পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার আহকাম (৯)
পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত
, ০৮ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩১ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ৩১ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(পূর্ব প্রকাশিত পর)
পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যে
মু’মিন-মুসলমানের করণীয় বিষয়াবলী
মহিমান্বিত মাসসমূহের মধ্যে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ অন্যতম। এ পবিত্র মাস উনার মধ্যে ইবাদত-বন্দেগীর ফযীলত অন্যান্য মাসের চেয়ে বহুগুণ বেশি। এ মাস উনার মধ্যে বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার, ইবাদত-বন্দেগী করে তাক্বওয়া হাছিলের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের রেজামন্দি-সন্তুষ্টি হাছিল করাই সকলের দায়িত্ব-কর্তব্য।
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যে ইবাদতের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ اٰدَمَ لَهُ اِلَّا الصّيَامَ فَاِنَّهُ لِيْ وَاَنَا اَجْزِيْ بِه. وَالصّيَامُ جُنَّةٌ وَاِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ اَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ فَاِنْ سَابَّهُ اَحَدٌ اَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ اِنّـي امْرُؤٌ صَائِمٌ. وَالَّذِيْ نَفْسُ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِه لَـخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ اَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا اِذَا اَفْطَرَ فَرِحَ وَاِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আদম সন্তানের রোযা ব্যতীত প্রত্যেক নেক আমল তার নিজের জন্য। কেননা, রোযা একমাত্র আমারই জন্য রাখা হয় এবং তার প্রতিফল আমি নিজেই (যত ইচ্ছা) দান করব। সম্মানিত রোযা সমস্ত মন্দ কাজ তথা জাহান্নাম হতে বাঁচার ঢালস্বরূপ। যখন তোমাদের কেউ রোযা রাখবে তখন সে অশ্লীলতা ও ঝগড়া করবে না। তাকে যদি কেউ গালী দেয় বা তাকে হত্যা করতে চায়, সে বলবে আমি রোযাদার। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! যাঁর পবিত্রতম কুদরতী হাত মুবারক-এ আমার পবিত্রতম প্রাণ মুবারক, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সম্মানিত রোযাদারের মুখের ঘ্রাণ মিশ্কে আম্বরের সুঘ্রাণের চেয়েও বেশী পছন্দনীয়। সম্মানিত রোযাদারের জন্য দু’টি খুশি। যখন সে ইফতার করে তখন খুশি প্রকাশ করে আর যখন সে মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করবে তখনও খুশি প্রকাশ করবে।” (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : বাবু মা জায়া ফী ফাদ্বালিছ ছাওম : হাদীছ শরীফ নং ৭৬৪)
এ সম্পর্কে ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, রোযা এমন একটি ইবাদত যার ছওয়াবের পরিমাণ একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই ভালো জানেন।
আর তাই হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْوِيْهِ عَنْ رَبِّكُمْ قَالَ لِكُلّ عَمَلٍ كَفَّارَةٌ وَالصَّوْمُ لِي وَاَنَا اَجْزِيْ بِهِ وَلَـخَلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ اَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বর্ণনা মুবারক করেন, তোমাদের যিনি মহান রব তায়ালা উনার থেকে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রতিটি আমলের কাফ্ফারা রয়েছে, সে সব আমলের ক্রটি দূর করার জন্য। কিন্তু সম্মানিত রোযা আমার জন্যই, এতে লোক দেখানোর কিছু নেই। তাই আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে সম্মানিত রোযাদারের মুখের ঘ্রাণ মিস্কের চেয়েও বেশী সুঘ্রাণময়।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ : কিতাবুত তাওহীদ : বাবু যিকরিন নাবীয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া রিওয়াতিহি ‘আন রব্বিহি : হাদীছ শরীফ নং ৭৫৩৮)
সুতরাং পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলার নি¤œবর্ণিত বিষয়াবলী আমল করা উচিত-
১. পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার প্রতিটি রোযা রাখা।
২. পবিত্র তারাবীহ নামায প্রতিদিন নিয়মিত আদায় করা।
৩. পাঁচ ওয়াক্ত নামায পুরুষরা জামায়াতের সাথে আদায় করা এবং মহিলারা একাকী ঘরে আদায় করা।
৪. পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ খতম করা বা বেশি বেশি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।
৫. যিকির-আযকার করা।
৬. হালাল উপার্জন করা বা হালাল খাদ্য গ্রহণ করা।
৭. মিথ্যা কথা না বলা।
৮. হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা তথা সর্বদা নেককাজে মশগূল থাকা।
৯. আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদের ছোহবত ইখতিয়ার করা।
১০. খুরমা-খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা ও সাহরী শেষ করা।
১১. গরীব-মিসকীনদের খাওয়ানো বা সাহরী-ইফতার করানো।
১২. বেশি বেশি দান ছদক্বা করা।
১৩. পবিত্র যাকাত ও পবিত্র ফিতরা আদায় করা।
১৪. সর্বপ্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত থাকা।
১৫. প্রত্যেক ঘরে ঘরে রহমত-বরকতের জন্য অবশ্যই বেশি বেশি পবিত্র মীলাদ শরীফ-ক্বিয়াম শরীফ ও দুআ মাহফিলের ব্যবস্থা করা।
১৬. কাউকে কষ্ট না দেয়া।
১৭. টিভি চ্যানেল ও হারাম গান-বাজনা পরিহার করে হামদ শরীফ, না’ত শরীফ, ক্বাছীদা শরীফ শ্রবণ করা।
১৮. অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকা। কেননা সম্মানিত রোযাদারের চুপ থাকাটা তাসবীহ তুল্য।
১৯. দিনের বেলা প্রয়োজন বা পরিমাণ মতো ঘুমানো। কেননা সম্মানিত রোযাদারের ঘুমও ইবাদত তুল্য।
২০. সঠিক সময়ে সতর্কতার সাথে সাহরী ও ইফতার করা।
২১. সম্ভব হলে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশ দিন ই’তিকাফ করা। যা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া।
২২. শেষ দশ দিন বিজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর তালাশ করা। অর্থাৎ সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী ও দুআ ইস্তিগফার করা।
২৩. পবিত্র ঈদের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগী করা।
মোট কথা, পূর্ণ এক মাস সম্মানিত রোযা, ইবাদত-বন্দেগী, রিয়াযত-মাশাক্কাত, যিকির-ফিকির, ইলম অর্জনের মাধ্যমে তাক্বওয়া হাছিল করত আগামী দিনগুলোতেও একইভাবে তাক্বওয়ার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মত মুবারক অনুযায়ী মত ও পথ মুবারক অনুযায়ী পথে থাকার কোশেশ করাই সকলের দায়িত্ব-কর্তব্য। (সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)