বাজেট করা হয়) فيصله (নির্দেশনা দেয়া হয় বা ফায়ছালা করা হয়) ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে।
কাজেই يفرق শব্দের অর্থ ও তার ব্যাখ্যার দ্বারা আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠল যে, ليلة مباركة দ্বারা ليلة النصف من شعبان অর্ধ শা’বানের রাত, বা শবে বরাত অর্থাৎ ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বৎসরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্য লিপি অনুসারে রমাদ্বান মাসে ليلة القدر বা শবে ক্বদরে তা চালু করা হয়। এ জন্য ليلة النصف من شعبان শাবানের মধ্য রাতকে ليلة التجويز (ফায়সালা বা নির্ধারণের রাত) এবং ليلة القدر কে ليلة التنفيذ (নির্ধারিত ফয়ছালা কার্যকরী করার রাত বা বৈধকরণ বিষয়ের কার্যকরীকরণের রাত) বলা হয়। (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীর খাযেন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ও রুহুল বায়ান)
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলের বিষয়টি তিনভাবে বর্ণনা করেছেন। এখন اَنْـزَلْنَا অর্থ একসাথে নাযিল হওয়া আর نَـزَّلَ অর্থ ধাপে ধাপে নাযিল হওয়া। اَنْـزَلْنَا লফয মুবারক ২ সূরাতেই ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ পুরা কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ'’ এবং “লাইলাতুল ক্বদর” শরীফে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘পবিত্র সূরা দুখান শরীফ’ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন,
اِنَّا اَنْـزَلْنَاهُ فِـىْ لَيْـلَةٍ مُّبَارَكَةٍ
“আমি বরকতময় রজনী উনার মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি” উনার ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি বরকতময় রজনী উনার মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করার ফায়ছালা করেছি সিদ্ধান্ত নিয়েছি”।
আর ‘পবিত্র সূরা ক্বদর শরীফ’ উনার মধ্যে যে ইরশাদ মুবারক করেছেন,
اِنَّا اَنْـزَلْنَاهُ فِىْ لَيْـلَةِ الْقَدْرِ
“আমি পবিত্র শবে ক্বদর উনার মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” উনার ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি পবিত্র শবে ক্বদর শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ লাওহে মাহফূয থেকে পৃথিবীর আসমানে অবস্থিত বাইতুল ইজ্জত মুবারক উনার মধ্যে একসাথে নাযিল করেছি”।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র হিজর শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّا نَـحْنُ نَـزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَه لَحَافِظُوْنَ
“আমি পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি এবং আমি তা হিফাযতকারী।”
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক যখন ৪০ বছর, তখন হেরা গুহায় সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহুর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ পবিত্র ১২ই শরীফ নাযিল শুরু হয়। এইভাবে ২৩ বছরে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল সম্পন্ন হয়। পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
فِيْهِ وُلِدْتُ وَفِيْهِ بُعِثْتُ اَوْ اُنْزِلَ عَلَىَّ وَحْىٌ
‘এ মহান দিনে আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি, এ মহান দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র নবুওয়ত মুবারক প্রকাশ করা হয় এবং এ মহান দিনে পবিত্র কুরআন শরীফ আনুষ্ঠানিকভাবে নাযিল শুরু হয়।’
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি “লাইলাতুম মুবারকাহ বা পবিত্র শবে বরাত শরীফ” উনার মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নেন আর পবিত্র শবে ক্বদর শরীফ উনার মধ্যে লাওহে মাহফূয থেকে বাইতুল ইজ্জত উনার মধ্যে সমগ্র কুরআন শরীফ একত্রে নাযিল করেন। অতপর পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ হতে দুনিয়াতে প্রয়োজনের তাকীদ অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে নাযিল হওয়া শুরু করে দুনিয়াতে প্রয়োজনের তাকীদ অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তা ২৩ বছরে পূর্ণতা লাভ করে।
পবিত্র হাদীছ শরীফে পবিত্র শবে বরাত শরীফ উনার বর্ণনা
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِـىْ خَـمْسِ لَيَالٍ اَوَّلُ لَيْـلَةٍ مِّنْ رَجَبَ وَلَيْـلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَلَيْـلَةُ الْقَدْرِ الْـمُبَارَكَةِ وَلَيْـلَتَا الْعِيْدَيْنِ
অর্থ: “নিশ্চয়ই দু’আ পাঁচ রাত্রিতে কবুল হয়। পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার পহেলা রাত্রি, পবিত্র শা’বান মাস উনার ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রি, পবিত্র ক্বদর শরীফ উনার রাত্রি এবং দুই ঈদ (পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আদ্বহা) উনাদের দুই রাত্রি।” (মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ)
পবিত্র শবে বরাত শরীফ সংক্রান্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ:
পবিত্র শবে বরাত সংক্রান্ত অসংখ্য অগণিত হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সমাজে কিছু লোক রয়েছে, যারা পবিত্র শবে বরাত সংক্রান্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ নিয়ে চু-চেরা কিল-কাল করে। তাদের জন্য উল্লেখ্য যে, তাদের কথিত আলেম আলবানীর একটি কিতাব, যা তথাকথিত বাতিল ফিরক্বাহ ছালাফীদের কাছে খুবই সমাদৃত, যার নাম হচ্ছে- “সিলসিলাতু আহাদীছিছ ছহীহা”। উক্ত কিতাবে পবিত্র লাইলাতুল বরাত শরীফ উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে ছহীহ বলে স্বীকার করে লিখেছে,
