পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত (১৫)
, ০৭ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৯ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০৪ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত-
عَنْ حَضْرَتْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيَّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي اٰخِرِ يَوْمٍ مِنْ شَعْبَانَ فَقَالَ يا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ اَظَلَّكُمْ شَهْرٌ عَظِيمٌ شَهْرٌ مُبَارَكٌ شَهْرٌ فِيْهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ جَعَلَ اللهُ صِيَامَه فَرِيضَةً وَقِيَامَ لَيْلِه تَطَوُّعًا مَنْ تَقَرَّبَ فِيْهِ بِـخَصْلَةٍ مِنَ الْـخَيْرِ كَانَ كَمَنْ اَدّى فَرِيْضَةً فِيْمَا سِوَاهُ وَمَنْ اَدّى فَرِيْضَةً فِيْهِ كَانَ كَمَنْ اَدّى سَبْعِيْنَ فَرِيْضَةً فِيْمَا سِوَاهُ وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ وَالصَّبْرُ ثَوَابُه الْـجَنَّةُ، وَشَهْرُ الْمُوَاسَاةِ وَشَهْرٌ يُزَادُ فِي رِزْقِ الْمُؤْمِنِ مَنْ فَطَّرَ فِيهِ صَائِمًا كَانَ لَه مَغْفِرَةً لِذُنُوبِه وَعِتْقَ رَقَبَتِه مِنَ النَّارِ وَكَانَ لَه مِثْلُ أَجْرِه مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْقَصَ مِنْ أَجْرِه شَيْءٌ قُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ كُلُّنَا يَـجِدُ مَا يُفْطِرُ الصَّائِمَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْطِي اللهُ هذَا الثَّوَابَ مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا عَلى مَذْقَةِ لَبَنٍ اَوْ تَـمْرَةٍ اَوْ شَرْبَةٍ مِنْ مَاءٍ وَمَنْ اَشْبَعَ صَائِمًا سَقَاهُ اللهُ مِنْ حَوْضِي شَرْبَةً لَّا يَظْمَأُ حَتّٰى يَدْخُلَ الْـجَنَّةَ وَهُوَ شَهْرٌ اَوَّلُه رَحْـمَةٌ وَاَوْسَطُه مَغْفِرَةٌ وَاٰخِرُه عِتْقٌ مِنَ النَّارِ مَنْ خَفَّفَ عَنْ مَـمْلُوكِه فِيْهِ غَفَرَ اللهُ لَه وَاَعْتَقَهُ مِنَ النَّارِ.
অর্থ : হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার শেষ দিন আমাদের নিকট খুৎবা মুবারক দিতেন বা পবিত্র ওয়াজ শরীফ করতেন। (উক্ত খুৎবা মুবারক-এ) তিনি ইরশাদ মুবারক করতেন, হে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! নিশ্চয়ই আপনাদের নিকট এক মহান মাস (রমাদ্বান শরীফ মাস) উপস্থিত। এ মাসে এমন একটি রাত্র রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার রোযাকে ফরয করেছেন ও পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার রাত্রি বেলায় কিয়ামুল লাইল আদায় করার ইখতিয়ার দিয়েছেন অর্থাৎ তারাবীহ্ নামাযকে সুন্নত করেছেন।
যে ব্যক্তি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে একটি নফল আমল করলো, সে যেন অন্য সময়ের একটি ফরয আদায় করলো, আর যে ব্যক্তি একটি ফরয আদায় করলো, সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরয আদায় করলো। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস হলো ছবর বা ধৈয্যের মাস, আর ছবরের বিনিময় হলো সম্মানিত জান্নাত, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস সহানুভূতির মাস। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস এমন মাস, যে মাসে মু’মিন উনাদের রিযিক বৃদ্ধি করা হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন রোযাদারকে ইফ্তার করাবেন, তা উনার জন্যে গুণাহ্ মাফ ও দোযখের আগুন হতে মুক্তির কারণস্বরূপ হবে। আর তিনি সম্মানিত রোযাদারের সমান ছওয়াব পাবেন, অথচ সম্মানিত রোযাদারের ছওয়াবও কম হবেনা। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের প্রত্যেকের তো এমন সামর্থ নেই, যদ্বারা সম্মানিত রোযাদারকে ইফ্তার করাবো। