পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে পবিত্র যিকির উনার গুরুত্ব ও ফযীলত (১)
, ২৯ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ
অর্থাৎ “তোমরা আমার যিকির করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫২)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِى بِى وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِى فَإِنْ ذَكَرَنِى فِى نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِى نَفْسِى وَإِنْ ذَكَرَنِى فِى مَلَأٍ ذَكَرْتُهُ فِى مَلَإ خَيْرٍ مِّنْهُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমি আমার বান্দার নিকটে সেরূপ; যেরূপ সে আমাকে ধারণা করে। যখন সে আমার যিকির করে তখন আমি তার সাথে থাকি। যখন সে একা একা আমার যিকির করে তখন আমিও তাকে একা একা স্মরণ করি। আর যখন সে মজলিসে আমার যিকির করে তখন আমি তাকে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি বা তার আলোচনা করি।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ফতহুল মুলহিম, শরহে নববী, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ)
প্রমাণিত হলো যে, বান্দা যত বেশি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির করবে তত বেশি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য ও রহমত মুবারক লাভ করবে।
পবিত্র যিকিরকারী উনাদের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ مُوْسَى رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَثَلُ الَّذِي يَذْكُرُ رَبَّهُ وَالَّذِي لَا يَذْكُرُ رَبَّهُ مَثَلُ الْحَيِّ وَالْمَيِّتِ
অর্থ: “হযরত আবূ মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি তার রব তাআলা উনার পবিত্র যিকির করে আর যে পবিত্র যিকির করেনা, তাদের মেছাল বা উদাহরণ হলো, জীবিত ও মৃত ব্যক্তির ন্যায়।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ফতহুল মুলহিম, শরহে নববী, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ)
বান্দা বেশি বেশি পবিত্র যিকির করলে কামিয়াবী হাছিল করবে। এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
অর্থ: “বেশি বেশি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির করো। অবশ্যই তোমরা কামিয়াবী হাছিল করবে।” (পবিত্র সূরা জুমুআহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)
পবিত্র যিকির বেশি করলে কতটুকু কামিয়াবী সে প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ سَعِيْدٍ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ أَيُّ الْعِبَادِ أَفْضَلُ وَأَرْفَعُ دَرَجَةً عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ الذَّاكِرُونَ اللهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتُ قِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ وَمِنَ الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللهِ؟ قَالَ لَوْ ضَرَبَ بِسَيْفِهِ فِي الْكُفَّارِ وَالْمُشْرِكِينَ حَتَّى يَنْكَسِرَ وَيَخْتَضِبَ دَمًا فَإِنَّ الذَّاكِرَ لِلَّهِ أَفْضَلُ مِنْهُ دَرَجَةً
অর্থ: “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘ক্বিয়ামতের দিন কোন বান্দা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার অধিকারী হবে?’ (জবাবে) তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘অধিক পরিমাণে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরকারী পুরুষ ও নারী।’ পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদকারী অপেক্ষাও কি?’ তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘হ্যাঁ, যদি সে নিজ তরবারি দ্বারা কাফির ও মুশরিকদেরকে কাটে এমনকি তার তরবারি ভেঙে যায় আর সে নিজেও রক্তাক্ত হয় তা হতেও খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরকারী শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান।” (আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুজাহিরে হক্ব)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي الدَّرْدَاء رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا أُنَبِّئكُمْ بِخَيْرِ أَعْمَالكُمْ وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيْكِكُمْ وَأَرْفَعِهَا فِي دَرَجَاتكُمْ وَخَيْرٍ لَّكُمْ مِّنْ إِنْفَاق الذَّهَب وَالْوَرِق وَخَيْر لَكُمْ مِنْ أَنْ تَلْقَوْا عَدُوّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقهمْ وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقكُمْ ؟ قَالُوا بَلَى قَالَ ذِكْر الله
অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না যে, তোমাদের আমলসমূহের মধ্যে কোনটি উত্তম, তোমাদের খালিক্ব মালিক রব তায়ালা উনার নিকট অধিক পবিত্র, তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর এবং সোনা-রূপা দান করা অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ, এমনকি পবিত্র জিহাদের ময়দানে শত্রুর গর্দান কাটা ও তোমার গর্দান কাটা হতেও উত্তম? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আপনি বলে দিন ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির।” (মুয়াত্তায়ে মালিক শরীফ, আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরীদ্বাতুল আহওয়াযী, মাআরিফুস সুনান, ইবনে মাজাহ, মিশকাত, মিরকাত ইত্যাদি) (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)