ইলমে তাছাউফ
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে পবিত্র ক্বলবী যিকির উনার গুরুত্ব
, ০৬ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৪ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ১২ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২৮ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ইলমে তাছাউফ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
উক্ত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ উল্লেখ আছে যে-
فِيْهِ اِشَارَةٌ اِلٰى اَنَّ مِنْ دَوَامِ عَلٰى ذِكْرِ الرَّحْـمٰنِ لَـمْ يَقْرُبْهُ الشَّيْطَانُ بِـحَالٍ قَالَ بَعْضُهُمْ مَنْ نَسِىَ اللهَ وَتَرَكَ مُرَاقَبَتَهٗ وَلَـمْ يَسْتَحْىٖ مِنْهُ اَوْ اَقْبَلَ عَلٰى شَىْءٍ مِّنْ حُظُوْظِ نَفْسِهٖ قَيَّضَ اللهُ لَهٗ شَيْطَانًا يُّوَسْوِسُ لَهٗ فِىْ جَـمِيْعِ اَنْفَاسِهٖ وَيَغَرّٰى نَفْسَهٗ اِلٰى طَلَبِ هَوَاهَا حَتّٰى يَتَسَلَّطَ عَلٰى عَقْلِهٖ وَعِلْمِهٖ وَبَيَانِهٖ.
অর্থ : উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে, যে ব্যক্তি সর্বদা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল থাকে, শয়তান কোনো অবস্থাতেই তার নিকটবর্তী হতে পারেনা। হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা বলেন, যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভুলে যায় এবং উনার মুরাক্বাবা পরিত্যাগ করে এবং যতক্ষণ সে তার এ অবস্থা থেকে ফিরে না আসে অর্থাৎ যিকির-আযকার, মুরাক্বাবা-মুশাহাদা না করে, অথবা সে খাহেশাতে নফসের কোনো একটির প্রতি অগ্রসর হয় তখন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য একটা শয়তান নিযুক্ত করে দেন। অর্থাৎ তার গাফলতীর কারণেই তার সাথে একটা শয়তান নিযুক্ত হয়ে যায়। উক্ত শয়তান প্রতি মুহূর্তে তাকে ওয়াসওয়াসা দেয় এবং ধোঁকা দেয় খাহেশাতে নফসকে অনুসরণের জন্য। পরিণামে খাহেশাতে নফস তার আক্বল, ইলম ও বয়ানের উপর প্রবল হয়। নাউযুবিল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَهٗ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ اَمْرُهٗ فُرُطًا.
অর্থ : ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা, যার ক্বলবকে আমার পবিত্র যিকির থেকে গাফিল করেছি। অর্থাৎ যার ক্বলবে আমার পবিত্র যিকির নেই, সে নফসকে (শয়তানকে) অনুসরণ করে। ফলে তার কাজগুলো (আমলগুলো) হয় পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ। (সূরা কাহফ শরীফ : আয়াত শরীফ ২৮)
অতএব বুঝা গেলো যে, পবিত্র ক্বলবী যিকির ব্যতীত শয়তান ও শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা যেমন অসম্ভব তদ্রƒপ শরীয়ত উনার খিলাফ কাজ থেকে বেঁচে থাকাও অসম্ভব।
তাই অন্তর পরিশুদ্ধ করতে হলে বা শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচতে হলে পবিত্র ক্বলবী যিকির করতে হবে। কারণ পবিত্র ক্বলবী যিকিরই সার্বক্ষণিক বা দায়িমী যিকির উনার একমাত্র মাধ্যম।
যেমন দায়িমী বা পবিত্র ক্বলবী যিকির সম্পর্কে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاذْكُر رَّبَّكَ فِىْ نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَّخِيْفَةً وَّدُوْنَ الْـجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ وَلَا تَكُنْ مِّنَ الْغَافِلِيْنَ.
অর্থ : সকাল-সন্ধ্যা স্বীয় অন্তরে, সবিনয়ে, সভয়ে, অনুচ্চ আওয়াজে তোমার রব তায়ালা উনার পবিত্র যিকির (স্মরণ) কর। আর (এ ব্যাপারে) তুমি গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আ’রাফ শরীফ : আয়াত শরীফ ২০৫)
এ আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাসসির, ইমামুল মুফাসসিরীন হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জগদ্বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে কবীরে’ উল্লেখ করেন-
مِنَ النَّاسِ مَنْ قَالَ ذِكْرُ هٰذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ وَالْـمُرَادُ مُدَاوَمَةُ الذِّكْرِ وَالْـمُوَاظَبَةُ عَلَيْهِ بِقَدْرِ الْاِمْكَانِ.
অর্থ : কেউ কেউ বলে, শুধুমাত্র সকাল-সন্ধ্যা যিকির করার কথা উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে। মূলত উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা যিকির করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দায়িমী বা সার্বক্ষণিক যিকির এবং সাধ্যানুযায়ী যিকিরে মশগুল থাকা। অনুরূপ ‘তাফসীরে রূহুল বয়ান’ উনার মধ্যেও উল্লেখ আছে।
প্রমাণিত হলো যে, অন্তরের পরিশুদ্ধতা ও দায়িমী হুযূরী অর্জন করতে হলে অবশ্যই পবিত্র ক্বলবী যিকির করতে হবে। কারণ পবিত্র ক্বলবী যিকির ব্যতীত যেরূপ অন্তরের পরিশুদ্ধতা লাভ করা সম্ভব নয়, তদ্রƒপ দায়িমী বা সার্বক্ষণিক হুযূরীও হাছিল করা সম্ভব নয়। তাই “তাফসীরে মাযহারী”তে উল্লেখ করা হয়েছে-
دَوَامُ الْـحُضُوْرِ بِالْقَلْبِ اِذْ لَايَتَصَوَّرُ دَوَامُ الذِّكْرِ بِاللِّسَانِ.
অর্থ : দায়িমী হুযূরী বা যিকির কেবলমাত্র ক্বলবের দ্বারাই সম্ভব। কেননা লিসান বা মুখ দ্বারা দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে পবিত্র যিকির করা সম্ভব নয়।
তাই সকলেই পবিত্র ইলমে তাছাওউফ উনার কিতাবসমূহে “পবিত্র ক্বলবী যিকির” করাকে ফরয বলেছেন।
স্মর্তব্য, ইতিপূর্বে মুহলিকাত, মুনজিয়াতসহ দশ লতিফার ইলমী বিষয়াদি আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু তা আমলে রূপায়িত করার জন্য প্রথমত একজন কামিল পীর ছাহেব বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হয়ে মুরাক্বাবা-মুশাহাদা করে পবিত্র ইলমে তাছাওউফ হাছিল করতে হবে। তবেই সত্যিকার অর্থে মুহলিকাত তথা বদ খাছলতসমূহ দূর হবে এবং মুনজিয়াত তথা সৎ খাছলতসমূহ অর্জিত হবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাযকিয়াহ বা ইছলাহ অর্জন করা ব্যতীত কোনো বান্দার পক্ষে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব নয়
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ বা শায়েখ হক্ব বা নাহক্ব তা যাচাই-বাছাই করার পর বাইয়াত হতে হবে
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য পিতা-মাতা উনাদের এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাধা গ্রহণযোগ্য নয়
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (১)
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩১)
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র দশ লতিফা উনাদের বিবরণ
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয (২)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)