পবিত্র মসজিদ ও পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলম (৩২)
, ১২ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৬ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২১ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
অতঃপর এই বিষয়টি জানিয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট চিঠি লিখলেন। উক্ত চিঠির জবাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি চিঠি লিখে পাঠালেন যে, আপনি তার হাত কাটবেন না। বরং আপনি নামাযের স্থানটি (একটু পেছনে) সরিয়ে নেন। আর ‘বাইতুল মাল’ সামনের দিকে ক্বিবলা বরাবর নির্ধারণ করুন। কেননা, নামায আদায়ের স্থানে (সাধারণতঃ) মুছল্লীগণ সবসময় অবস্থান করবেন (তখন বাইতুল মাল সামনে থাকায় কোনো ক্ষতি হবে না)। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উক্ত নামায আদায়ের স্থানটি সরিয়ে নিলেন (আর বাইতুল মালকে ক্বিবলার দিকে রাখলেন) এবং তিনি উক্ত স্থানটির সীমানা চিহ্নিত করার জন্য দাগ দিলেন। হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি যে ভবনটি নির্মাণ করেছেন তা প্রশস্ত ছিলো। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার নির্দেশ মুবারকে ইমাম দাঁড়ানোর স্থানকে ভেঙ্গে ফেলা হয়, এমনকি ইমামের স্থান মুক্তাদির স্থানে স্থির করা হয়। (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৯/১৯২, মাজমাউয যাওয়াইদ লিল হাইছামী ৬/২৭৫)
উক্ত হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা প্রতিভাত যে,
(এক) হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র নামায ঘরের স্থানকে সরানোর জন্য বলেছেন, তাই উনার নির্দেশ অনুযায়ী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি শুধুমাত্র ইমামের দাঁড়ানোর স্থানটিকে ভেঙ্গে সেখানে বাইতুল মাল স্থাপন করেন। ফলে ইমামের দাঁড়ানোর স্থান মুক্তাদির কাতারে স্থিরকৃত হয়।
(দুই) বাইতুল মাল থেকে মাল চুরি হয়নি। বরং চুরির জন্য বাইতুল মালে কেবল প্রবেশ করেছিল। তাই ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত ব্যক্তির হাত কাটতে নিষেধ করেছিলেন।
(তিন) নামায ঘরে শুধুমাত্র ইমামের দাঁড়ানোর স্থানটি ভেঙ্গে সেখানে বাইতুল মাল নির্ধারণ করা হয়। ফলে সেখানে খেজুর বিক্রির বাজার হওয়ার কোনো সুযোগই নেই।
অতএব, ক্বিল্লতে ইলম-ক্বিল্লতে ফাহম তথা কম ইলম ও কম বুঝের কারণে কতক মূর্খ, গুমরাহ, লা-মাযহাবী, নীম মোল্লা শ্রেণীর লোক পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার সঠিক মর্মার্থ উদঘাটন করতে অক্ষম হয়ে মিথ্যা, মনগড়া ও ভুল অর্থ করে সাধারণ মুসলমান উনাদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কেননা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে-
وَقَدْ بَنٰى حَضْرَتْ سَعْدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ الْقَصْرَ وَاتَّـخَذَ مَسْجِدًا فِـيْ أَصْحَابِ التَّمْرِ.
অর্থ: “হযরত সা’দ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। আর তিনি (উক্ত ভবনের একটা অংশে) খেজুর মালিকদের জন্য নামাযের স্থান নির্ধারণ করেছেন।”
কিন্তু এখানে বলা হয়নি যে, তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে مَسْجِدًا (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা মূলতঃ নামায পড়ার ঘর বা স্থানকে বুঝানো হয়েছে। শরয়ী কোন মসজিদকে নয়।
স্মরণীয় যে, مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ উল্লেখ থাকলেই যে, মসজিদ বা জামে মসজিদকে বুঝাবে, বিষয়টি এমন নয়। বরং مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা নামাযের সময়কেও বুঝানো হয়ে থাকে আবার নামাযের সাধারণ স্থানকেও বুঝানো হয়ে থাকে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ২৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَأَقِيْمُوْا وُجُوْهَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
অর্থ: আর তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় স্বীয় মুখমন্ডল সোজা রাখ অর্থাৎ সোজা ক্বিবলার দিকে রাখতে যত্নবান হও।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে ইবনে আব্বাস’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
{عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ} عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ
অর্থাৎ “...প্রত্যেক নামাযের সময়।”
অনুরূপ উক্ত পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ৩১ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
يَا بَنِـيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
অর্থ: হে বনী আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় উত্তম পোশাক তথা তাক্বওয়ার পোশাক বা সুন্নতী পোশাক পরিধান করে নাও।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা নামাযের সময়কে বুঝানো হয়েছে।
একইভাবে مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা নামাযের সাধারণ স্থানকে বুঝানো হয়েছে। সে সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
جُعِلَتْ لـِىَ الْاَرْضُ مَسْجِدًا وَّطَهُوْرًا
অর্থ: “আমার জন্য সমস্ত যমীনকে পবিত্র ও নামাযের স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
خَيْـرُ مَسَاجِدِ النِّسَآءِ قَعْرُ بُيُوْتِـهِنَّ
অর্থ: “মহিলাদের জন্য নামাযের শ্রেষ্ঠ স্থান হচ্ছে তাদের ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠ।” (মুসতাদরাকে হাকিম)
উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ইমাম ত্ববারানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
خَيْـرُ صَلَاةِ النِّسَآءِ فـِيْ قَعْرِ بُيُوْتِـهِنَّ
অর্থ: “মহিলাদের ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠের নামাযই শ্রেষ্ঠ নামায।” (ত্ববারানী শরীফ)
উল্লেখিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যথাক্রমে مَسْجِدًا ও مَسَاجِد শব্দ মুবারক দ্বারা আমভাবে মসজিদ বা জামে মসজিদ কোনটাই বুঝানো হয়নি। বরং নামাযের সাধারণ স্থানকে বুঝানো হয়েছে।
তাহলে কি মূর্খ, গুমরাহ, লা-মাযহাবী ও নীম মোল্লা শ্রেণীর লোকেরা মহিলাদের প্রত্যেকটি ঘরকে মসজিদ বা জামে মসজিদ বলবে? নাকি সমস্ত যমীনকে বলবে?
মূলতঃ উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে মহিলাদের প্রত্যেকটি ঘর এবং সমস্ত যমীনকে মসজিদ বা জামে মসজিদ কোনটিই বুঝানো হয়নি। এ বিষয়টিই মূর্খ, গুমরাহ, লা-মাযহাবী, নীম মোল্লাদের জানা নেই। তাই এদের ব্যাপারে কিতাবে লিখা হয়-
نیم حکیم خطر جان+ نیم ملا خطر ایمان
“নীম হেকীম খত্বরে জান, নীম মোল্লা খত্বরে ঈমান।”
অর্থ: “আধা ডাক্তাররা জীবন নাশের কারণ, আধা মোল্লারা ঈমান ধ্বংসের কারণ।”
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১)
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৫)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের সমালোচনা করা লা’নতগ্রস্ত হওয়ার কারণ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)