পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (২)
, ২৬ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৫ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের আমল মুবারক দেখলে পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমু‘য়াহ এবং বা’দাল জুমু‘আহ’ নামায যে ৪ রাকাত সেটা আরো স্পষ্ট হয়ে যাবে।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন, ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি। আর উনার আমল মুবারকও হচ্ছেন, তিনি ৪ রাকাত ক্বাবলাল জুমু‘আহ এবং ৪ রাকাত বা’দাল জুমু‘আহ্ নামায পড়তেন। যেটা ছহীহ সনদেই বর্ণিত রয়েছেন,
وَرُوِىَ عَنْ حضرت عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّى قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا
অর্থ: “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি পবিত্র জুমু‘য়ার নামাযের পূর্বে এবং পরে ৪ রাকাত নামায পড়তেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মুছান্নাফে আব্দির রায্যাক ৩/২৪৭; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ্ ১/৪৬৩ এবং ২/১৩১, শরহুস সুন্নাহ ৩/৪৫০, উমদাতুল ক্বারী ১১/৪০৯, তুহফাতুল আহওয়াজী ২/৬২, শরহু আবী দাঊদ লিল আইনী ৪/৪৭১, আওনুল মা’বূদ ৩/৪৭৭, মুখতাছারুল আহকাম ৩/৪৩ ইত্যাদি)
আরো বর্ণিত রয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ إِبْرَاهِيمَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ حَضْرَتْ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ كَانَ يُصَلِّى قَبْلَ الْجُمُعَةِ اَرْبَعًا وَبَعْدَهَا اَرْبَعًا لَا يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ بِتَسْلِيْمٍ
অর্থ: “হযরত ইবরাহীম নাখ‘য়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন,) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি পবিত্র জুমু‘য়ার নামাযের পূর্বে এবং পরে ৪ রাকাত নামায পড়তেন। মাঝে পৃথক হতেন না অর্থাৎ এক সালামে ৪ রাকাত পড়তেন।” (শরহু মা‘য়ানিইল আছার ১/৩৩৫)
শুধু এতটুকুই নয়; হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি অন্যদেরকেও ৪ রাকাত ‘ক্বাবলাল জুমু‘আ এবং ৪ রাকাত বা’দাল জুমু‘আহ্’ নামায পড়ার জন্য আদেশ মুবারক করতেন।
যেমন বর্ণিত রয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ السُّلَمِيِّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ كَانَ حَضْرَتْ ابْنُ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ يَأْمُرُنَا أَنْ نُصَلِّيَ قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا
অর্থ: “বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আবূ আব্দুর রহমান আস সুলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি আমাদেরকে পবিত্র জুমুআ’র নামাযের পূর্বে ৪ রাকাত এবং পরে ৪ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিতেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসান্নাফে আব্দির রায্যাক ৩/২৪৭, আল মু’জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ৮/২৫১)
হযরত ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
كانوا يصلون قبلها أربعا وبعدها أربعا
অর্থ: “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা কাবলাল জুমু‘আ ৪ রাকাত এবং বা’দাল জুমু‘আ ৪ রাকাত পড়তেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/৪৬৩)
উল্লেখিত আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের আমল মুবারকও ছিলো উনারা ‘ক্বাবলাল জুমু‘আহ ৪ রাকাত এবং বা’দাল জুমু‘আহ’ ৪ রাকাত পড়তেন। সুবহানাল্লাহ!
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا اٰمَنتُم بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوا ۖ
অর্থ: “যদি তোমরা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় ঈমান আনতে পারো, তাহলে তোমরা অবশ্যই হিদায়েত লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারাহ্ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৭)
পবিত্র ক্বাবলাল জুমু‘আহ এবং বা’দাল জুমু‘আহ নামায ৪ রাকাত পড়ার হুকুম
‘দুররুল মুখতার’ কিতাব প্রণেতা হযরত আলাউদ্দীন হাছকাফী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ১০৮৮ হিজরী শরীফ) তিনি ৪ রাকাত পবিত্র সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামাযের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
( وَسُنَّ ) مُؤَكَّدًا ( أَرْبَعٌ قَبْلَ الظُّهْرِ وَ ) أَرْبَعٌ قَبْلَ ( الْجُمُعَةِ وَ ) أَرْبَعٌ ( بَعْدَهَا بِتَسْلِيمَةٍ )
অর্থ: “আর সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ নামায হচ্ছে- পবিত্র যুহরের নামাযের পূর্বে ৪ রাকাত, পবিত্র জুমু‘য়া’হর নামাযের পূর্বে ৪ রাকাত এবং পবিত্র জুমু‘আহর নামাযের পরে এক সালামে ৪ রাকাত।” (রদ্দুল মুহতার ৫/১৩৮, দুররুল মুখতার ২/১২)
মারাকিউল ফালাহ গ্রন্থকার পবিত্র সুন্নাতুল মুয়াক্কাদাহ্্ নামাযের বর্ণনা দিতে যেয়ে বলেন,
(و) منها أربع (قبل الجمعة) لأن النبي صلى الله عليه و سلم كان يركع قبل الجمعة أربعا لا يفصل في شيء منهن
- (و) منها أربع (بعدها) لأن النبي صلى الله عليه و سلم كان يصلي بعد الجمعة أربع ركعات يسلم في آخرهن
অর্থ: “আর তন্মধ্যে ৪ রাকাত পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমু‘আহ্ নামায। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (পবিত্র জুমুআ’র দিন) পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ্ আদায় করার পূর্বে পৃথক না হয়ে অর্থাৎ এক সালামে ৪ রাকাত সম্মানিত ছলাত মুবারক আদায় করতেন। আর তারমধ্যে ৪ রাকাত পবিত্র বা’দাল জুমু‘আহ্ নামায। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ্ আদায় করার পরে ৪ রাকাত সম্মানিত ছলাত মুবারক আদায় করতেন। যেখানে শেষ রাকাতে সালাম ফিরাতেন অর্থাৎ এক সালামে ৪ রাকাত সম্মানিত ছলাত মুবারক আদায় করতেন।” সুবহানাল্লাহ! (মারাক্বিউল ফালাহ ১৬৮ নং পৃ:)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছেন,
وَحُكْمُ الْأَرْبَعِ قَبْلَ الْجُمُعَةِ كَالْأَرْبَعِ قَبْلَ الظُّهْرِ
অর্থ: “আর ৪ রাকাত পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমু‘য়াহ্ নামায উনার হুকুম হচ্ছে, পবিত্র যোহর নামায উনার পূর্বের ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ উনার অনুরুপ।” (বাহরুর রায়েক্ব ৪/৩৫০)
অর্থাৎ পবিত্র ছলাতুল জুমুআহ্ উনার পূর্বে ৪ রাকাত ক্বাবলাল জুমু‘আহ্ ও পরে ৪ রাকাত বা’দাল জুমু‘আহ্ নামায আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্্।
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (২৭)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তাওয়াক্কুল তথা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভরসা করার ফযীলত
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)