পবিত্র খইরুল কুরূনে পবিত্র মক্কা শরীফে অর্থাৎ মসজিদুল হারাম শরীফে পবিত্র লাইলাতুম মুবারাকাহ বা পবিত্র লাইলাতুল বরাতে সারা রাত ইবাদত-বন্দেগী হতো
, ১১ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৪ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৪ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ১৮ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

বাতিল ফিরকারা বলে থাকে- পবিত্র লাইলাতুম মুবারাকাহ বা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান পবিত্র শবে বরাত শরীফ বিদয়াত। খইরুল কুরূনে কেউ পবিত্র শবে বরাত শরীফ পালন করেন নাই। কেউ এ রাতে ইবাদত-বন্দেগী করেন নাই। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
অথচ ইতিহাস সাক্ষী- খাইরুল কুরূনে পবিত্র লাইলাতুম মুবারাকাহ বা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান পবিত্র শবে বরাত শরীফ পালন হয়েছে। আজ থেকে প্রায় ১২শ বছর আগে মুহম্মদ ইবনে ইসহাক আল মক্কী আল ফাকেহী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ২৭২ হিজরী) কর্তৃক পবিত্র মক্কা শরীফ উনার আমল ও ইতিহাস নিয়ে রচিত কিতাব “আখবারুল মক্কা” নামক কিতাবে পবিত্র মক্কা শরীফে যে শবে বরাত শরীফ পালন হতো তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে-
وأهل مكة فيما مضى إلى اليوم إذا كان ليلة النصف من شعبان، خرج عامة الرجال والنساء إلى المسجد، فصلوا، وطافوا ، وأحيوا ليلتهم حتى الصباح بالقراءة في المسجد الحرام، حتى يختموا القرآن كله، ويصلوا، ومن صلى منهم تلك الليلة مائة ركعة يقرأ في كل ركعة بـالحمد، و قل هو الله أحد عشر مرات، وأخذوا من ماء زمزم تلك الليلة، فشربوه، واغتسلوا به، وخبؤوه عندهم للمرضى، يبتغون بذلك البركة في هذه الليلة، وروى فيه أحاديث كثيرة (أخبار مكة للفاكهي أبو عبد الله محمد بن إسحاق بن العباس المكي الفاكهي)
অর্থ: অতীত থেকে বর্তমানকাল অবধি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীগণ পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার মধ্যবর্তী রাতে অর্থাৎ ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে মসজিদে গমন করেন অতঃপর নামায আদায় করেন, তাওয়াফ করেন, পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে সারা রাত জেগে থাকেন, এমনকি তারা পূর্ণ কুরআন শরীফ খতম করেন। আর যাঁরা একশ রাকাআত নামায আদায় করেন তাঁরা প্রত্যেক রাকাআতে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার সাথে দশবার পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ তিলাওয়াত করেন। পবিত্র যমযম উনার পানি মুবারক পান করেন, এর দ্বারা গোসল করেন এবং অসুস্থদের জন্য তা জমা করে রাখেন। এসব আমলের মাধ্যমে উনারা উক্ত পবিত্র রাতের বরকত অন্বেষণ করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে অনেক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। (আখবারুল মক্কা ৩ খ- ৮৪ পৃষ্ঠা)
২৭২ হিজরী হযরত ইমাম ফাকেহী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওফাত সন। অর্থাৎ তিনি পবিত্র নববী যুগ উনার অনেক কাছের একজন মানুষ। তিনি বর্ণনা করছেন- অতীত থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত পবিত্র মক্কা শরীফ উনার নারী-পুরুষ পবিত্র লাইলাতুম মুবারাকাহ বা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান পবিত্র শবে বরাত শরীফ পালন করতেন অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে এই আমল চলে আসছে। শুধু তাই নয়, পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফেও এ রাতে ইবাদত হতো। সুবহানাল্লাহ!
বাতিলদের কাছে প্রশ্ন- যদি এই আমল বিদয়াত হতো, তাহলে সেই সোনালী যুগে কেউ এই আমল উনার বিরোধিতা করেছে কি? কোনো প্রমাণ কি ওহাবীরা দেখাতে পারবে? কস্মিনকালেও পারবে না।
তাহলে আজ ১৪০০ বছর পর এসে কারা এই সুমহান রাত ও আমল উনার বিরোধিতা করছে? কারা বিরোধিতা করে নব্য মতবাদ প্রচার করছে? যারা পবিত্র লাইলাতুম মুবারাকাহ বা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান পবিত্র শবে বরাত শরীফ উনার বিরোধী তারাই বিদয়াতী তারাই নব্য গুমরাহ ও বিভ্রান্ত মালউন। তারা চায় না- মানুষ নেক আমল করে বিশেষ রাত উনার ফযীলত ও রহমত লাভ করুক।
শুধু তাই নয়, ইতিহাসে প্রমাণিত বিখ্যাত খলীফা ও তাবেয়ী হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিছু বিশেষ দিবস পালন করার জন্য এক গভর্নরকে চিঠিও লিখেছিলেন। বিখ্যাত ইমাম হযরত রজব হাম্বলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
بإسناده إلى عمر بن عبد العزيز أنه كتب إلى عدي بن أرطاة: "عليك بأربع ليال في السنة فإن الله يفرغ فيهن الرحمة، أول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة الفطر وليلة النحر.
অর্থ: খলীফা হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার গভর্নর আদী ইবনে আরত্বাতকে চিঠি লিখলেন যে, বছরে চারটি রাত আপনাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্র্ণ। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পবিত্র রাতে রহমত নাযিল করেন। যথা- পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ উনার প্রথম রাত, ১৫ শা’বান রাত (শবে বরাত), ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহার রাত। (লাতায়িফুল মা’য়ারিফ ১৬২)
সুতরাং এই রাতের আমল খাইরুল কুরূন উনার সময় থেকে চলে আসছে। এই সুমহান রাত উনার আমল নতুন কিছু না। এই আমল সুন্নত, যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। আর শরীয়তসম্মত বলেই খাইরুল কুরূনে এই আমল পালিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত হবে। যারা বিরোধিতা করবে, তারাই বিদয়াতী, ইসলামবিদ্বেষী। এদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।
-খাজা মুহম্মদ নূরউদ্দীন পলাশ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (২৮)
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা ও ফযীলত মুবারক প্রসঙ্গে (৩৬)
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (২৭)
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হক্বানী আলেম উনাদের খুছুছিয়ত
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ঈমান উনার স্বাদ.............
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)