পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত (১৩)
, ০৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০২ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
* জরুরত আন্দাজ খাওয়া-দাওয়া করার পর বেজোড় সংখ্যক খুরমা-খেজুর খাওয়া খাছ সুন্নত।
সাহরীতে কোন খাদ্য উত্তম সে বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نِعْمَ سَحُوْرُ الْمُؤْمِنِ التَّمْرُ.
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিনদের সাহরীতে সর্বোত্তম খাবার হচ্ছে খেজুর। (আবূ দাউদ শরীফ : কিতাবুস সিয়াম : বাবু মান সাম্মাসাখুরাল গদা : হাদীছ শরীফ নং ২৩৪৫)
আমরা সাধারণত ভাত-মাছ বা ভাত-গোশত খেয়ে থাকি। তাই সাহরীতে সর্বশেষ খাবার হিসেবে খেজুর খেলে এই খাছ সুন্নত মুবারক আদায় হয়ে যাবে। এখন কারো আর্থিক অসচ্ছলতা থাকলে সর্বশেষ খাবার হিসেবে পরিবারের সবাই মিলে ১টি খেজুরও যদি খায়, তাহলেও এই সুন্নত মুবারক আদায় হয়ে যাবে।
* রাতের শেষভাগে সাহরী করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্র রোযা উনার নিয়ত
نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان الـمبارك فرضا لك يا الله فتقبل منى انك انت السميع العليم.
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম মিং শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আংতাস সামীউল আলীম।
অর্থ : আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকালের পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার ফরয রোযা রাখার নিয়ত করছি। আমার তরফ থেকে আপনি তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত।
মাসআলা :
কেউ যদি ছুবহি ছাদিক্বের পূর্বে নিয়ত করতে ভুলে যায় তাহলে তাকে দ্বিপ্রহরের পূর্বে নিয়ত করতে হবে। তখন এভাবে নিয়ত করবে:
نويت ان اصوم اليوم من شهر رمضان الـمبارك فرضا لك يا الله فتقبل منى انك انت السميع العليم.
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমাল ইয়াওমা মিন শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আংতাস সামীউল আলীম।
ইফতারের পরিচয়
ইফতার অর্থ ভঙ্গ করা। সূর্যাস্ত হওয়ার সাথে সাথে তথা মাগরিবের আযানের সাথে সাথে খুরমা-খেজুর, দুধ, শরবত, পানি ইত্যাদি দ্বারা পানাহারের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলে।
ইফতারের দুআ
اللهم لك صمت و على رزقك افطرت.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু।
অর্থ : আয় মহান আল্লাহ পাক! আমি আপনারই সন্তুষ্টির জন্য রোযা রেখেছি এবং আপনারই দেয়া রিযিক্ব দ্বারা ইফতার করছি।
ইফতারের সুন্নত আমল
ক্স খুরমা-খেজুর দ্বারা ইফতার শুরু করা খাছ সুন্নত।
সাহরীর মতো ইফাতারীতেও সর্বোত্তম খাবার হচ্ছে খেজুর। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنِهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُفْطِرُ قَبْلَ اَنْ يُصَلّيَ عَلٰى رُطَبَاتٍ فَاِنْ لَـمْ تَكُنْ رُطَبَاتٌ فَتُمَيْرَاتٍ فَاِنْ لَـمْ تَكُنْ تُـمَيْرَاتٌ حَسَا حَسَوَاتٌ مِنْ مَاءٍ.
অর্থ : হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মাগরিবের নামায আদায়ের পূর্বেই কয়েকটি তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না থাকতো তবে কয়েকটি শুকনা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি শুকনা খেজুরও না থাকতো তবে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা (ইফতার করতেন)। (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুস সিয়ামু ‘আন্না রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : বাবু মাজায়া মা ইউসতাহিব্বু ‘আলাইহি ইফত্বর : হাদীছ শরীফ নং ৬৯৬; আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুস সিয়াম : বাবু মা ইউফত্বরু ‘আলাইহি : হাদীছ শরীফ নং ২৩৫৬)
অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنِهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَ اَفْطَرَ اَحَدُكُمْ فَلْيُفْطِرْ عَلٰى تَـمْرٍ فَاِنَّه بَرَكَهٌ فَاِنْ لَّـمْ يَـجِدْ فَلْيُفْطِرْ عَلٰى مَاءٍ فَاِنَّه طُهُوْرٌ.
অর্থ : হযরত সালমান ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা, তাতে বরকত (কল্যাণ) রয়েছে। আর যদি খেজুর না পাওয়া যায়, তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা পবিত্রকারী। (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৬৯৫)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنِهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَفْطَرَ أَحَدُكُمْ فَلْيُفْطِرْ عَلَى تَـمْرَةٍ فَإِنْ لَـمْ يَـجِدْ فَلْيُفْطِرْ عَلَى الْمَاءِ فَإِنَّهُ طَهُورٌ.
অর্থ : হযরত সালমান ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। আর যদি খেজুর না পাওয়া যায়, তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা পবিত্রকারী। (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৬৯৯)
অন্যত্র বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنِهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ صَائِمًا فَلْيُفْطِرْ عَلَى التَّمْرِ فَإِنْ لَـمْ يَـجِدِ التَّمْرَ فَعَلَى الْمَاءِ فَإِنَّ الْمَاءَ طَهُورٌ.
অর্থ : হযরত সালমান ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন তোমাদের কেউ রোযা রাখে তখন সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। আর যদি খেজুর না পাওয়া যায়, তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা পবিত্রকারী। (আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৩৫৫)
সুতরাং ইফতারের সময় শুরুতেই খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নত। কারো আর্থিক অসচ্ছলতা থাকলে ইফতারীতে সর্বপ্রথম খাবার হিসেবে পরিবারের সবাই মিলে ১টি খেজুরও যদি খায়, তাহলে সম্মানিত সুন্নত মুবারক আদায় হয়ে যাবে। আর যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে পানি দ্বারা ইফতার করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে এবং পবিত্রতাও লাভ হবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)