পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে পবিত্র যিকির উনার গুরুত্ব ও ফযীলত (৩)
, ০৪ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৯ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৩ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مُعَاذِ بن جَبَلٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ يَتَحَسَّرُ أَهْلُ الْجَنَّةِ إِلا عَلَى سَاعَةٍ مَرَّتْ بِهِمْ لَمْ يَذْكُرُوا الله عَزَّ وَجَلَّ فِيهَا
অর্থ: “হযরত মুআয বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, জান্নাতবাসীগণ কোনো কিছুর জন্য আফসুস করবেন না। তবে যে সময়টুকু খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির মুবারক ব্যতীত অতিবাহিত হয়েছে তার জন্য আফসুস করবেন।” (দায়লামী শরীফ, দীনূরী, ক্বাবাসুম মিন নূরী মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে পবিত্র ক্বলবী যিকিরের গুরুত্ব
মূলত অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুযূরী ক্বল্ব্ হাছিল করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে “ক্বলবী যিকির”। অর্থাৎ ইলমে তাছাওউফ তথা মুহলিকাত ও মুনজিয়াত সম্পর্কিত পবিত্র ইলিম অর্জন করার সাথে সাথে ক্বলবী যিকির করতে হবে, তবেই অন্তর পরিশুদ্ধ হবে ও হুযূরী ক্বল্ব্ অর্জিত হবে এবং নামাযসহ সকল ইবাদত-বন্দিগী শুদ্ধভাবে বা ইখলাছের সাথে আদায় করা সম্ভব হবে। যার ফলে হযরত ইমাম-মুজতাহিদ-আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ক্বলবী যিকির করাকে ফরয বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
অর্থ: “সাবধান! খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির মুবারক দ্বারাই ক্বল্ব্ (অন্তর) ইতমিনান বা পরিশুদ্ধ হয়। অর্থাৎ হুযূরী বা খুশু-খুযূ’ হাছিল হয়।” (পবিত্র সূরা রা’দ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ صِقَالَةً وَإِنَّ صِقَالَةَ الْقُلُوبِ ذِكْرُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই প্রত্যেক জিনিস পরিষ্কার করার উপকরণ রয়েছে আর নিশ্চয়ই ক্বল্ব্ বা অন্তর পরিষ্কার বা পরিশুদ্ধ করার উপকরণ (মাধ্যম) হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির (ক্বলবী যিকির)।” (বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ শরীফ, মিরকাত শরীফ)
অর্থাৎ পবিত্র ক্বলবী যিকির দ্বারা ক্বল্ব্ পরিষ্কার হয়ে ইখলাছ তথা খুশু-খুযূ বা হুযূরী হাছিল হয়।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা বুঝা গেলো যে, অন্তর পরিশুদ্ধ অর্থাৎ ইখলাছ তথা হুযূরী বা খুশু-খুযূ হাছিল করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে যিকির অর্থাৎ পবিত্র “ক্বলবী যিকির।”
হযরত ইমাম-মুজতাহিদ-আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ পবিত্র যিকিরকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন- লিসানী যিকির অর্থাৎ মৌখিক যিকির এবং ক্বলবী যিকির।
লিসানী যিকির হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার তাসবীহ-তাহলীল, দোআ-দুরূদ, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, ওয়াজ-নছীহত ইত্যাদি। মূলত লিসানী যিকিরের দ্বারা সার্বক্ষণিক বা দায়িমীভাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল থাকা সম্ভব নয়। কারণ উল্লেখিত যিকিরসমূহ সময় ও স্থান বিশেষে করা সম্পূর্ণই অসম্ভব। যেমন ওযূ-ইস্তিঞ্জা, খাওয়া-দাওয়া, কথাবার্তা, নিদ্রা ইত্যাদি। অথচ পবিত্র শরীয়ত উনার নির্দেশ মুবারক হচ্ছে সার্বক্ষণিক বা দায়িমীভাবে যিকিরে মশগুল থাকার জন্য। কারণ বান্দা যে মুহূর্তে বা সময়ে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির করা থেকে গাফিল বা অমনোযোগী হয়, তখনই শয়তান তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে পাপ বা নাফরমানীতে লিপ্ত করে দেয়। এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّونَهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ مُهْتَدُونَ
অর্থ: “যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে বিরত (গাফিল) থাকে, আমি (খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক) তার জন্য একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই অর্থাৎ তার গাফলতীর কারণেই তার সাথে একটা শয়তান নিযুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর সেই শয়তান তার সঙ্গী হয় এবং তাকে সৎ পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে অর্থাৎ পাপ কাজে লিপ্ত করে দেয়। অথচ তারা মনে করে, তারা সৎ পথেই রয়েছে।” (পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬, ৩৭) (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)