পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (৭)
, ০৫ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১১ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ০৯ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ফায়সালা মুবারক মেনে না নেয়া হারাম:
খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻟَﺎ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢْ ﺣَﺮَﺟًﺎ ﻣِّﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤًﺎ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের জাহিরী এবং বাতেনী প্রত্যেক বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নিবে। এবং আপনার ফায়সালা মুবারক উনার ব্যাপারে নিজের অন্তরে কোনো রকম সংশয় সন্দেহ না করে বাহ্যিক-অভ্যন্তরীণ উভয় দিক থেকে তা আনুগত্যতার সাথে মেনে নেয়ার মতো মেনে নিতে হবে। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: আয়াত শরীফ ৬৫)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা হালাল করেছেন তা হালাল জানতে ও মানতে হবে। আর যা হারাম করেছেন তা হারাম জানতে ও মানতে হবে বাহ্যিক ও অভন্তরীণ উভয় দিক দিয়ে। এর খিলাফ যে করবে সে কখনোই মুসলমান থাকতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, বিশর নামে এক ব্যক্তি মুসলমান দাবি করতো। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সে ছিল মুনাফিক। এ মুনাফিকের সাথে একবার এক ইহুদীর একটা বিষয়ে দ্বন্দ্ব হয়। সেটা ফায়সালার জন্য তারা উভয়ে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ হাযির হয়। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিষয়টি ফায়সালা করে দিলেন। ফায়সালার রায় ইহুদীর পক্ষে পড়লো। সেখানে তারা উভয়েই মেনে নিল। কিন্তু সেখান থেকে বের হয়ে এসে মুনাফিক ব্যক্তি ইহুদীকে বললো যে, ফায়সালাটি তার মনঃপুত হয়নি। নাউযুবিল্লাহ!
তাই সে ইহুদীকে বুঝিয়ে পুনরায় বিষয়টি ফায়সালার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট গেলো। সে মনে করেছিল, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কাফিরদের বিরুদ্ধে কঠোর। তিনি হয় তো ইহুদীর বিপক্ষে রায় দিবেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বিষয়টি শুনতে চাইলে ইহুদী প্রথমে বললো, হে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আমাদের এ বিষয়টি কিছুক্ষণ পূর্বে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই ফায়সালা করে দিয়েছেন। ফায়সালা আমার পক্ষে পড়েছে। কিন্তু এই ব্যক্তির নাকি সে ফায়সালা মনঃপুত হয়নি। যে কারণে সে পুনরায় আপনার কাছে এসেছে ফায়সালার জন্য। এটা শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তোমরা বসো, আমি ফায়সালা করে দিচ্ছি। এটা বলে তিনি উনার হুজরা শরীফের ভিতরে প্রবেশ করে বেশ কয়েকটি তরবারির মধ্যে থেকে সবচাইতে ধারালো তরবারিটি নিয়ে এসে মুসলমান নামধারী সেই মুনাফিককে এক কোপে দু’টুকরা করে বললেন, এটাই হচ্ছে তোমার একমাত্র ন্যায্য বিচার। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লো। মুনাফিক বিশরের আত্মীয়-স্বজনরা এসে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে নালিশ করলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, উনার পক্ষে তো কোনো মুসলমানকে হত্যা করা সম্ভব নয়। অতঃপর উনাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করলেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনি নাকি একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন, তিনি বললেন- ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কোনো মুসলমান হত্যা করিনি। আমি যাকে হত্যা করেছি সে হচ্ছে একটা কাট্টা মুনাফিক। যে আপনার ফায়সালাকৃত বিষয়কে মনঃপুত হয়নি বলে পুনরায় ফায়সালার জন্য আমার নিকট গিয়েছিল। তাই আমি ফায়সালা হিসাবে তার মৃত্যুদ- দিয়েছি। তখন বিশরের আত্মীয়-স্বজন বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বিশর যে মুনাফিক ছিল, মুসলমান ছিল না এর প্রমাণ ও সাক্ষী কোথায়? সেই মুহূর্তে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষী হয়ে প্রমাণ হিসেবে নাযিল করে দিলেন-
ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻟَﺎ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢْ ﺣَﺮَﺟًﺎ ﻣِّﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤًﺎ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের জাহিরী এবং বাতেনী প্রত্যেক বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নিবে। এবং আপনার ফায়সালা মুবারক উনার ব্যাপারে নিজের অন্তরে কোনো রকম সংশয় সন্দেহ না করে বাহ্যিক-অভ্যন্তরীণ উভয় দিক থেকে তা আনুগত্যতার সাথে মেনে নেয়ার মতো মেনে নিতে হবে। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: আয়াত শরীফ ৬৫)
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে শুনিয়ে দিলেন, এখন বিশরের আত্মীয়-স্বজনসহ সকলেই জানলো যে, বিশর ছিল প্রকৃতপক্ষে মুনাফিক এবং তার মৃত্যুদ- দেয়া সঠিকই হয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ফায়সালা মুবারক মেনে না নেয়া হারাম। অর্থাৎ উনাদের ফায়সালা মুবারক অন্তরের অন্তঃস্থল হতে মেনে নেয়া ফরযে আইন।
-মুহম্মদ নাজমুল হুদা ফরাজী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৫)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের সমালোচনা করা লা’নতগ্রস্ত হওয়ার কারণ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন (৪)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)