পবিত্র কুরবানী ও কুরবানীদাতার ফযীলত (২)
, ১৭ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৮ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ استفرهوا ضحاياكم فانها مطاياكم على الصراط
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন- তোমরা তোমাদের কুরবানীর পশুগুলো শক্তিশালী ও মোটা-তাজা দেখে নির্বাচন কর। কারণ এগুলো তোমাদের পুলসিরাতের উপর চড়ে যাওয়ার বাহন হবে। ” (দাইলামী-মুসনাদুল ফিরদাউস ১/৮৫)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
سَـمِّنُوْا ضُحَايَاكُمْ فَاِنَّـهَا عَلَى الصِّرَاطِ مَطَايَاكُمْ
অর্থ: “তোমরা মোটা-তাজা, হৃষ্টপুষ্ট পছন্দনীয় পশু কুরবানী করো, কেননা কুরবানীর পশুগুলো তোমাদের জন্য পুলছিরাত পার হওয়ার বাহন স্বরূপ হবে। ” সুবহানাল্লাহ! (আরিযাতুল আহওয়াযী লী শরহে তিরমিযী ৬/২৮৮)
পুলছিরাত হচ্ছে হাশর ময়দান থেকে জান্নাতে যাওয়ার পথে জাহান্নামের উপর একখানি পুল। বর্ণিত রয়েছে, এই পুল চুল অপেক্ষা চিকন এবং তলোয়ার বা ক্ষুর অপেক্ষা ধারালো। এই পুলছিরাত ৩০ হাজার বছরের রাস্তা। প্রত্যেককেই এই পুল ছিরাত পার হতে হবে। পুলছিরাত পার না হওয়া পর্যন্ত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। সাধারণভাবে এই পুলছিরাত পার হওয়া অত্যন্ত কঠিন। পুলছিরাত পার হওয়ার পথে যাদের বাহন থাকবে তাদের জন্য পুলছিরাত পার হওয়া সহজ হবে। আর পুলছিরাত পার হওয়ার সেই বাহন হচ্ছে পবিত্র কুরবানীর পশু। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াক্বিয়া বর্ণিত রয়েছে যে, একজন লোক ছিল। লোকটা খারাপ ছিলো না। সে দ্বীনদার আল্লাহওয়ালা হওয়ার জন্য কোশেশ করতো। যেহেতু বিভ্রান্তি সব যুগেই ছিলো। যেমন, বর্তমানে অনেকে বলে থাকে- ‘কুরবানী না করে পশুটা দান করে দিলে অসুবিধা কোথায়?’ এটা কাট্টা কুফরী কথা। কেউ যদি এরূপ কথা বলে সে কাট্টা কাফির হয়ে যাবে। কেননা, সে সম্মানিত ওয়াজিব ইবাদত উনাকে অস্বীকার করলো, ইনকার করলো। সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে, পবিত্র সুন্নত মুবারক উনাকে অবজ্ঞা বা অস্বীকার করা কুফরী। সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে, পবিত্র ওয়াজিব উনাকে ইহানত করলে বা অবজ্ঞা করলেও কাট্টা কাফির হবে। আজকাল কিছু লোক রয়েছে, যাদের আক্বীদা বদ অথচ তারা মুসলমান দাবীদার প্রকৃতপক্ষে এরাই এলোমেলো কথা বলে থাকে। এরা কিন্তু হিন্দুদের পূজার সময় বলে না যে, পুজা না করে দান করে দাও। বরং তারা নিজেরা তখন আরো সাহায্য করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! মূলত এই লোকগুলো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী। যার কারণে সম্মানিত কুরবানী নিয়ে চু-চেরা করে থাকে।
সেই লোকটিও হক্ব তালাশী হওয়ার পরও তাদের ওয়াসওয়াসায় বিভ্রান্ত হয়ে পবিত্র কুরবানী করেনি। সে পবিত্র কুরবানীর পয়সা দান করে দিতো। সেই লোক একদিন স্বপ্নে দেখলো, ক্বিয়ামত হয়ে গেছে। বিচার হয়ে গেছে। সকলের ফায়ছালা হয়ে গেছে। অসংখ্য অগণিত লোক, সকলেই পুলছিরাতের সামনে উপস্থিত।
এখানে কোটি কোটি ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও আছেন। এখন পুলসিরাত পার হতে হবে। ত্রিশ হাজার বছরের রাস্তা অনেক দীর্ঘ রাস্তা। যমীন হতে আকাশ হচ্ছে পাঁচশত বছরের রাস্তা। তাহলে পুলসিরাত পার হবে কি দিয়ে? সে দখতে পেলো কিছুক্ষণ পরপর কোথা হতে অদৃশ্য বোরাক এসে একজন একজন করে নিয়ে যেতে লাগলো। বোরাক আসলে একজন চড়ে তাকে চোখের পলকে নিয়ে যায়। এভাবে এক সময় সবাই চলে গেলো। শুধু সেই লোকটিই দাঁড়িয়ে রইলো। তার জন্য কোনো বাহন আসতেছে না।
তখন সে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বললো, ‘সকলের জন্যতো বাহন আসলো, সবাইতো চলে গেলো, তাহলে আমার বাহন কোথায়?’ তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, ‘তোমার তো বাহন নেই। তুমিতো পবিত্র কুরবানী করোনি। তুমি কি করে পুলসিরাত পার হবে? তোমার বাহন আসবে কোথা হতে? তুমি তো পবিত্র কুরবানীর পশু কুরবানীই করোনি। ’ সেই লোকটি বলে, একথা শুনে তার শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তখন সে ইস্তিগফার করলো, তওবা করলো। অতীত বছরের কুরবানীগুলো আদায় করলো এবং প্রতি বছর পশু কুরবানী শুরু করলো।
বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দশ বছর অবস্থান মুবারক করেছেন। প্রতি বছরই পবিত্র কুরবানী করেছেন; কখনও তা ছাড়েননি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও পবিত্র কুরবানী করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।
পবিত্র কুরবানী না করে তার অর্থ দান করে দেয়ার বিধান শরীয়ত উনার মধ্যে জায়িয নেই। কেননা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিংবা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কখনো এরূপ করেননি। অথচ উনাদের যুগেই এর জরুরত ছিল অধিক। বরং উনারা পবিত্র কুরবানী করেছেন এবং কুরবানীকৃত পশুর গোশত ও চামড়া অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করতে বলেছেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)