পবিত্র খইরুল কুরুনে পবিত্র মক্কা শরীফে অর্থাৎ মসজিদুল হারাম শরীফে পবিত্র লাইলাতুম মুবারাকাহ বা পবিত্র লাইলাতুল বরাতে সারা রাত ইবাদত-বন্দেগী হতো
, ১০ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৮ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
অথচ ইতিহাস সাক্ষী- খাইরুল কুরুনে পবিত্র লাইলাতুম মুবারাকাহ বা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান পবিত্র শবে বরাত শরীফ পালন হয়েছে। আজ থেকে প্রায় ১২শ বছর আগে মুহম্মদ ইবনে ইসহাক আল মক্কী আল ফাকেহী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ২৭২ হিজরী) কর্তৃক পবিত্র মক্কা শরীফ উনার আমল ও ইতিহাস নিয়ে রচিত কিতাব “আখবারুল মক্কা” নামক কিতাবে পবিত্র মক্কা শরীফে যে শবে বরাত শরীফ পালন হতো তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে-
وَأَهْلُ مَكَّةَ فِيمَا مَضَى إِلَى الْيَوْمِ إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، خَرَجَ عَامَّةُ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ إِلَى الْمَسْجِدِ، فَصَلَّوْا، وَطَافُوا، وَأَحْيَوْا لَيْلَتَهُمْ حَتَّى الصَّبَاحِ بِالْقِرَاءَةِ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ، حَتَّى يَخْتِمُوا الْقُرْآنَ كُلَّهُ، وَيُصَلُّوا، وَمَنْ صَلَّى مِنْهُمْ تِلْكَ اللَّيْلَةَ مِائَةَ رَكْعَةٍ يَقْرَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ بِالْحَمْدِ، وَقُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ عَشْرَ مَرَّاتٍ، وَأَخَذُوْا مِنْ مَاءِ زَمْزَمَ تِلْكَ اللَّيْلَةَ، فَشَرِبُوهُ، وَاغْتَسَلُوا بِهِ، وَخَبَّؤُوهُ عِنْدَهُمْ لِلْمَرْضَى، يَبْتَغُونَ بِذَلِكَ الْبَرَكَةَ فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ، وَيُرْوَى فِيهِ أَحَادِيثُ كَثِيرَةٌ (أخبار مكة للفاكهي أبو عبد الله محمد بن إسحاق بن العباس المكي الفاكهي)
অর্থ: অতীত থেকে বর্তমানকাল অবধি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীগণ পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার মধ্যবর্তী রাতে অর্থাৎ ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে মসজিদে গমন করেন অতঃপর নামায আদায় করেন, তাওয়াফ করেন, পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে সারা রাত জেগে থাকেন, এমনকি তারা পূর্ণ কুরআন শরীফ খতম করেন। আর যাঁরা একশ রাকাআত নামায আদায় করেন তাঁরা প্রত্যেক রাকাআতে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার সাথে দশবার পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ তিলাওয়াত করেন। পবিত্র যমযম উনার পানি মুবারক পান করেন, এর দ্বারা গোসল করেন এবং অসুস্থদের জন্য তা জমা করে রাখেন। এসব আমলের মাধ্যমে উনারা উক্ত পবিত্র রাতের বরকত অন্বেষণ করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে অনেক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। (আখবারুল মক্কা ৩ খ- ৮৪ পৃষ্ঠা)
২৭২ হিজরী হযরত ইমাম ফাকেহী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওফাত সন। অর্থাৎ তিনি পবিত্র নববী যুগ উনার অনেক কাছের একজন মানুষ। তিনি বর্ণনা করছেন- অতীত থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত পবিত্র মক্কা শরীফ উনার নারী-পুরষ পবিত্র লাইলাতুম মুবারাকাহ বা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান পবিত্র শবে বরাত শরীফ পালন করতেন অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে এই আমল চলে আসছে। শুধু তাই নয়, পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফেও এ রাতে ইবাদত হতো। সুবহানাল্লাহ!
বাতিলদের কাছে প্রশ্ন- যদি এই আমল বিদয়াত হতো, তাহলে সেই সোনালী যুগে কেউ এই আমল উনার বিরোধিতা করেছে কি? কোনো প্রমাণ কি ওহাবীরা দেখাতে পারবে? কস্মিনকালেও পারবে না।
তাহলে আজ ১৪০০ বছর পর এসে কারা এই সুমহান রাত ও আমল উনার বিরোধিতা করছে? কারা বিরোধিতা করে নব্য মতবাদ প্রচার করছে? যারা পবিত্র লাইলাতুম মুবারাকাহ বা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান পবিত্র শবে বরাত শরীফ উনার বিরোধী তারাই বিদয়াতী তারাই নব্য গুমরাহ ও বিভ্রান্ত মালউন। তারা চায় না- মানুষ নেক আমল করে বিশেষ রাত উনার ফযীলত ও রহমত লাভ করুক।
শুধু তাই নয়, ইতিহাসে প্রমাণিত বিখ্যাত খলীফা ও তাবেয়ী হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিছু বিশেষ দিবস পালন করার জন্য এক গভর্নরকে চিঠিও লিখেছিলেন। বিখ্যাত ইমাম হযরত রজব হাম্বলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
بِإِسْنَادِهٖ إِلٰى عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيْزِ أَنَّهٗ كَتَبَ إِلٰى عَدِيِّ بْنِ أَرْطَاةَ: "عَلَيْكَ بِأَرْبَعِ لَيَالٍ فِي السَّنَةِ فَإِنَّ اللهَ يُفْرِغُ فِيْهِنَّ الرَّحْمَةَ، أَوَّلُ لَيْلَةِ مِّنْ رَّجَبَ وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَلَيْلَةُ الْفِطْرِ وَلَيْلَةُ النَّحْرِ
অর্থ: খলীফা হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার গভর্নর আদী ইবনে আরত্বাতকে চিঠি লিখলেন যে, বছরে চারটি রাত আপনাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্র্ণ। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পবিত্র রাতে রহমত নাযিল করেন। যথা- পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ উনার প্রথম রাত, ১৫ শা’বান রাত (শবে বরাত), ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহার রাত। (লাতায়িফুল মায়ারিফ ১৬২)
সুতরাং এই রাতের আমল খাইরুল কুরুন উনার সময় থেকে চলে আসছে। এই সুমহান রাত উনার আমল নতুন কিছু না। এই আমল সুন্নত, যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। আর শরীয়তসম্মত বলেই খাইরুল কুরুনে এই আমল পালিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত হবে। যারা বিরোধিতা করবে, তারাই বিদয়াতী, ইসলামবিদ্বেষী। এদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।
-খাজা মুহম্মদ নূরউদ্দীন পলাশ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)