পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৩৫)
, ২৫শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৯ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০৩ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
مَثَلُ الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَـهُمْ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ اَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِىْ كُلِّ سُنْبُۢلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَّشَاءُ ۗ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ ◌
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক পথ-এ যাঁরা ধন-সম্পদ ব্যয় করেন উনাদের উদাহরণ হলো সেই শস্য দানার মতো যা থেকে পয়দা হয় ৭টি শীষ, প্রত্যেকটি শীষে ১০০টি করে দানা (উৎপন্ন) হয়। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে চান বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রাচুর্য্যময়, প্রশস্ত, সর্বজ্ঞানী।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
يَـمْحَقُ اللهُ الرِّبَا وَيُرْبِـيى الصَّدَقَاتِ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সুদকে ধ্বংস করে দেন এবং দান-ছদকা তথা সম্মানিত যাকাত উনাকে বৃদ্ধি করেন অর্থাৎ দান, ছদকা ও যাকাতদানকারীর সম্পদ বৃদ্ধি পায়।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭৬)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, যাকাতদাতার মাল-সম্পদ মহান আল্লাহ পাক তিনি বেহিসাব অর্থাৎ কোন প্রকার হিসাব ছাড়াই বাড়িয়ে দিবেন। যার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে হযরত খুলাফায়ে রশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের খিলাফতকালের প্রাচুর্যময় অবস্থা। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ১ম খলীফা, আফদ্বানুল নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জিহাদ করে সম্মানিত যাকাত ব্যবস্থা জারী করেছিলেন। আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ২য় খলীফা, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হিসাব করে করে যাকাত আদায় করতেন। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৩য় খলীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত আমলে যাকাত ব্যবস্থা যখন সর্বত্র জারী হয়েছিল, তখন এত সমৃদ্ধি হয়েছিল যে, তখন ঘরে ঘরে কোটি-কোটি দিনার-দিরহাম। সুবাহানাল্লাহ!
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি আহলে সুফ্ফার অন্তর্গত ছিলেন, উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত আমলে উনাদের তখন এত ধন-সম্পদ যে উনারা তখন কাততানের কাপড় দিয়ে নাকের ময়লা পরিষ্কার করতেন। সুবহানাল্লাহ! কাততানের কাপড় রাজা-বাদশারা একসময় তাদের পোষাক হিসেবে ব্যবহার করতো। (তুরষ্কের টপকাপি মিউজিয়ামে উক্ত কাপড়ের নমুনা রাখা আছে)। রাজা-বাদশাদের কাপড় দিয়ে যদি নাকের ময়লা পরিষ্কার করা হয় তাহলে অন্যান্য বিষয়গুলো উনারা কত দামী জিনিস দিয়ে ব্যবহার করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
তখন এত ধন-সম্পদ, এত ঐশ্বর্য যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কান্নাকাটি করেছেন যে হায় আল্লাহ পাক! আমরা কি দুনিয়ার বুকেই জান্নাত পেয়ে গেলাম? পরকালে আমরা আসল জান্নাত পাবো তো ! সুবহানাল্লাহ!
কাজেই এটা ফিকির করতে হবে যে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবে সে ব্যবস্থা জারী করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! এটা কোন মানব রচিত যেমন ‘সোসালিজম’ বা ‘ক্যাপিটালিজম’ কোনোটা দিয়ে কখনই অর্জন করা সম্ভব নয়। মুসলমানদেরকে মহান আল্লাহ পাক যে যাকাত ব্যবস্থা দিয়েছেন এই যাকাত ব্যবস্থা কায়িম না হওয়া পর্যন্ত কোনদিন সচ্ছলতা আসবে না।
মূলতঃ সম্মানিত যাকাত ব্যবস্থা যখনই জারী হয়েছে তখনই সমাজে সচ্ছলতা এসেছে। এ ব্যাপারে আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিলাফতকাল। হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আড়াই বছরের খিলাফতকালে সচ্ছলতা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, খিলাফতের বায়তুল মালের কোষাগার থেকে যাকাতের অর্থ গ্রহণ করার কোন গ্রহীতা পাওয়া যাচ্ছিল না। এমতবস্থায় গর্ভনরের এক চিঠির জবাবে খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন যে, সম্মানিত যাকাত নেয়ার ব্যাপারে যাকাত গ্রহীতার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে বাজারে বাজারে ঘোষণা দেয়ার জন্য। খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত আদেশের প্রেক্ষিতে বাজারে বাজারে ঘোষণা দেয়া হলো, কিন্তু একজন লোকও সম্মানিত যাকাত গ্রহণ করতে আসেনি।
পরবর্তী খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পক্ষ থেকে গভর্নরকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঘোষণা দিতে বলা হলো কিন্তু এবারও সম্মানিত যাকাত নেয়ার কোন লোক পাওয়া গেল না। প্রতিটি মুসলমান উনারা এতো সমৃদ্ধিশালী হয়েছেন যে, সম্মানিত যাকাত নেয়ার কোন লোক পাওয়া গেল না। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকাতদাতাকে শুধু ধন-সম্পদের প্রাচুর্য প্রদান করেই ক্ষান্ত হবেন না বরং তাকে পবিত্রতা দান করবেন ধন-সম্পদের দিক দিয়ে এমনকি জিসমানী ও রূহানী উভয়ভাবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)