পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৩)
, ২৭ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৬ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১৫ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ৩১ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র জুমু‘আহর দিন ৪ রাকাত পবিত্র বা’দাল জুমুআহ্ নামায আদায় করার পর ২ রাকাত সুন্নাত নামায আদায় করতে হয়। যাকে সুন্নাতুল ওয়াক্ত বা ওয়াক্তিয়া সুন্নাত নামায বলা হয়। এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছেন,
عَنْ حضرت أبي عبد الرحمن السلمي رضى الله تعالى عنه قال علمنا حضرت بن مَسْعُودٍ رضى الله تعالى عنه أَنْ نُصَلِّيَ بَعْدَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا فَلَمَّا قَدِمَ عَلَيْنَا سيدنا حضرت عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ عليه السلام عَلَّمَنَا أَنْ نُصَلِّيَ سِتًّا
অর্থ: “বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আবূ আব্দির রহমান আস সুলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি আমাদেরকে পবিত্র জুমুআ’র নামাযের পরে ৪ রাকাত সুন্নাত পড়ার জন্য শিক্ষা দিতেন। অতঃপর আমাদের নিকট যখন ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আগমন করলেন তখন তিনি আমাদেরকে পবিত্র জুমু‘আর পর ৬ রাকাত নামায পড়ার জন্য শিক্ষা মুবারক দেন।” সুবহানাল্লাহ! (উমদাতুল ক্বারী ১০/২০৩, তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/৪৮)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছেন,
وَعَنْ سيدنا حضرت عَلِيّ عليه السلام أَنَّهُ يُصَلِّي سِتًّا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَرْبَعًا وَعَنْهُ رِوَايَةٌ أُخْرَى أَنَّهُ يُصَلِّي بَعْدَهَا سِتًّا أَرْبَعًا ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ وَبِهِ أَخَذَ أَبُو يُوسُفَ رحمة الله عليه وَالطَّحَاوِيُّ رحمة الله عليه وَكَثِيرٌ مِنْ الْمَشَايِخِ رَحِمَهُمُ اللَّهُ وَعَلَى هَذَا قَالَ شَمْسُ الْأَئِمَّةِ الْحَلْوَانِيُّ رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى الْأَصْلُ أَنْ يُصَلِّيَ أَرْبَعًا ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ
অর্থ: “ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি (পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ্ শরীফ উনার পর) ৬ রাকাত নামায আদায় করতেন। প্রথমে ২ রাকাত এরপর ৪ রাকাত আদায় করতেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছেন, নিশ্চয়ই তিনি (পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ্ শরীফ উনার পর) ৬ রাকাত নামায আদায় করতেন। প্রথমে ৪ রাকাত এরপর ২ রাকাত আদায় করতেন। ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারাসহ অনেক মাশায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এটাই গ্রহণ করেছেন। আর এ ব্যাপারে শামসুল আইম্মাহ্ ইমাম হালওয়ানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মূল কথা হলো- (পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ্ শরীফ উনার পর) প্রথমে ৪ রাকাত এরপর ২ রাকাত পরতে হবে। (বাহরুর রায়েক্ব ৪/২৪১)
উল্লেখিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ২ রাকাত নামাযই হচ্ছেন সুন্নাতুল ওয়াক্ত। আর এই সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায ৪ রাকাত বা’দাল জুমু‘আহ্ উনার পরেই পড়তে হবে এবং এটাই উত্তম।
এ বিষয়ে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,
وَعَنْ أبي يُوسُفَ رحمة الله عليه أَنَّه يَنْبَغِي أَنْ يُصَلِّيَ أَرْبَعًا ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ
অর্থ: “হযরত আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, নিশ্চয়ই তিনি (পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ্ শরীফ উনার পর) প্রথমে ৪ রাকাত এরপর ২ রাকাত পড়াকেই সমীচীন মনে করতেন।” (বাহরুর রায়েক্ব ২/৫৩)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছেন,
وفي مُنْيَةِ الْمُصَلِّي وَالْأَفْضَلُ عِنْدَنَا أَنْ يُصَلِّيَ أَرْبَعًا ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ
অর্থ: “‘মুনইয়াতুল মুছল্লী’ নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, আমাদের নিকট (হানাফী মাযহাবে) উত্তম হচ্ছে- (পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ্ শরীফ উনার পর) প্রথমে ৪ রাকাত এরপর ২ রাকাত পড়া।” (বাহরুর রায়েক্ব ২/৫৩)
