পবিত্র যাকাত আদায় না করার ভয়াবহ কঠিন অবস্থা!
, ১৯ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩১ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ৩০ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ১৬ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
অতঃপর ঐ দু’জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র মদীনা শরীফে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করার পূর্বেই তিনি পূর্বের কথা মুবারক উচ্চারণ করলেন-
يَا وَيْحُ ثَعْلَبَةَ يَا وَيْحُ ثَعْلَبَةَ يَا وَيْحُ ثَعْلَبَةَ
অর্থ: হায় দুর্ভাগ্য ছা’লাবার! হায় আফসূস ছালাবার! হায় ধ্বংস ছালাবার! এই কথা মুবারক তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন। অতঃপর ঐ দু’জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ছা’লাবার সব ঘটনা অবহিত করার পর মহান আল্লাহ পাক তিনি এই আয়াত শরীফ নাযিল করলেন-
وَمِنْهُم مَّنْ عَاهَدَ اللهَ لَئِنْ اَتَانَا مِن فَضْلِهٖ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُوْنَنَّ مِنَ الصَّالِحِيْنَ. فَلَمَّا اتَاهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ بَخِلُوا بِهٖ وَتَوَلَّوا وَّهُم مُّعْرِضُوْنَ. فَأَعْقَبَهُمْ نِفَاقًا فِيْ قُلُوبِهِمْ إِلٰى يَوْمِ يَلْقَوْنَهٗ بِمَا أَخْلَفُوا اللهَ مَا وَعَدُوْهُ وَبِمَا كَانُوا يَكْذِبُوْنَ.
অর্থ: তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে অঙ্গীকার করেছে যে, যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের সম্পদ দান করেন, তাহলে আমরা অবশ্যই দান খয়রাত করবো এবং অবশ্যই নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হবো। অতঃপর যখন (মহান আল্লাহ পাক তিনি) তাদেরকে সম্পদ দান করলেন, তখন তারা এই বিষয়ে বখীলী তথা কার্পণ্য করল ও মুখ ফিরিয়ে নিল এবং তারা অস্বীকারও করলো। নাঊযুবিল্লাহ! এর পরিণামে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের অন্তরে শাস্তিস্বরূপ মুনাফিকী সৃষ্টি করে দিলেন তথা বদ্ধমূল করলেন মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ দিবস পর্যন্ত। (অর্থাৎ মুনাফিকদের সাথে কস্মিনকালেও মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ হবে না। কাজেই মুনাফিকদের শাস্তি অনন্তকাল পর্যন্ত চলতেই থাকবে) কারণ তারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে যে অঙ্গীকার তথা ওয়াদা করেছিল তা ভঙ্গ করেছিল এবং এই কারণে যে তারা মিথ্যা বলত। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, আয়াত শরীফ: ৭৫, ৭৬, ৭৭)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের সময় ছা’লাবার এক আত্মীয় একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি উপরোক্ত ঘটনা ছা’লাবাকে জানালে, ছা’লাবা তখন সম্মানিত যাকাত উনার মাল-সম্পদ নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে তা গ্রহণের জন্য আবেদন জানালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন জওয়াব মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন- হে ছা’লাবা!
اِنَّ اللهَ مَنَعَنِـىْ اَنْ اَقْبَلَ مِنْكَ صَدَقَتَكَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে তোমার যাকাত তথা যাকাতের মাল গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!
