পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত (২০)
, ১৩ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৫ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ১০ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে রাত বা রজনী। আর ‘ক্বদর’ শব্দের অর্থ হলো মহিমান্বিত বা মর্যাদাম-িত। এ রাতটি আমাদের এ উপমহাদেশে পবিত্র ‘শবে ক্বদর’ হিসেবে মশহূর।
এ রাতটির ফযীলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مّنْ اَلْفِ شَهْرٍ ◌
অর্থ : পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর হচ্ছে হাজার মাস থেকে উত্তম। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ক্বদর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْن حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصِدّيْقَةَ عَلَيْهَا السَّلَاَم قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَـحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الْاَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ.
অর্থ : উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে পবিত্র শবে ক্বদর বা লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করো। (বুখারী শরীফ : কিতাবু ফাদ্বলি লাইলাতিল ক্বদর : বাবু তার্হারী লাইলাতিল ক্বদরি ফিল উইতি মিনাল আশরি আওয়াখিরি : হাদীছ শরীফ নং ২০১৭)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত আছে-
عَنْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْن حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصِدّيْقَةَ عَلَيْهَا السَّلَامَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُـجَاوِرُ فِي الْعَشْرِ الْاَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ وَيَقُوْلُ تَـحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْعَشْرِ الْاَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ.
অর্থ : উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশকে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করো। (বুখারী শরীফ : কিতাবু ফাদ্বলিল লাইলাতুল ক্বদরি : বাবু তার্হারী লাইলাতিল ক্বদরি ফিল উইতি মিনাল আশরি আওয়াখিরি : হাদীছ শরীফ নং ২০২০)
পবিত্র শবে ক্বদর বা লাইলাতুল ক্বদর দুআ কবুলের পাঁচ রাত্রির মধ্যে অন্যতম রাত্রি। এই রাত্রিতে বান্দা-বান্দি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে যা আরজি করে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে তা দিয়ে থাকেন প্রয়োজন অনুসারে। বান্দা-বান্দির সকল দুআই এ রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করে থাকেন। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَدْعُوْنِـيْ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ
অর্থ : তোমরা আমার নিকট দুআ করো আমি তোমাদের দুআ কবুল করবো। (পবিত্র সূরা মুমিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬০)
তাই প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলার দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশ দিনের প্রতি বিজোড় রাত্রিতে জাগ্রত থেকে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর তালাশ করা। রাত্রিতে জাগ্রত থেকে বেশি বেশি তওবা ইস্তিগফার করে, ইবাদত-বন্দেগীতে কাটানো এবং সকল মুসলমানের জন্য দুআ করা। যার মনে যতো আরজি রয়েছে তা মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে পেশ করা। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট চায় না বা দুআ করেনা মহান আল্লাহ পাক তিনি তার উপর অসন্তুষ্ট হন। কাজেই সকলের উচিত মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপর, সম্মানিত ঈমান উনার উপর ইস্তিক্বামত থাকার জন্য, সর্বোপরি দুনিয়া এবং আখিরাতের সর্বপ্রকার কল্যাণের জন্য অন্তর থেকে দুআ করা। অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে এই মহিমান্বিত রাত্রি উনার সম্মানার্থে তা দান করবেনই করবেন। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা। সুবহানাল্লাহ!
বি. দ্র. হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র ২৭শে রমাদ্বান শরীফ উনার রাতকে অর্থাৎ ২৬ তারিখ দিবাগত রাতকে পবিত্র শবে ক্বদর হিসেবে অধিক সম্ভাব্য বলার কারণে উনার মাযহাবের অনুসারীগণ যদিও ২৭ তারিখ রাতে বিশেষভাবে পবিত্র শবে ক্বদর তালাশ করে থাকেন তবে সুন্নত হলো পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতেই পবিত্র শবে ক্বদর তালাশ করা।
পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর উনার আমলসমূহ
পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর-এ সুন্নত-নফল অনেক আমলই করা যায়। তবে বিশেষভাবে কয়েকটি আমল করা উচিত। তা হলো:
১. পবিত্র শবে ক্বদর বা লাইলাতুল ক্বদর উনার নিয়তে ৪/৬/৮/১২ রাকাআত নামায পড়া।
২. পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা।
৩. পবিত্র ছলাতুত তাসবীহ উনার নামায আদায় করা।
৪. যিকির-আযকার করা।
৫. পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা
৬. পবিত্র তাহাজ্জুদ উনার নামায পড়া।
৭. বেশি বেশি তওবা ইস্তিগফার এবং মুনাজাত করা, মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে রোনাজারি-কান্নাকাটি করা।
৮. পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করত দুআ-মুনাজাত করা।
পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর উনার নামাযের নিয়ত
نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة ليلة القدر سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রকা’আতাই ছলাতি লাইলাতিল ক্বদরি সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ : আমি ক্বিবলামুখী হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার উদ্দেশ্যে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর উনার দু’রাকাআত সুন্নত নামায উনার নিয়ত করছি- আল্লাহু আকবার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)