حَدِيْثٌ صَحِيْحٌ ، رُوِىَ عَنْ جَمَاعَةٍ مِّنَ الصَّحَابَةِ مِنْ طُرُقٍ مُـخْتَلِفَةٍ يَشُدُّ بَعْضُهَا بَعْضًا وَهُمْ مُعَاذُ ابْنُ جَبَلٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالى عَنْهُ وَاَبُـوْ ثَـعْلَبَةَ الْـخَشَنِىُّ رَضِىَ اللهُ تَـعَالى عَنْهُ وَعَبْدُ اللهِ بْنُ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَـعَالى عَنْهُ وَاَبُوْ مُوْسَى الْاَشْعَرِىُّ رَضِىَ اللهُ تَـعَالى عَنْهُ وَاَبُوْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالى عَنْهُ وَاَبُـوْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَعَوْفُ ابْنُ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالى عَنْهُ وَاُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةُ الصِّدِّيْـقَةُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ
“পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ। কেননা এক জামায়াত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে বিভিন্ন সূত্রে নিছফে শা’বান উনার মর্যাদার একাধিক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা মজবুতি লাভ করেছে। যে সকল হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে উনারা হলেন, হযরত মু’আয ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবু সালাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবু মূসা আল আশ’আরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম, হযরত আউফ বিন মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম। (এছাড়াও অনেক আকাবির ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন।) (সিলসিলাতু আহাদীছিছ ছহীহা ৩য় খন্ড ১৩৫ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নম্বর ১১৪৪)
পবিত্র শবে বরাত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদেরকে আহবান করেন
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَلْاِمَامِ الْاَوَّلِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا كَانَتْ لَيْـلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَـقُوْمُوْا لَيْـلَهَا وَصُوْمُوْا يَـوْمَهَا فَاِنَّ اللهَ يَـنْزِلُ فِيْـهَا لِغُرُوْبِ الشَّمْسِ اِلى سَـمَاءِ الدُّنْـيَا فَـيَـقُوْلُ اَلَا مِنْ مُسْتَـغْفِرٍ فَاَغْفِرَ لَهٗ اَلَا مُسْتَـرْزِقٌ فَاَرْزُقَهٗ اَلَا مُبْـتَـلًى فَاُعَافِيَهٗ اَلَا كَذَا اَلَا كَذَا حَتّٰى يَطْـلُعَ الْفَجْرُ. وَفِىْ رِوَايَةٍ اُخْرى هَلْ مِنْ تَائِبٍ فَاَتُـوْبُ عَلَيْهِ هَلْ مِنْ سَائِلٍ فَاَعْطِيْهِ مَسْئُـوْلَهٗ اَلَا كَذَا اَلَا كَذَا حَتّٰى يَطْلُعَ الْفَجْرُ
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন পবিত্র শা’বান মাস উনার ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাত শরীফ উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত বরকতপূর্ণ রাত্রি উনার মধ্যে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত বরকতপূর্ণ রাত্রি উনার মধ্যে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো। কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো। এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা মুবারক করতে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! অন্য বর্ণনায় এসেছে, কোন তওবাকারী আছো কি? আমি তার তওবা কবুল করব। কোন প্রার্থী আছো কি? আমি তার প্রার্থীত বিষয় দিয়ে দিব। এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা মুবারক করতে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র শবে বরাত শরীফ ফায়সালার রাত্রি
আমাদের এক বছরের মূলত: জিন্দেগীর ফায়সালা হবে। কারো ভালাই ফায়সালা হওয়া মানে তার পরিবার, ঘনিষ্ঠজনদেরও ভালো ফায়সালা হওয়া। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
فِيْـهَا يُـفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍ حَكِيْمٍ
অর্থ: “উক্ত রাত্রি উনার মধ্যে প্রজ্ঞাসম্পন্ন সব বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়।”
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ اَلصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ هَلْ تَدْرِيْنَ مَا هَذِهِ اللَّيْـلَةُ يَـعْنِيْ لَيْـلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ قَالَتْ مَا فِيْـهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـقَالَ فِيْـهَا اَنْ يُّكْتَبَ كُلُّ مَوْلُوْدٍ مِّنْ بَنِىْ آدَمَ فِـىْ هذِهِ السَّنَةِ وَفِيْهَا اَنْ يُّكْتَبَ كُلُّ هَالِكٍ مِّنْ بَنِىْ آدَمَ فِـىْ هذِهِ السَّنَةِ فِيْـهَا تُـرْفَعُ اَعْمَالُـهُمْ وَفِيْـهَا تُـنْـزَلُ اَرْزَاقُـهُمْ
অর্থ: “পবিত্র শবে বরাত শরীফ উনার মধ্যে ফায়ছালা করা হয় কতজন সন্তান আগামী এক বছরে জন্মগ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান মৃত্যুবরণ করবে। এ রাত্রি উনার মধ্যে বান্দাদের আমলসমূহ উপরে উঠানো হয় অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার শাহী দরবার শরীফ-এ পেশ করার ফয়সালা করা হয় এবং এ রাত্রি উনার মধ্যে বান্দাদের রিযিকেরও ফায়সালা করার জন্য পেশ করা হয়।” সুবহানাল্লাহ! (বায়হাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু বলেছেন যে, বরকতময় রাত্রি উনার মধ্যে সব কাজের ফায়ছালা করা হয় আর উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও যেহেতু বলেছেন যে, পবিত্র শবে বরাত শরীফ উনার মধ্যেই সব বিষয় যেমন- হায়াত, মউত, রিযিক, দৌলত, আমল ইত্যাদি যা কিছু মানুষের প্রয়োজন হয়ে থাকে তার ফায়ছালা করা হয় সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, “পবিত্র সূরা দুখান শরীফ” উনার উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা পবিত্র শবে বরাত শরীফ উনাকেই বুঝানো হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (২৭)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তাওয়াক্কুল তথা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভরসা করার ফযীলত
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)