পবিত্র যাকাত-ফিতরা, উশর আদায়ের হুকুম আহকাম ও মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক
, ২৮ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২০ হাদি ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২০ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রি:, ৭ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
بُنِيَ الإِسْلامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ.
অর্থ: সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ভিত্তি পাঁচটি যথা- (১) সাক্ষ্য দেয়া যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (২) নামায কায়িম করা (৩) যাকাত আদায় করা (৪) হজ্জ পালন করা (৫) এবং পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার রোযা রাখা।”(বুখারী শরীফ)
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৫টি স্তম্ভের মধ্যে ৩য় বা মধ্যবর্তী স্তম্ভ যাকাত যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাকাত ছাড়া সম্মানিত দ্বীন ইসলাম নামক ঘর প্রতিষ্ঠিত করা ও টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। একটি খুঁটি না থাকলে ঘর সেদিকে কাত হয়ে যায়। আর মাঝখানের খুঁটি যদি না থাকে তাহলে ঘর ধ্বসে পড়বে। কাজেই প্রত্যেক ধনী মুসলমানের উপর পবিত্র যাকাত আদায় করা ফরয।
যাকাত: যদি কারও নিছাব পরিমাণ সম্পত্তি অর্থাৎ ৫২.৫ তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য-যা এ বছর ৫৫,০৭৩ টাকার সম্পদ যদি কারো মালিকানায় পূর্ণ এক বছর থাকে তাহলে উক্ত সম্পদের শতকরা ২.৫ ভাগ যাকাত হিসেবে আদায় করা ফরয।
যিনি মালিকে নিছাব তিনি যাকাত দিবেন ৪০ ভাগের ১ ভাগ, অর্থাৎ শতকরা ২.৫%। প্রত্যেক হিজরী বছরে ১ বার। উল্লেখ্য, মালে তেজারত নিছাব পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে। যদি বছর পূর্ণ হয়।
উশর: উশর শব্দটি এসেছে ‘আশরাতুন’ শব্দ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে ১০ ভাগের ১ ভাগ। উশর হচ্ছে ফল-ফসলাদির যাকাত।
সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে পবিত্র উশর উনার কোন নিছাব নেই। বিনা পরিশ্রমে যমীন থেকে উৎপাদিত ফল-ফসলাদির ১০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি আম গাছে কোন পরিশ্রম ছাড়াই বছরের পর বছর আম হয়। এক্ষেত্রে, ১০০ টি আম হলে উশর দিতে হবে ১০টি আম বা তার মূল্য। আর পরিশ্রম করে ফল-ফসলাদি ফলানো হলে তখন ২০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: ধান, গম ইত্যাদির ক্ষেত্রে। যদি কোন জমিতে ১০০ মণ ধান হয় তবে উশর দিতে হবে ৫ মণ বা তার মূল্য।
যিনি ফল-ফসলাদি লাভ করবেন তিনিই উশর দিবেন। বিনা পরিশ্রমে হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ। আর পরিশ্রম করে হলে ২০ ভাগের ১ ভাগ। যখন ফল-ফসলাদি তোলা হবে তখনই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে। এবং যতবার ফল-ফসলাদি তোলা হবে ততবারই তার উশর (১০ ভাগের ১ভাগ) বা নিছফে উশর (২০ভাগের ১ভাগ) দিতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ
অর্থ: তোমরা ফসল কাটার সময় তার হক (উশর) আদায় করো। (সূরা আনাম শরীফ :১৪৬)
ফিতরা: ফিতরাও এক প্রকার যাকাত। যাকে ‘ছদাক্বাতুল ফিতর’ বা ‘যাকাতুল ফিতর’ বলা হয়। ফিতরা শব্দটা এসেছে ‘ইফতার’ থেকে। ইফতার হচ্ছে রোযা বিরতী দেওয়া। আমরা পবিত্র ঈদের দিন রোযা বিরতী করি, অর্থাৎ ঈদের দিন ছুবেহ ছাদিকের সময় ফিতরা ওয়াজিব হয়। পরিবারের সবাইকে অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড়, গোলাম-আযাদ সবাইকে ফিতরা দিতে হবে। যিনি পরিবারের কর্তা তিনি বর্তমান হিসেবে প্রায় ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা এর সমপরিমাণ মূল্য ফিতরা দিবেন।
উল্লেখ্য, বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এ বছর অর্থাৎ ১৪৪৪ হিজরী সনে ফিতরার পরিমাণ হচ্ছে, প্রত্যেকের জন্য ১১৩ টাকা করে।
রোযা শেষ হলে পবিত্র ঈদের নামাযের আগেই ফিতরা দিতে হয়। তবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত মুবারক হচ্ছে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যেই ফিতরা আদায় করা যা ৭০ গুণ বেশি ফযীলত মুবারক লাভের কারণ।
তা না হলে রোযার মধ্যে যে ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে সে কারণে রোযা আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তা পৌঁছেনা বা কবুল হয় না। কাজেই যথাসময়েই ফিতরা আদায় করতে হবে।
যাকাত দিলে যে নিয়ামত মুবারক লাভ করা যায় সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
خُذْ مِنْ أَمْوَٰلِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ ۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
অর্থ:“(ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি তাদের মাল-সম্পদ থেকে ছদক্বাহ (যাকাত,ফিতরা ইত্যাদি) গ্রহণ করুন, তা গ্রহণের মাধ্যমে আপনি তাদেরকে পবিত্র করুন ও পরিশুদ্ধ করুন এবং তাদের জন্য দু’আ মুবারক করুন। নিশ্চয়ই আপনার দু’আ মুবারক তাদের জন্যে প্রশান্তি লাভের কারণ হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সব কিছু শোনেন এবং সবকিছু জানেন।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ:১০৩)
উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ৪ খানা বিশেষ নেয়ামত মুবারক উনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে,
(১) ত্বহারাত বা পবিত্রতা অর্জন হয়
(২) তাযকিয়া বা পরিশুদ্ধি হাছিল হয়
(৩) সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া মুবারক পাওয়া যায় ও
(৪) কামিয়াবী অর্জন হয়, প্রশান্তি লাভ হয়-দুনিয়া ও আখিরাতে ।
যাকাত শুধু যেখানে সেখানে বা যাকে তাকে দিলে আদায় হবে না, যাচাই করে হক্ব স্থানে প্রদানের ব্যবস্থাও করতে হবে; যেখানে দিলে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হন। আর বর্তমানে সেই হক্ব স্থান হচ্ছে মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহবোর্ডিং যা যাকাত, ফিতরা, উশর, মান্নত, দান-ছদক্বা ইত্যাদি প্রদানের শ্রেষ্ঠ ও একমাত্র হক্ব স্থান। যেখানে যাকাত দিলে তা নিঃসন্দেহে কবুল হবে। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই সকলের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে যাকাত, ফিতরা, ওশর, দান-ছদক্বা, মান্নত, কাফফারা ইত্যাদি নিঃসন্দেহে কবুল হওয়ার একমাত্র হক্ব স্থান, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহবোর্ডিয়ে দ্রুত পৌঁছানো। মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে সেই তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবারের পাত্র কাঠের বাটি বা পেয়ালা
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী চামড়ার বালিশ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নত মুবারক পালনে কোন হীনম্মন্যতা নয়, বরং সব পরিবেশেই দৃঢ়চিত্ত থাকতে হবে
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা ও মুহাব্বত মুবারকে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)