ইলমে তাছাউফ
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে পবিত্র ক্বলবী যিকির উনার গুরুত্ব
, ২৯ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৭ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০৫ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২১ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ইলমে তাছাউফ
মূলত অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুযূরী ক্বলব হাছিল করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে পবিত্র “ক্বলবী যিকির”। অর্থাৎ পবিত্র ইলমে তাছাওউফ তথা মুহলিকাত ও মুনজিয়াত সম্পর্কিত পবিত্র ইলম অর্জন করার সাথে সাথে ক্বলবী যিকির করতে হবে, তবেই অন্তর পরিশুদ্ধ হবে ও হুযূরী ক্বলব অর্জিত হবে এবং নামাযসহ সকল ইবাদত-বন্দিগী শুদ্ধভাবে বা পবিত্র ইখলাছ উনার সাথে আদায় করা সম্ভব হবে। যার ফলে ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা পবিত্র ক্বলবী যিকির করাকে ফরয বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ.
অর্থ : সাবধান! খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির মুবারক দ্বারাই ক্বলব (অন্তর) ইতমিনান বা পরিশুদ্ধ হয়। অর্থাৎ হুযূরী বা খুশু-খুযূ হাছিল হয়। (সূরা রা’দ শরীফ : আয়াত শরীফ ২৮)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهٗ كَانَ يَقُوْلُ لِكُلِّ شَىْءٍ صَقَالَةٌ وَصَقَالَةُ الْقُلُوْبِ ذِكْرُ اللهِ.
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক জিনিস পরিষ্কার করার উপকরণ রয়েছে, আর ক্বল্ব্ বা অন্তর পরিষ্কার (পরিশুদ্ধ) করার উপকরণ (মাধ্যম) হচ্ছে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির (ক্বলবী যিকির)। (বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ শরীফ, মিরকাত শরীফ)
অর্থাৎ পবিত্র ক্বলবী যিকির দ্বারা ক্বলব পরিষ্কার হয়ে পবিত্র ইখলাছ তথা খুশু-খুযূ বা হুযূরী হাছিল হয়।
উক্ত আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা বুঝা গেলো যে, অন্তর পরিশুদ্ধ অর্থাৎ ইখলাছ তথা হুযূরী বা খুশু-খুযূ হাছিল করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে যিকির অর্থাৎ পবিত্র “ক্বলবী যিকির।
হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ পবিত্র যিকির উনাকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন- লিসানী যিকির অর্থাৎ মৌখিক যিকির এবং পবিত্র ক্বলবী যিকির অর্থাৎ অন্তরের যিকির।
লিসানী যিকির হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার তাসবীহ-তাহলীল, দোয়া-দুরূদ, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, ওয়াজ-নছীহত ইত্যাদি। মূলত লিসানী যিকির উনার দ্বারা সার্বক্ষণিক বা দায়িমীভাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল থাকা সম্ভব নয়। কারণ উল্লিখিত যিকিরসমূহ সময় ও স্থান বিশেষে করা সম্পূর্ণই অসম্ভব। যেমন ওযূ-ইস্তিঞ্জা, খাওয়া-দাওয়া, কথাবার্তা, নিদ্রা ইত্যাদি। অথচ পবিত্র শরীয়ত উনার নির্দেশ মুবারক হচ্ছে সার্বক্ষণিক বা দায়িমীভাবে যিকিরে মশগুল থাকা। কারণ বান্দা যে মুহূর্তে বা সময়ে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির করা থেকে গাফিল বা অমনোযোগী হয়, তখনই শয়তান তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে পাপ বা নাফরমানীতে লিপ্ত করে দেয়। এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْـمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ. وَاِنَّـهُمْ لَيَصُدُّوْنَـهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَـحْسَبُوْنَ اَنَّـهُم مُّهْتَدُوْنَ.
অর্থ : যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির থেকে বিরত (গাফিল) থাকে, আমি (খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক) তার জন্য একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই। অর্থাৎ তার গাফলতীর কারণেই তার সাথে একটা শয়তান নিযুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর সেই শয়তান তার সঙ্গী হয় এবং তাকে সৎ পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে অর্থাৎ পাপ কাজে লিপ্ত করে দেয়। অথচ তারা মনে করে, তারা সৎ পথেই রয়েছে। (সূরা যুখরূফ শরীফ : আয়াত শরীফ ৩৬, ৩৭)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلشَّيْطَانُ جَاثِـمٌ عَلٰى قَلْبِ ابْنِ اٰدَمَ فَاِذَا ذَكَرَ اللهَ خَنَسَ وَاِذَا غفَلَ وَسْوَسَ
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবে আসন পেতে বসে থাকে। যখন সে পবিত্র যিকির করে, তখন শয়তান পালিয়ে যায়। আর যখন সে পবিত্র যিকির থেকে গাফিল হয়, তখন শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ শরীফ)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাযকিয়াহ বা ইছলাহ অর্জন করা ব্যতীত কোনো বান্দার পক্ষে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব নয়
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ বা শায়েখ হক্ব বা নাহক্ব তা যাচাই-বাছাই করার পর বাইয়াত হতে হবে
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য পিতা-মাতা উনাদের এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাধা গ্রহণযোগ্য নয়
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (১)
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩১)
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র দশ লতিফা উনাদের বিবরণ
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয (২)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)