পবিত্র দশ লতিফা উনাদের বিবরণ
, ১৫ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২২ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৪ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইলমে তাছাউফ
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পবিত্র তরীক্বাসমূহ উনাদের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা বলেন, “প্রতিটি মানুষের শরীরে দশটি লতিফা রয়েছে। যেমন- ক্বলব, রূহ, সির, খফী, আখফা, নফস, আব (পানি), আতেশ (আগুন), খাক (মাটি) ও বাদ্ (বাতাস)। ”
উল্লিখিত লতিফাসমূহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত এবং প্রত্যেকটি লতিফাই এক একটি নেক খাছলতের মাক্বাম। যেমন-
(১) ক্বল্ব্: বাম স্তনের দু’আঙ্গুল নিচে অবস্থিত। আর ক্বলব হচ্ছে তওবার মাক্বাম। অর্থাৎ সালিক যখন ক্বলবের সবক আদায় করে, তখন সে পাপ বা নাফরমানী থেকে ফিরে আসে। তওবার বিপরীত হচ্ছে পাপ বা নাফরমানীর মধ্যে মশগুল থাকা। অর্থাৎ যার তওবার মাক্বাম হাছিল হবে না, সে পাপ বা নাফরমানীতে মশগুল থাকবে।
(২) রূহ: ডান স্তনের দু’আঙ্গুল নিচে অবস্থিত। রূহ হচ্ছে ইনাবতের মাক্বাম। অর্থাৎ নেক কাজের দিকে রুজু হওয়া, আর এর বিপরীত হচ্ছে পাপ বা নাফরমানীর দিকে রুজু হওয়া। অর্থাৎ যার ইনাবতের মাক্বাম হাছিল হবে না, সে পাপের দিকে রুজু হবে।
(৩) সির: বাম স্তনের দু’আঙ্গুল উপরে, ঈষৎ বক্ষের দিকে অবস্থিত। সির লতিফা যুহদের মাক্বাম। অর্থাৎ দুনিয়া বিরাগী হওয়া, আর এর বিপরীত হচ্ছে দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্ত থাকা। অর্থাৎ যে ব্যক্তির যুহদের মাক্বাম হাছিল হবে না, সে দুনিয়াদারীর মধ্যে গরক্ব (ডুবে) থাকবে।
(৪) খফি: ডান স্তনের দু’আঙ্গুল উপরে, ঈষৎ বক্ষের দিকে অবস্থিত। খফী লতিফা অরা’ বা পরহেযগারীর মাক্বাম। অর্থাৎ সন্দেহজনক বস্তু হতে বিরত থাকা। অরা’ বা পরহেযগারীর বিপরীত দিক হচ্ছে সন্দেহজনক বস্তুর মধ্যে মশগুল থাকা। অর্থাৎ এ মাক্বাম হাছিল না হওয়া পর্যন্ত সে সন্দেহজনক বস্তুর মধ্যে মশগুল থাকবে।
(৫) আখফা: বক্ষস্থলের মাঝখানের কড়ার নিচে অবস্থিত। আখফা হলো শোকর গুজারীর মাক্বাম। অর্থাৎ এ মাক্বাম হাছিল হওয়ার কারণে যথাযথভাবে নিয়ামতসমূহের শোকরিয়া আদায় করা সম্ভব। এছাড়া যথাযথ শুকরিয়া আদায় করা সম্ভব নয় বরং নাশোকরী করবে। অর্থাৎ শোকরের মাক্বাম হাছিল না হলে, সে সর্বদাই নাশোকরী করবে।
(৬) নফ্স্: পেশানীতে অর্থাৎ সিজদার স্থানে অবস্থিত। নফস হলো তাওয়াক্কুলের মাক্বাম অর্থাৎ পরিপূর্ণরূপে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা করা। আর এর বিপরীত হলো গইরুল্লাহর উপর ভরসা করা। অর্থাৎ তাওয়াক্কুলের মাক্বাম হাছিল না হওয়া পর্যন্ত সে গইরুল্লাহর উপর ভরসা করবে।
(৭) আব (পানি): সমস্ত শরীরেই অবস্থিত। আব লতিফা ক্বনায়াতের মাক্বাম। অর্থাৎ অল্পে তুষ্ট থাকা। ক্বনায়াতের বিপরীত দিক হলো অতি লোভী ও অলস হওয়া। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ মাক্বাম হাছিল করতে পারবে না, সে অতি লোভী ও অলস হবে।
(৮) আতেশ (আগুন): সমস্ত শরীরে অবস্থিত। আতেশ লতিফা তাসলীমের মাক্বাম। অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার আহকামসমূহকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়া বা পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ করা। আর এর বিপরীত হচ্ছে বাগী বা বিদ্রোহী হওয়া ও বদ মেজাজী হওয়া। অর্থাৎ তাসলীমের মাক্বাম হাছিল না হওয়া পর্যন্ত সে বিদ্রোহী ও বদ মেজাজী হবে।
(৯) খাক (মাটি): সমস্ত শরীরে অবস্থিত। ইহা রিদ্বার মাক্বাম অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার কাজের উপর বা তক্বদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকা বা বিনয়ী হওয়া। আর এর বিপরীত দিক হচ্ছে তক্বদীরের ফায়ছালা অমান্য করা ও খারাপ উদ্দেশ্যে বিনয়ী ভাব প্রকাশ করা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ মাক্বাম হাছিল করতে পারবে না, সে তক্বদীর অমান্যকারী ও অহঙ্কারী হবে।
(১০) বাদ (বাতাস): সমস্ত শরীরের মধ্যে অবস্থিত। বাদ লতিফা ছবরের মাক্বাম। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ করা। আর এর বিপরীত হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে অধৈর্য বা অস্থিরচিত্ত হওয়া ও ভোগ-বিলাসিতায় মশগুল থাকা। অর্থাৎ এ মাক্বাম হাছিল না হলে, সে অধৈর্য বা অস্থিরচিত্ত হবে ও ভোগ বিলাসিতায় মশগুল থাকবে।
উল্লেখ্য, শেষ চারটি লতিফাকে “আরবায়ে আনাছের” বলে, যদ্বারা মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাযকিয়াহ বা ইছলাহ অর্জন করা ব্যতীত কোনো বান্দার পক্ষে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব নয়
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ বা শায়েখ হক্ব বা নাহক্ব তা যাচাই-বাছাই করার পর বাইয়াত হতে হবে
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য পিতা-মাতা উনাদের এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাধা গ্রহণযোগ্য নয়
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (১)
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩১)
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)