এটা শুনে ছা’লাবা তখন মাথায় মাটি মাখাতে শুরু করলো এবং মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কান্নাকাটি করতে লাগলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন বললেন-
هٰذَا عَمَلُكَ قَدْ اَمَرْتُكَ لَـمْ تُطِعْنِـىْ
(হে ছা’লাবা তোমার জন্য আফসুস!) এটা তোমার আমলেরই পরিণাম! তোমার আমলেরই বদলা। আমি তোমাকে বলেছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে মান্য করনি। তুমি গুরুত্ব দাওনি! সময়মত তুমি আমার কাছে পবিত্র যাকাত পাঠাওনি! তোমার যাকাত আর গ্রহণ করা হবেনা! আর গ্রহণ করা হবেনা! এরপর সে ফিরে গেল।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর এই ছা’লাবা পরবর্তীতে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম, তারপরে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম, তারপরে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের পবিত্রতম খিলাফতকাল পর্যন্ত তার যাকাতের অনেক মাল সম্পদ নিয়ে এসে তা গ্রহণের জন্য আবেদন করলেও উনারা কেউই তার কাছ থেকে যাকাত গ্রহণ করেননি। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু তার যাকাত গ্রহণ করেননি, যেহেতু সে জীবন্ত ও কুখ্যাত মুনাফিক হিসাবে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা ঘোষিত। আর কাফির মুশরিক ও মুনাফিকদের কাছ থেকে যাকাত গ্রহণ করাও হারাম এবং তাদেরকে প্রদান করাও হারাম।
অবশেষে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্রতম খিলাফতকালে এই কুখ্যাত জীবন্ত মুনাফিক ছা’লাবা ইবনে হাতিবের মৃত্যু হয়। আল্লামা ছাবুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ছা’লাবা নামে যে একজন বদরী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন- তিনি নন বরং এই ছা’লাবা এক কুখ্যাত ও জীবন্ত মুনাফিক ছিলো। সে ছা’লাবা নিঃস্ব ও গরীব ছিল। পরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম দোয়া মুবারক উনার বদৌলতে অতি অল্প সময়ে সে অনেক সম্পদের মালিক হয়ে যায়। পরে পবিত্র যাকাত উনার পবিত্রতম আয়াত শরীফ নাযিল হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চিঠি মুবারক লিখে দু’জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পবিত্র যাকাত আদায়ের জন্য পাঠালে তখন এই ছা’লাবা পবিত্র যাকাতকে জিযিয়া করের সাথে তুলনা করে না দেয়ার জন্য বিভিন্ন টাল-বাহানা শুরু করে। সে বলতে থাকে পরে আসেন এখন না অন্যদের কাছে যান- ভেবে দেখি কি করা যায়। পরিশেষে আবার তার কাছে আসলে সে বলে আপনারা চলে যান এটাতো জিযিয়ার মতোই, জিযিয়া, এটাতো জিযিয়ারই মতো মনে হচ্ছে- ভেবে দেখি কি করা যায়। নাউযুবিল্লাহ! এইরুপ চরম বেয়াদবী, পবিত্র যাকাত নিয়ে টাল-বাহানা, প্রতারণা, না শোকরের ফলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিনভাবে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে ছা’লাবাকে জীবন্ত কুখ্যাত মুনাফিক ঘোষনা করে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন। পরে হাজারো কান্নাকাটি করেও তার কোন ফল হয়নি। যাকাত নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। নাউযুবিল্লাহ! এই ঘটনা কায়িনাতবাসীদের জন্য এক বিরাট ইবরত ও নছীহত।
বিশেষভাবে স্মরনীয় যে, সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হাক্বীক্বী মিছদাকে রসূল হিসেবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুবহু পবিত্রতম অনুসরণ ও অনুকরণে হযরত খুলাফায়ে রাশিদ্বীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী মিছদাক্ব হিসেবে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র যাকাত ব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে কায়িমের লক্ষে চিঠি লিখে এবং প্রতিনিধি পাঠিয়ে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াত উনার পন্থায় অভূতপূর্ব তাজদীদ মুবারক- পবিত্র যাকাত আদায়ে যে সাড়া জাগানো আহবান মুবারক তথা ডাক মুবারক দিয়েছেন, এই বিশাল আঞ্জামে যারা সাড়া দিবেনা, যারা পবিত্র ফরয যাকাত প্রদান করবে না, প্রদানে অস্বীকার করবে, পাঠানো প্রতিনিধির সাথে প্রতারণা করবে, তাদের উচিত কুখ্যাত জীবন্ত মুনাফিক ছা’লাবা ইবনে হাতিবের ঘটনাকে মর্মে মর্মে স্মরণ করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা আমাদের সবাইকে তা থেকে হিফাযত করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)