পবিত্র নামায আদায় করার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নতী তারতীব
, ১১ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৭ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৯ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
পবিত্র নামায আদায় করার ইচ্ছা করলে, প্রথমে পবিত্র নামায উনার জন্য সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। দাঁড়ানোর সময় পাদ্বয়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল হতে এক বিঘত পরিমাণ ফাঁক রেখে দাঁড়াতে হবে। স্বাস্থ্যের কারণে এক বিঘত ব্যবধানের মধ্যে দাঁড়ানো সম্ভব না হলে যেভাবে দাঁড়ালে সহজ হয় সেভাবে দাঁড়াবে।
পবিত্র নামায উনার নিয়ত করে দু’হাত উঠিয়ে দু’টি বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা দু’কানের লতি স্পর্শ করবে, মাথা সোজা রাখবে। মহিলা হলে তার অঙ্গুলিগুলোর অগ্রভাগকে দু’কাঁধের বরাবর উঠাবে। দু’হাত উঠাবার সময় অঙ্গুলিগুলোকে মিলিয়ে কিংবা ফাঁক ফাঁক করে রাখবে না, বরং স্ব স্ব অবস্থায় রাখবে এবং দু’হাতের তালুকে ক্বিবলামুখী করে রাখবে।
আল্লাহু (اَللهُ) শব্দ মুবারক উনার ‘আলিফ’ (ا) উনাকে ও আকবার (اَكْبَرُ) শব্দ মুবারক উনার ‘আলিফ’ (ا) উনাকে কিংবা আকবার শব্দ মুবারক উনার ‘বা’ (ب) অক্ষর উনাকে টেনে পড়া যাবে না, পড়লে নামায (সূচনাতেই) নষ্ট হবে।
তাকবীর শেষ করে পুরুষলোক নাভীর নিচে ডান হাতের তালুকে বাম হাতের পিঠের উপর রাখবে এবং বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলি দ্বারা বাম হাতের কব্জিকে ধরবে আর অবশিষ্ট তিন অঙ্গুলিকে বাম হাতের উপর বিছিয়ে রাখবে। আর মহিলা বুকের উপর ডান হাতের তালুকে বাম হাতের উপর রাখবে।
মনে মনে পবিত্র ছানা, তা‘আওউয তারপর তাসমিয়াহ শরীফ পাঠ করবে। অতঃপর পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ পড়বে (র্সেরি নামায হলে চুপে চুপে আর যেহরী নামায হলে আওয়াজ করে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ এবং অন্য পবিত্র সূরা শরীফ পাঠ করবে)।
প্রত্যেক রাক‘আতে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার পূর্বে পবিত্র বিসমিল্লাহ শরীফ পাঠ করবে, কিন্তু পবিত্র আঊযুবিল্লাহ শরীফ কেবল প্রথম রাক‘আতে পাঠ করতে হয়, তা যে কোনো নামাযই হোক না কেন, পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ শেষ হলে, ইমাম ও একা নামাযী এবং ক্বিরাআত শুনতে পায় এমন মুক্তাদী চুপে চুপে আমীন (কবুল করুন) বলবে। কারণ (আমীন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যের কোনো শব্দ নয় উপরন্তু এটা একটা দু‘আ সূচক শব্দ। আর কোনো দু‘আ নামায উনার মধ্যে উচ্চস্বরে বলার হুকুম নেই। তাই চুপে চুপে “আমীন” বলবে। )
পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ শেষে অন্য পবিত্র সূরা শরীফ মিলানোর পূর্বে “পবিত্র বিসমিল্লাহ শরীফ” পাঠ করার ছূরত বা অবস্থা নিম্নরূপ- নামায যদি যেহরী বা সশব্দের হয়, তখন যে পবিত্র সূরা শরীফ পাঠ করা হবে, তা প্রথম থেকে পাঠ করা হোক বা মাঝখান থেকেই পাঠ করা হোক ‘বিসমিল্লাহ শরীফ’ বলতে হবে না। আর যদি নামায র্সেরী’ বা চুপে চুপে হয়, তখন পবিত্র সূরা প্রথম থেকে পাঠ করলে ‘বিসমিল্লাহ শরীফ’ বলতে হবে, কিন্তু পবিত্র সূরা শরীফ মধ্য থেকে পাঠ করলে ‘বিসমিল্লাহ শরীফ’ বলতে হবে না।
পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ শেষ করে অন্য একটি (১৮ অক্ষর বিশিষ্ট) পবিত্র সূরা শরীফ বা পবিত্র আয়াত শরীফ কিংবা কমপক্ষে (৬ অক্ষর বিশিষ্ট) তিন পবিত্র আয়াত শরীফ পড়বে।
তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকূতে যাবে। রুকূ উনার আরম্ভেই তাকবীর বলা শুরু করে পূর্ণ রুকূতে গিয়ে শেষ করবে এবং দু’হাতের তালু দ্বারা হাঁটুদ্বয়ে ধরে ভর দিয়ে থাকবে। উভয় হাতের অঙ্গুলিগুলো ফাঁক ফাঁক করে রাখবে, দু’পায়ের নলাকে সোজাভাবে রাখবে, পৃষ্ঠকে এরূপ সমানভাবে রাখবে যে, যদি তার উপর কোনো পানির পেয়ালা রাখা হয়, তবে যেনো তা ঠিক থাকে, মস্তক নিচু কিংবা উঁচু নয় বরং নিতম্বের বরাবর রাখবে, দু’বাজুকে ফাঁক করে রাখবে। দু’হাঁটুকে ধনুকের ন্যায় বাঁকা করবেনা। আর মহিলা রুকূতে অল্প ঝুঁকবে, অঙ্গুলিসমূহ ও হাতদ্বয় মিলিয়ে দু’হাঁটুর উপর ভর না দিয়ে রাখবে। দু’হাঁটুকে বাঁকাবে।
পায়ের গোড়ালীদ্বয় মিলিয়ে রাখবে এবং বাজুদ্বয়কে ফাঁক করবে না। উল্লেখ্য, হিজড়ারা স্ত্রীলোকের ন্যায় করবে।
রুকূতে মনে মনে কমপক্ষে তিন তাসবীহ, ইমাম ছহিব পাঁচ তাসবীহ অর্থাৎ ‘সুবহানা রব্বিইয়াল আযীম’ পড়বে।
কেউ যদি ظ (যোয়া) বর্ণের স্থলে ز (যা) পড়ে, তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। কাজেই যে ব্যক্তি যোয়া পড়তে না পারে, সে ‘সুবহানা রব্বিইয়াল কারীম’ খেয়াল রাখবে। অতঃপর ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতে বলতে দু’হাত ঝুলিয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ‘রব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। এটা একা নামাযীর মাসয়ালা।
ইমাম ‘রব্বানা লাকাল হাম্দ’ বলবে না এবং মুক্তাদীগণ ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে না। তৎপর ধীর স্থিরভাবে সিজদায় ঝুঁকবার সাথে সাথে আল্লাহু আকবার বলতে বলতে যাবে। সিজদাতে প্রথমে দু’হাঁটু, তারপর দু’হাত, পরে নাক ও কপাল দু’হাতের মধ্যস্থলে মাটিতে রাখবে, যেনো হাতের বৃদ্ধা অঙ্গুলিদ্বয় কানের বরাবর থাকে।
সিজদায় দু’হাতের অঙ্গুলিগুলোকে মিলিয়ে রাখবে এবং হাত ও পায়ের অঙ্গুলিগুলো ক্বিবলা উনার দিকে করবে। দু’হাতের তালুর উপর ভর দিবে, দু’বাজুকে দু’পার্শ্বদেশ হতে পৃথক রাখবে।
আর মহিলা সিজদাতে দু’হাতকে ফাঁক করবে না, দু’হাত বিছিয়ে দিবে এবং পেটকে দু’উরুর উপর বিছাবে। সিজদায় কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রব্বিইয়াল আ’লা’ পড়বে। সিজদা উনার সময় নাকের অগ্রভাগের দিকে নজর রাখবে। অতঃপর তাকবীর পড়তে পড়তে মাথা উঠাবে।