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি এ ছওয়াব দান করবেন তাঁকে, যিনি এক চুমুক দুধ দ্বারা অথবা একটি খেজুর দ্বারা অথবা এক চুমুক পানি দ্বারা কোন সম্মানিত রোযাদারকে ইফ্তার করাবেন। আর যে ব্যক্তি তৃপ্তি সহকারে সম্মানিত রোযাদারকে খাদ্য খাওয়াবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে আমার হাউজে কাওছার হতে পানি পান করাবেন, যার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত তার পিপাসা লাগবেনা। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস এমন এক মাস, যে মাস উনার প্রথম দশদিন “রহ্মত” দ্বিতীয় দশদিন “মাগফিরাত” আর তৃতীয় দশদিন হচ্ছে জাহান্নাম হতে নাযাত পাওয়ার। আর যে ব্যক্তি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে তার কর্মচারীর কাজ কমিয়ে দিবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ক্ষমা করবেন ও জাহান্নাম থেকে নাযাত দিবেন। সুবহানাল্লাহ! (বায়হাক্বী ফি শু’বিল ঈমান)
পবিত্র ছলাতুত তারাবীহ উনার আহকাম
‘তারাবীহ’ শব্দটি বহুবচন। একবচনে ‘তারবীহাতুন’। এর অর্থ হচ্ছে বিশ্রাম নেয়া বা আরাম করা। পাঁচ তারবীহাতুন মিলে এক তারাবীহ। অর্থাৎ, চার রাকাআত পর পর বসে দুআ, দুরূদ ও তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে বিশ্রাম নিয়ে বিশ রাকাআত নামায আদায় করা হয় বলে এর নামকরণ করা হয়েছে ‘তারাবীহ’।
মাসআলা:
তারাবীহ্ নামায বিশ রাকাআত। পুরুষ-মহিলা প্রত্যেকের জন্যই এ নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। বিশ রাকাআত থেকে কেউ যদি এক রাকাআতও কম পড়ে তাহলে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার কারণে ওয়াজিব তরকের গুনাহে গুনাহগার হবে। তবে পুরুষের জন্য তারাবীহ নামায উনার জামায়াত হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। অর্থাৎ কিছু লোক জামায়াতে আদায় করলেই সকলের সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আদায় হয়ে যাবে।
তারাবীহ নামায বিশ রাকাআত পড়ার দলীল
আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামাআত উনাদের ফতওয়া মুতাবিক তারাবীহ উনার নামায বিশ রাকাআত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি বিশ রাকাআত থেকে এক রাকাআতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুনাহ হবে। অর্থাৎ তারাবীহ নামায বিশ রাকাআতই পড়তে হবে। এর উপরই ইজমা হয়েছে।
যারা তারাবীহ উনার নামায ৮ রাকাআত বলে থাকে, তারা বুখারী শরীফ-এ বর্ণিত “তাবিয়ী হযরত আবূ সালমাহ্ ইবনে আব্দুর রহ্মান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা দলীলস্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْـمَنِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّهُ اَخْبَرَهُ اَنَّهُ سَاَلَ اُمّ الْمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصّـدّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامَ كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزِيْدُ فِىْ رَمَضَانَ وَلَا فِىْ غَيْرِهِ عَلَى اِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلّى اَرْبَعًا.
অর্থ : তাবিয়ী হযরত আবূ সালমাহ্ ইবনে আব্দুর রহ্মান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি একদা উম্মুল মু’মিমীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে কত রাকায়াত নামায পড়তেন? তখন উম্মুল মু’মিমীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে ও পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত অন্য মাসে এগার রাকায়াতের অধিক নামায পড়তেন না। আর তিনি তা চার, চার রাকায়াত করে পড়তেন। (বুখারী শরীফ : কিতাবুত তারাউয়ীহ : বাবু ফাদ্বলি মান ক্বামা রমাদ্বান : হাদীছ শরীফ নং ২০১৩)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)