পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত (১২)
, ১৫ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
নিম্নে লিখিত কাজসমূহ দ্বারা পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব হয়। যথা:
১. ইচ্ছাকৃত নির্জনবাস করলে।
২. স্বেচ্ছায় পানাহার করলে।
৩. স্বেচ্ছায় ওষুধ পান করলে কিংবা ইনজেকশন বা ইনহেলার নিলে।
৪. শিঙ্গা লাগানোর পর রোযা নষ্ট হয়েছে মনে করে পানাহার করলে।
৫. ধূমপান করলে। গুল-জর্দা খেলে।
ক্বাযা ও কাফফারা আদায় করার নিয়ম
ক্বাযা : একটি রোযা উনার জন্য একটি রোযা আদায় করা।
কাফফারা : একটি রোযা উনার জন্য দু’মাস ধারাবাহিক রোযা রাখা অথবা ষাটজন মিসকীনকে দু’বেলা তৃপ্তিসহকারে খাদ্য খাওয়ানো বা খাদ্য দান করা।
খাদ্য দানের পরিমাণ হচ্ছে প্রতি রোযা উনার জন্য এক ফিতরা পরিমাণ। তবে দু’ কেজি আটা বা তার সমপরিমাণ মূল্য দেয়া উত্তম। অথবা কোন গোলাম আযাদ করা।
সন্তানসম্ভবা ও দুগ্ধদায়িনীর রোযা রাখার হুকুম
গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী যদি আশঙ্কাবোধ করে যে, রোযা রাখলে যথাক্রমে তাদের গর্ভস্থ ভ্রুণ ও দুগ্ধপানকারী সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাহলে তাদের জন্য রোযা না রাখা জায়িয হবে। পরে এর ক্বাযা আদায় করে নিবে। কাফফারা বা ফিদিয়া প্রদান করতে হবে না।
বয়ো-বৃদ্ধের রোযা রাখার হুকুম
অতিশয় বৃদ্ধ যে রোযা রাখতে অক্ষম তার জন্য অনুমতি রয়েছে যে, সে রোযা ভঙ্গ করতে পারবে এবং প্রতিদিনের রোযা উনার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে তৃপ্তি সহকারে দু’বেলা খাওয়াবে অথবা খাদ্য দান করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَه فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ ۖ
অর্থ : যাদের রোযা রাখতে অতিশয় কষ্ট হয় অর্থাৎ যারা রোযা রাখতে অক্ষম তাদের কর্তব্য হলো এর পরিবর্তে ফিদিয়া তথা একজন অভাবগ্রস্তকে (মিসকীন) খাদ্য দান করা। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৪)
পবিত্র রোযা উনার নিয়ত, সাহরী ও ইফতারের দুআ
এবং সুন্নত আমলসমূহ
সাহরীর পরিচয়
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ রাতের খাবারকে সাহরী বলে। অর্থাৎ ছুবহি ছাদিক্বের পূর্বে পবিত্র রোযা রাখার নিয়তে পানাহার করাকে সাহরী বলে।
রোযা রাখার বিধান যেহেতু পূর্ববর্তী উম্মতদেরও ছিল তাই তাদের সাথে আমাদের রোযার কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন আমাদের রোযা আর ইয়াহূদী-নাছারাদের রোযার পার্থক্য হচ্ছে সাহরী গ্রহণ করা।
সাহরী গ্রহণ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنِهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ اَهْلِ الْكِتَابِ اَكْلَةُ السَّحَرِ.
অর্থ : হযরত আমর ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাদের রোযা এবং আহলে কিতাবদের রোযার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরী খাওয়া। (মুসলিম শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ১০৯৬)
সাহরী করা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে সাহরী ছেড়ে দেয়া যাবে না। সাহরী খাওয়াকে উৎসাহিত করার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ ম্বুারক করেন-
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَسَحَّرُوا فَاِنَّ فِي السُّحُوْرِ بَرَكَةً.
অর্থ : হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ : কিতাবুছ ছওম : বাবু বারাকাতিস সাহূরি মিন গ¦ইরি ঈযাব : হাদীছ শরীফ নং ১৯২৩; মুসলিম শরীফ : কিতাবুছ ছওম : বাবু ফাদ্বলিস সুহূরি ওয়াতাকীদিস তিহ্বাবিহি ওয়াসতিহ্বাবি তাখীরিহি ওয়াতা’জীলিল ফিত্বর : হাদীছ শরীফ নং ১০৯৫)
সাহরী যেহেতু বরকতময় খাদ্য তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “সাহরী হলো একটি বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিও না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরী গ্রহণকারীকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা স্মরণ করে থাকেন। (মুসনাদে আহমদ : হাদীছ শরীফ নং ১০৭০২)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)