সিজদা থেকে উঠার সময় প্রথমে কপাল, তারপর নাক, অতঃপর দু’হাত উঠাবে। তৎপরে সোজা হয়ে বসে আল্লাহুম্মাগ্ ফিরলী বলে তাকবীর পড়তে পড়তে দ্বিতীয়বার সিজদায় যাবে এবং পূর্বের ন্যায় তাসবীহ পড়ে তাকবীর বলতে বলতে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে, দাঁড়ানোকালে বসবে না, (বিনা ওজরে) দু’হাতকে যমীনের উপর ভর দিবেনা বরং হাঁটুর উপর ভর দিয়ে দাঁড়াবে। এই এক রাক‘আত শেষ হলো।
দাঁড়িয়ে তা‘আওউয ও ছানা পড়বে না, বরং পবিত্র বিসমিল্লাহ শরীফ, পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ ও অন্য একটি পবিত্র সূরা শরীফ বা তিন আয়াত শরীফ পড়ে প্রথম রাক‘আতে যেরূপ রুকূ সিজদাহ করা হয়েছে এবং যা যা পড়া হয়েছে, দ্বিতীয় রাক‘আতে সেইরূপ রুকূ ও সিজদাহ করবে ও তদ্রুপ পাঠ করবে। দ্বিতীয় রাকা‘আতের সিজদাহ হতে তাকবীর পড়তে পড়তে উঠে নিজের বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসবে এবং ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং উহার অঙ্গুলিগুলো ক্বিবলা উনার দিকে করবে।
ডান হাতকে ডান উরুর এবং বাম হাতকে বাম উরুর উপর রাখবে, হাতের অঙ্গুলিগুলো স্বাভাবিকভাবে বিছিয়ে রাখবে, ফাঁক করেও নয় বা চেপেও নয়, বরং স্ব স্ব অবস্থায় রাখবে। অঙ্গুলিসমূহের অগ্রভাগ দু’হাঁটুর নিকট রাখবে, কিন্তু হাঁটু ধরবে না।
আর মহিলা হলে নিতম্বের উপর বসে পাদ্বয়কে ডান দিক হতে বের করে দিবে। তারপর আত্তাহিয়্যাতু পড়বে। ছহীহ মতে, আশহাদু আল লাইলাহা বলে অর্থাৎ ‘লা’ বলার সময় ডান হাতের শাহাদাত অঙ্গুলি উঠিয়ে ইশারা করবে, আর ইল্লাল্লাহু বলে অর্থাৎ ‘হু’ বলার সময় অঙ্গুলী নামাবে। দু’রাক‘আত নামায হলে পবিত্র দুরূদ শরীফ ও দু‘আ মাছূরা শরীফ পড়ে ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ বলবে।
তারপরে বামদিকে মুখ ফিরিয়ে উক্তরূপ সালাম বলবে, কিন্তু প্রথমবার অপেক্ষা দ্বিতীয়বার অল্প আওয়াজে বলবে। তিন বা চার রাক‘আত নামায হলে, আত্তাহিয়্যাতু পড়ে তাকবীর বলতে বলতে দাঁড়াবে। ফরয নামায হলে তৃতীয় ও চতুর্থ রাক‘আতে বিসমিল্লাহ শরীফসহ কেবল পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ পড়বে।
এতদ্ব্যতীত বিতির, সুন্নত, নফল হলে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ শেষে অন্য একটি পবিত্র সূরা শরীফ পড়বে। তিন বা চার রাক‘আত শেষ হলে বসে আত্তাহিয়্যাতু, পবিত্র দুরূদ শরীফ ও দু‘আ মা’ছূরা পড়ে দু’দিকে সালাম ফিরাবে। পরে দু’হাত সীনা পর্যন্ত তুলে মুনাজাত করবে। মুনাজাত শেষ হলে দু’ হাতের তালু দ্বারা চেহারা মাসেহ করবে।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (১)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘তালবীনা’
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নতী খাবার পরিচিতি ও উপকারিতা : দুধ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খেজুরের রস খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত (২)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)