পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৩১)
, ২৬শে জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২২ সামিন, ১৩৯০ শামসী সন, ২০ই জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ঘ) যাকাত আদায় না করে মূল মালের সাথে মিশ্রিত করলে মাল-সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمـُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةَ عَلَيْهَا السَّلَامَ قَالَتْ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَا خَالَطَتِ الزَّكٰوةُ مَالًا قَطُّ اِلَّا اَهْلَكَتْهُ رَوَاهُ الشَّافِعِىُّ وَالْبُخَارِىُّ فِىْ تَارِيْـخِهٖ وَالْـحُمَيْدِىُّ وَزَادَ قَالَ يَكُوْنُ قَدْ وَجَبَ عَلَيْكَ صَدَقَةً فَلَا تُـخْرِجُهَا فَيُهْلِكُ الْـحَرَامُ الْـحَلَالَ.
অর্থ: “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, যখন মূল মালের সাথে সম্মানিত যাকাত উনার মাল মিশবে তখন সেই মালই মূল মালকে ধ্বংস করে ফেলবে অর্থাৎ উভয় মালই ধ্বংস হবে। নাঊযুবিল্লাহ! এটা বর্ণনা করেছেন হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তারীখ গ্রন্থে। এছাড়া হযরত ইমাম হুমায়দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বৃদ্ধি করে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমার উপর যে মালের সম্মানিত যাকাত ফরয হয় অতঃপর সে মালের সম্মানিত যাকাত বের করবে না, তখন এই হারাম মালই অর্থাৎ যে মালের যাকাত আদায় করা হয়নি সেই মালই অন্য সমস্ত হালাল মালকে ধ্বংস করে দিবে।” নাঊযুবিল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
ঙ) যাকাত দেয়া বন্ধ করলে মাল-সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ الْفَارُوْقِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ مَا تُلِفُ مَالٌ فِىْ بَرٍّ وَّ لَا بَـحْرٍ اِلَّا بـِحَبْسِ الزَّكٰوةِ. وَفِىْ رِوَايَةٍ اِلَّا بِـمَنْعِ الزَّكٰوةِ.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যমীনে এবং পানিতে যেখানেই কোন সম্পদ বিনষ্ট বা ধ্বংস হয়, তা কেবল মালের যাকাত দেয়া বন্ধ করার কারণেই অর্থাৎ যাকাত না দেয়ার কারণে।” (ত্ববারানী শরীফ)
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مَنَعَ قَوْمٌ الزَّكَاةَ اِلَّا ابْتَلاهُمُ اللهُ بِالسَّنِيْنَ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা উনার থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন সম্প্রদায় যখন যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায় তখন তাদেরকে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত করেন।” নাঊযুবিল্লাহ! (মু’জামুল আওসাত ৫ম খ- ২৬ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ৪৫৭৭; তারগীর ওয়াত তারহীব ১ম খ- ৩০৯ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ১১৪৫)
চ) কোন ইবাদত-বন্দেগী কবুল হয় না:
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اُمِرْتُـمْ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ فَمَنْ لَّـمْ يُزَكِّ فَلَا صَلَاةَ لَهٗ.