উক্ত কিতাবে পবিত্র জুমু‘আর নামাযসমূহের বর্ণনা এভাবে দেয়া দেয়া হয়েছে,
أَنْ يُصَلِّيَ السُّنَّةَ أَرْبَعًا ثُمَّ الْجُمُعَةَ ثُمَّ يَنْوِي أَرْبَعًا سُنَّةَ الْجُمُعَةِ ثُمَّ يُصَلِّيَ الظُّهْرَ ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ سُنَّةَ الْوَقْتِ فَهَذَا هُوَ الصَّحِيحُ الْمُخْتَارُ
অর্থ: “প্রথমে (ছলাতুল জুমুআহ আদায়ের পূর্বে) ৪ রাকাত সুন্নাত পড়তে হবে। এরপর পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ শরীফ আদায় করতে হবে। তারপর ৪ রাকাত সুন্নাতুল জুমুআহ অর্থাৎ বা’দাল জুমুআহর নিয়্যত করবে, অতঃপর আখেরী যোহর আদায় করবে (এটা মুস্তাহাব), সর্বশেষ ২ রাকাত পবিত্র সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায আদায় করবে। এটাই হচ্ছে গ্রহণযোগ্য ছহীহ পদ্ধতি।” (বাহরুর রায়েক্ব ৫/১৩৭)
উল্লেখ্য পবিত্র জুমু‘আর দিন ৪ রাকাত আখেরী যোহর নামায পড়া মুস্তাহাব। তাই এই নামায ২ রাকায়াত সুন্নাতুল ওয়াক্ত উনার পরে পড়াই উত্তম।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র জুমুআহর দিন ৪ রাকাআত ক্বাবলাল জুমুআহ এবং ৪ রাকাআত বা’দাল জুমুআহ নামায সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকেই প্রমাণিত। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের আমল মুবারকও এটাই। পবিত্র জুমু‘আর দিন নিদৃষ্টভাবে ৪ রাকায়াত ক্বাবলাল জুমুআহ, ৪ রাকায়াত বা’দাল জুমু‘আহ্ এবং এরপর ২ রাকায়াত সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্্। আর কেউ যদি উল্লেখিত নামায সমূহ তরক করে তাহলে সে ওয়াজিব তরক করার গুনাহে গুনাহগার হবে। এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,
فَإِنَّ السُّنَّةَ الْمُؤَكَّدَةَ بِمَنْزِلَةِ الْوَاجِبِ فِي الْإِثْمِ بِالتَّرْكِ
অর্থ: “নিশ্চয়ই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্্ তরক করা গুনাহের ক্ষেত্রে ওয়াজিব তরক করার স্থলাভিষিক্ত। অর্থাৎ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্্ ছেড়ে দিলে ওয়াজিব ছেড়ে দেয়ার সমপরিমাণ গুনাহগার হবে।” (বাহরুর রায়েক্ব ৪/১৯১)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
كَانَتْ السُّنَّةُ الْمُؤَكَّدَةُ قَرِيبَةً مِن الْوَاجِبِ فِي لُحُوقِ الْإِثْمِ كَمَا فِي الْبَحْرِ وَيَسْتَوْجِبُ تَارِكُهَا التَّضْلِيلَ وَاللَّوْمَ
অর্থ: “গুনাহের ক্ষেত্রে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্্ ওয়াজিবের নিকটবর্তী। যেমনটা বাহরুর রায়েক্ব কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। আর সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্্ তরককারী গোমরাহী ও ভৎসনার উপযুক্ত।” (রদ্দুল মুহতার ৫/১৩৯, দুররুল মুখতার ২/১২)
কাজেই সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে, পবিত্র জুমুআহর দিন নির্দিষ্টভাবে ৪ রাকায়াত ক্বাবলাল জুমুআহ্, ৪ রাকায়াত বা’দাল জুমুআহ্ ও ২ রাকায়াত সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ উনার অন্তর্ভুক্ত। কেউ যদি এই নামায ছেড়ে দেয় তাহলে সে ওয়াজিব তরক করার গুনাহে গুনাহগার হবে। আর উক্ত নামাযসমূহ উনাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে, ইহানত করলে ঈমানহারা হবে, কাট্টা কাফির হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
কেননা উছূলের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, اِهَانَةُ السُّنَّةِ كُفْرٌ অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাত মুবারক উনাকে ইহানত বা অবজ্ঞা করা কুফরী। আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ফতওয়া হচ্ছে, যে ব্যক্তি কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর মুরতাদের শরঈ হুকুম হচ্ছে, বিবাহ করলে স্ত্রী তালাক্ব হয়ে যাবে, হজ্জ করলে বাতিল হয়ে যাবে, তার জিন্দেগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তাকে তওবার জন্য ৩ দিন সময় দেয়া হবে, যদি তওবা না করে তাহলে তার শরঈ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ- যদি ইসলামী খিলাফত থাকে। তার জানাযা, দাফন-কাফন কোনো কিছুই করা যাবেনা। মুসলমানদের কবরস্থানেও তাকে দাফন করা যাবেনা। বরং কুকুর-শৃগালের ন্যায় তাকে মাটিতে পুতে রাখতে হবে। কেউ যদি তার জানাযা, দাফন-কাফন করে তার উপরও একই হুকুম বর্তাবে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমতুল্লিল আলামীন মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাত মুবারক উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)