অর্থ: ফক্বীহুল উম্মত, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা সম্মানিত নামায এবং সম্মানিত যাকাত আদায়ের জন্যে আদিষ্ট হয়েছেন। কাজেই যে ব্যক্তি সম্মানিত যাকাত আদায় করেনা, তার নামায কবুল হয়না।” (তাফসীরে কুরতুবী ৮ম খ-, ৮১ পৃষ্ঠা, সূরা তওবা শরীফ- আয়াত শরীফ নং ১২, প্রকাশনী : দারুল কিতাবুল মিছরিইয়্যা, কায়রো, ১৩৮৪ হিজরী; তাফসীরে রূহুল মায়ানী ৫ম খ-, ২৫২ পৃষ্ঠা, সূরা তওবা শরীফ, প্রকাশনী : দারুল কিতাবুল ‘ইলমিইয়্যা, বৈরুত, ১৪১৫ হিজরী; তাফসীরে খযীন ২য় খ-, ৩৩৯ পৃষ্ঠা, সূরা তওবা শরীফ, প্রকাশনী : দারুল কিতাবুল ‘ইলমিইয়্যা, বৈরুত, ১৪১৫ হিজরী; তাফসীরে বাগবী ৩য় খ-, ৩৩৬ পৃষ্ঠা, প্রকাশনী : দারুস সালাম লিন নাশার ওয়াত তাওযী’, রিয়াদ, ১৪১৬ হিজরী; তারগীব ওয়াত তারহীব ২য় খ-, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং : ১৪৭৬, প্রকাশনী : দারুল হাদীছ, কায়রো, ১৪১৪ হিজরী)
মূলতঃ যাকাত আদায় না করার কারণে উক্ত মাল যা গরীব-মিসকীনের হক্ব তা মালিকে নিছাব নিজেই ভক্ষণ করছে যা তার জন্য হারাম। এই হারাম ভক্ষন করার কারণে তার কোন ইবাদত-বন্দেগী, দু‘আ-মুনাজাত কবুল হবে না। যেহেতু ইবাদত-বন্দেগী, দু‘আ-মুনাজাত কবুল হওয়ার পূর্বশত হচ্ছে হালাল রিযিক।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ اللهَ طَيّبٌ لَا يَقْبَلُ اِلَّا طَيِّبًا وَاِنَّ اللهَ اَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِـمَا اَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ فَقَالَ يَآ اَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِـحًا اِنّـِيْ بِـمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ وَقَالَ يَآ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ. ثُـمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ اَشْعَثَ اَغْبَرَ يَـمُدُّ يَدَيْهِ اِلَى السَّمَاءِ يَا رَبّ يَا رَبّ وَمَطْعَمُهٗ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهٗ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهٗ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْـحَرَامِ فَاَنّٰـى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র। তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রেরিত হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যে হুকুম মুবারক দিয়েছেন মু’মিন উনাদেরকেও সে হুকুম মুবারক দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘হে হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম! আপনারা পবিত্র ও হালাল বস্তু আহার করুন এবং ভালো কাজ করুন। আমি আপনাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত।’ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আমি আপনাদেরকে যে সব পবিত্র বস্তু রিযিক হিসেবে দান করেছি তা থেকে আহার করুন।’ অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলায়-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে মহান আল্লাহ পাক শাহী দরবারে হাত তুলে আর্জি করে- “হে আমার মহান রব তায়ালা! হে আমার মহান রব তায়ালা! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু’আ মহান আল্লাহ পাক তিনি কী করে কবুল করতে পারেন?” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু ক্বাবূলিছ ছদাক্বাতি মিনাল কাসবিত্ব ত্বাইয়্যিবি ওয়া তারবিয়াতিহা : হাদীছ শরীফ নং ২২৩৬; তিরমিযী শরীফ : কিতাবু তাফসীরুল কুরআন : হাদীছ শরীফ নং ৩২৫৭; দারে কুতনী ২য় খ- ৩৮৯ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ২৭১৭; শু‘য়াবুল ঈমান ৭ম খ- ৪৯১ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ৫৩৫৩)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খেলাধুলা নাজায়িয ও হারাম হওয়া সম্পর্কে সম্মানিত ইসলামী শরীয়তের ফায়সালা
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মানুষকে আমলের প্রতি নিরুৎসাহিত করতেই পবিত্র হাদীছ শরীফ নিয়ে মওজু-জয়ীফ ইত্যাদি অপপ্রচার করছে বাতিল ফিরক্বারা
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩০)
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মাজার শরীফে হামলাকারী বেয়াদব ও লানতপ্রাপ্ত
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে -৪
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (৬)
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)